গ্রিসের উপর আরও চাপ বাড়ছে
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০১৬টি দেশ – একটি মুদ্রা৷ এর মধ্যে কোন একটি দেশে মারাত্মক আর্থিক সঙ্কট দেখা দিলে একক সাধারণ মুদ্রার উপর চাপ পড়তে বাধ্য৷ সেক্ষেত্রে বিষয়টি আর কোন একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আবদ্ধ থাকতে পারে না – সম্মানজনক না হলেও বাইরে থেকে হস্তক্ষেপ মেনে নিতেই হয়৷
গ্রিসকেও এই মুহূর্তে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ হজম করতে হচ্ছে৷ বছরের পর বছর ধরে ভুল তথ্য-পরিসংখ্যান দেখিয়ে সেদেশ তার বাজেটের মারাত্মক ঘাটতির প্রকৃত মাত্রা গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিল৷ মঙ্গলবারই গ্রিসের সরকার তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ঘোষণা করেছে৷ যেসব দেশে অভিন্ন মুদ্রা ইউরো চালু আছে, সেখানে বাজেট ঘাটতির মাত্রা ৩ শতাংশের নিচে রাখা বাধ্যতামূলক – অন্যথায় শাস্তির বিধান রয়েছে৷ গ্রিসের বাজেট ঘাটতির বর্তমান মাত্রা প্রায় ১৩ শতাংশ৷
এই অবস্থায় গ্রিসের বিরুদ্ধে একের পর এক কড়া পদক্ষেপ নিয়ে চলেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ ব্রাসেলসে ই.ইউ. অর্থমন্ত্রীদের বৈঠকের শেষে মঙ্গলবার আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ যেমন গ্রিস ইতিমধ্যেই ব্যয় সঙ্কোচের যে কর্মসূচি গ্রহণ করেছে, সেদেশকে তার থেকেও বেশী মাত্রায় ব্যয় কমাতে হবে৷ আগামী ৪ সপ্তাহের মধ্যে গ্রিসকে বাড়তি পদক্ষেপের ঘোষণা করতে হবে৷ সরকারী কোষাগারের আয়া বাড়াতে পণ্য ও পরিষেবার উপর প্রদত্ত কর বা ভ্যাট-এর হার বাড়ানোর জন্যও গ্রিসের উপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে৷ চলতি বছরের মধ্যেই বাজেট ঘাটতির বর্তমান মাত্রা কমপক্ষে ৪ শতাংশ কমানোর লক্ষ্যমাত্রাও স্থির করা হয়েছে৷ এই সব পদক্ষেপের মাধ্যমে ২০১২ সালের মধ্যে গ্রিসের আর্থিক অবস্থা আবার স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ গ্রিসের অর্থমন্ত্রী গিয়র্গিয়স পাপাকনস্টানটিনু বলেন, ‘‘অনেক রকমের সম্ভাবনা রয়েছে বটে, কিন্তু তার আগে আমাদের জানতে হবে কোন পদক্ষেপের সত্যি প্রয়োজন রয়েছে৷ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এক কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আয় বাড়ানোর ও ব্যয় সঙ্কোচের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷''
তবে শুধু শর্ত ও নিয়ম চাপিয়েই সন্তুষ্ট নয় ই.ইউ.৷ চলতি সপ্তাহের শেষের মধ্যেই ইউরোপীয় কমিশন, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের বিশেষজ্ঞরা এথেন্সে গিয়ে যাবতীয় পদক্ষেপের উপর কড়া নজর রাখতে চলেছেন৷ তবে বৃহত্তর স্বার্থে ইউরোর বিনিময় মূল্য স্থির রাখতে এবং আর্থিক বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ইউরোপের পক্ষ থেকেও এক আপদকালীন পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷
কিন্তু গ্রিসের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে দুশ্চিন্তা দেখা দিচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপের মুখে সেদেশের সরকার সরকারী কর্মীদের বেতন কমানো এবং তামাক ও মদের উপর কর বাড়ানোর মত পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে৷ ইতিমধ্যেই দেশজুড়ে সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কা দেখা যাচ্ছে৷ গ্রিসের ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ইউরো এলাকায় বেশ কিছু নতুন পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে৷