1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গাছেরা যখন গান শোনে

২৫ মার্চ ২০১১

ধরা যাক লন্ডনের চেলসি’তে, নামী-দামী ক্যাডোগান হলে৷ বাজাচ্ছেন রয়াল ফিলহারমনিক অর্কেস্ট্রার ৩৩ জন বাজিয়ে৷ বাজছে মোৎসার্টের চল্লিশ নম্বর সিমফনি৷

https://p.dw.com/p/10hAT
জেরেনিয়াম, কিন্তু মুক্ত প্রকৃতিতেছবি: Mussklprozz - sa

সেই সঙ্গে ইউরোপীয় মার্গসঙ্গীতের নানা সুপরিচিত সুর৷ পাক্কা তিন ঘণ্টা ধরে৷ কিন্তু দর্শকের সারিতে লাইন দিয়ে টবে বসানো ফুলের গাছ৷ জেরেনিয়াম, ফুকশিয়া থেকে শুরু করে অন্তত একশো রকমের ফুল৷ সবাই নীরবে মাথা নীচু করে শুনছে৷ কেউ হাঁচছে না, কাশছে না, শোরগোল করছে না৷ - কিন্তু তারা হাততালি কি বাহবাও দিচ্ছে না৷

না, এ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ডের কোনো হারিয়ে যাওয়া অধ্যায় নয়৷ দৃশ্যটা সত্যিই দেখতে পাওয়া গেছে গত সপ্তাহে৷ এবং গোটা ব্যাপারটা ছিল একটা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা৷ দেখা হচ্ছিল, এই যে এ্যাতোদিন ধরে আধা-সত্য, আধা-কল্পনা বলে পরিচিত একটা তত্ত্ব চলে আসছে যে, শব্দতরঙ্গের ফলে গাছেরা নাকি আরো বেশি প্রোটিন উৎপাদন করে, এমনকি হয়তো বাড়ে - তার কি কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে?

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোসেরই এরকম একটা সন্দেহ ছিল যে, গাছেদের গান শোনালে তাদের বাড় ভালো হয়৷ পরে গাছেদের রাগসঙ্গীত শুনিয়েও নাকি তাদের তর তর করে বাড়তে দেখা গেছে! আসলে বিগত শতাব্দীর সত্তরের দশকের গোড়ায় ডেনভার, কলোরাডোর ডরোথি রেটালাক নামে এক মার্কিন মহিলা রীতিমতো পরীক্ষাগারে গাছেদের গান শুনিয়ে পরীক্ষা চালান৷ তিনি নাকি দেখেন যে, দিনে তিন ঘণ্টা গান শোনালে গাছেদের বাড় বেড়ে দ্বিগুণ হয়৷ কিন্তু তাদের দিনে আট ঘণ্টা গান শোনালে তারা হপ্তা দুয়েকের মধ্যেই শুকিয়ে মারা যায়!

ডরোথি আরো দেখেন যে, গাছেদের রক মিউজিক শোনালে তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে৷ কিন্তু তাদের ঠাণ্ডা মেজাজের মিউজিক শোনালে তাদের বাড় বাড়ে, স্বাস্থ্য ভালো হয়৷ এমনকি দু'দিকে দু'টো রেডিও রেখে, একদিকে রক এ্যান্ড রোল এবং অন্যদিকে মোৎসার্ট, বাখ, বেটোফেন বাজালে, গাছেরা ক্ল্যাসিকাল মিউজিকের রেডিও'টির দিকে মুখ ফেরায়৷ এই ভাবেই নাকি গাছেদের গানের পছন্দ, অপছন্দ, সব জানা গেছে: তারা ‘এ্যাসিড রক' ভালোবাসে না, ‘সফট রক' ভালোবাসে৷ তারা ইউরোপীয় মার্গসঙ্গীতে ডেবুসি, জ্যাজ মিউজিকে লুউ আর্মস্ট্রং এবং সেতারে রবিশঙ্কর'কে পছন্দ করে৷

Musikinstrument Violine
বেহালার ছড়েই গাছের প্রাণ?ছবি: picture-alliance / Lehtikuva

ডরোথি শেষমেষ গাছেদের ইএসপি বা একস্ট্রা সেন্সরি পার্সেপশনেও বিশ্বাস করতে শুরু করেছিলেন৷ পরে অন্যেরা পরীক্ষা করে দেখেছেন যে, গাছেরা অতোটা সঙ্গীতের সমঝদার নয়: হেভি মেটালের ধুমধাড়াক্কা তালেই তাদের রক্ত গরম হয়ে ওঠে৷ আর বিজ্ঞানও তো একেবারে বাদ দেওয়া যায় না: গাছেদের বুদ্ধি নেই; তাদের কোনো কেন্দ্রীয় স্নায়ুপ্রণালী নেই; এবং তাদের কোনো কান নেই৷

তাহলে রয়াল ফিলহারমনিকের অতোটা কষ্ট জলে গেল? তা হবে কেন৷ গাছেদের জন্য ঐ জলসা এখন নিখর্চায় ডাউনলোড করা যাচ্ছে৷ অর্কেস্ট্রা পাচ্ছে, নিখর্চায়, তার পাবলিসিটি'টুকু৷

প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী

সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার