গর্ভাবস্থার ডায়বেটিস? জেনে নিন কারণ ও উপায়
আপনি ‘মা’ হতে যাচ্ছেন – ডাক্তারের দেয়া এই খবরটি নারীর জন্য সম্ভবত জীবনের সবচেয়ে আনন্দের খবর৷ তবে গর্ভকালীন জটিলতা বা ডায়বেটিস হওয়ার কথাও শোনা যায় মাঝেমধ্যে৷ এ সব সত্ত্বেও কিভাবে সুস্থ শিশুর জন্ম দেয়া সম্ভব, জেনে নিন৷
হবু ‘মা’
নারী পূর্ণতা পায় মা ডাক শুনে৷ কিন্তু সেকথা আর নতুন করে বলার কিছু নেই৷ মা ডাক শোনার আগেই, অর্থাৎ গর্ভাবস্থায় থাকে হবু মায়ের নানা প্রশ্ন৷ পেটের শিশুটির সব ঠিক আছে তো? কী করলে সন্তানটি সুস্থভাবে পৃথিবীর আলো দেখতে পারবে? আরো কত কিছু৷ গর্ভাবস্থায় অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তারই একটি মায়ের ডায়বেটিস হওয়া, যা সব সময় বোঝা যায় না৷ তাই প্রয়োজন কিছু সতর্কতা বা বিশেষ চেকআপ৷
‘গ্লুকোজ টেস্ট’
গর্ভবতী হওয়ার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের সময় একটি বিশেষ পরীক্ষা করা প্রয়োজন, যাতে বোঝা যায় ডায়বেটিস আছে কিনা৷ ‘গ্লুকোজ টেস্ট’-এর মাধ্যমে শরীরের কতটুকু গ্লুকোজ গ্রহণ করার ক্ষমতা আছে কিংবা সুগার কমানোর জন্য শরীর যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদন করছে কিনা – ইত্যাদি প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়৷ তবে এই গ্লুকোজ টেস্টের যে বিশেষ নিয়ম রয়েছে, ঠিক সেভাবেই করতে হবে৷ একমাত্র তাহলেই সঠিক ফলাফল পাওয়া যায়৷
হরমোনের তারতম্য
গর্ভাবস্থায় নানা রকম হরমোন শরীরের বিপাকক্রিয়াকে ওলট-পালট করে দেয়৷ আর এ সব কারণে অনেক নারীর পাঁচ থেকে সাত মাসের সময় ডায়বেটিস দেখা দেয়৷ যদিও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শিশু জন্মের পর তা আস্তে আস্তে চলে যায়৷ অতিরিক্ত মোটা মায়েদের ক্ষেত্রে অবশ্য ভিন্ন কথা৷
দু’জনের খাবার?
প্রায়ই গর্ভবতী নারীদের দু’জনের খাবার খেতে বলা হয় যা মোটেই ঠিক নয়৷ অনাগত সন্তান এবং মা – এই দু’জনের খাবার একসঙ্গে খাওয়ার পরিবর্তে মাকে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা৷ যথেষ্ট শাক-সবজি, ফল, আঁশযুক্ত খাবার এবং সঙ্গে কম চিনি এবং কম চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়াই স্রেয়৷ সোজা ভাষায়, সুস্থ মা ও শিশুর জন্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত৷ আসলে মায়ের খাওয়া নির্ভর করবে তিনি কতটা শারীরিক পরিশ্রম করছেন তার ওপর৷
হাঁটাচলা বা ব্যায়াম
গর্ভাবস্থায় হাঁটাচলা খুবই জরুরি৷ বিশেষজ্ঞের মতে, যে নারী গর্ভবতী হওয়ার আগে ব্যায়াম করতেন তাঁকে সেভাবেই ব্যায়াম চালিয়ে যেতে হবে৷ তবে অবশ্যই কিছু নিয়ম মেনে৷ এই যেমন, গর্ভাবস্থায় সাঁতার কাটা খুবই ভালো একটা ব্যায়াম, যা মা ও শিশুকে সুস্থ রাখে৷ গর্ভকালীন ডায়বেটিস হয়েছে, এমন রোগী জন্য যথেষ্ট ব্যায়াম এবং পরিমিত পুষ্টিকর খাবার খুব জরুরি৷ এর সঙ্গে প্রয়োজনে ইনসুলিন থেরাপিও নেওয়া যেতে পারে৷
গর্ভাবস্থায় ডায়বেটিসের ঝুঁকি যাঁদের
আগে থেকেই কি আপনার ওজন বেশি? আপনার বাবা, মা, ভাই-বোনদেরও কি ডায়বেটিস আছে? এর আগেরবার যখন গর্ভবতী হয়েছিলেন, তখন কি আপনার ডায়বেটিস ছিল? আগে কি আপনার কোনো বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে? কিংবা আগের কোনো সন্তান জন্মের সময় কি ওজন বেশি ছিল? আপনি কি কোনো ওষুধ খেতেন বা খান, যাতে ডায়বেটিসের ঝুঁকি আছে? এর মধ্যে কোনো প্রশ্নের উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে বুঝতে হবে যে আপনার ডায়বেটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে৷
পরামর্শ
অতিরিক্ত ওজনের নারী যাঁরা আগামীতে সন্তান চান, তাঁদের জন্য পরামর্শ: ‘‘আগে থেকে ওজন আয়ত্বে আনার চেষ্ট করুন৷ জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভাস বদলান, নিজে সুস্থ থাকুন ও সুস্থ সন্তানের জন্ম দিন৷’’ এ কথা জার্মানির মিউনিখ শহরের স্ত্রী বিশেষজ্ঞ ডা. সেবাস্টিয়ান রাইকের৷