1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণতান্ত্রিক সমাজ চান লেখিকা মাইসা বেই আলজেরিয়ায়

১২ মে ২০১১

আলজেরিয়ার স্বনামধন্য লেখিকা মাইসা বেই-এর কথা হয়তো অনেকেই শোনেনি৷ আলজেরিয়ায় তিনি গণতন্ত্রের দাবিতে সোচ্চার এক কন্ঠ৷ লিখেছেন গল্প, নাটক, প্রবন্ধ৷

https://p.dw.com/p/11EBe
Maissa Bey
নামধন্য লেখিকা মাইসা বেইছবি: picture-alliance/maxppp

আলজেরিয়ার অত্যন্ত অভিজাত একটি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন মাইসা বেই৷ পড়াশোনার মাধ্যম ছিল ফরাসি ভাষা৷ এর ফলে আরবি এবং ফরাসি দুটি ভাষাতেই তিনি অনর্গল কথা বলতে পারেন৷ তার লেখার মূল চরিত্র সবসময়ই কোন নারী৷

পশ্চিম আলজেরিয়ার সিদি বেল আবেস-এ লেখিকা মাইসা বেই-এর জন্ম৷ ১৯৯০ সালে তিনি প্রতিষ্ঠিত করেন ‘পারোল এ এক্রিতুর' নামের একটি সংস্থা৷ এই সংস্থাটি মূলত যে সব মেয়ে বা মহিলা লেখা-লেখি করতে চান তাদের জন্যই৷ সেখানে লেখালেখি ছাড়াও দেশের সংস্কৃতিকে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়৷ তবে তার পুরোটাই লেখালেখির সঙ্গে জড়িত৷

মাইসা বেই এ পর্যন্ত ৭টি বই লিখেছেন৷ এর পাশাপাশি অসংখ্য গল্প এবং নাটক৷ তবে সব গল্প-প্রবন্ধের কাহিনী আলজেরিয়াকে ঘিরে৷ সেখানকার সমাজ, মানুষ, রাজনীতি, স্বৈরাচার – এসবই তিনি তুলে ধরেছেন তাঁর লেখায়৷ সম্প্রতি যে বইটি তিনি লিখেছেন তা এখনো জার্মান ভাষায় অনুদিত হয়নি তবে বইটি নিয়ে ইতিমধ্যেই হৈচৈ শুরু হয়ে গেছে৷ বইটির নাম ‘কালো দশক'৷ ১৯৮৮ সালে আলজেরিয়ায় শুরু হয় আন্দোলন৷ সাধারণ মানুষ পথে নামে৷ আন্দোলনের নাম ছিল ‘কুসকুস বিপ্লব'৷ গণতন্ত্রের নামে দেশ চালাচ্ছিল স্বৈরাচার সরকার৷ সরকার অত্যন্ত কঠোরভাবে সেই আন্দোলন দমন করার চেষ্টা করে৷ প্রায় দশ বছর ধরে চলে দেশের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ড৷ গৃহযুদ্ধের দিকে এগিয়ে যায় আলজেরিয়া৷ দশ বছরে প্রায় দুই লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়৷ আন্দোলন, হত্যাযজ্ঞ, মানুষের প্রতি মানুষের ঘৃণা এসবই খুব কাছ থেকে দেখেছেন মাইসা বেই৷ তিনি বললেন, ‘‘বেশির ভাগ মানুষই সেই সময় ভুল সময়ে ভুল জায়গায় উপস্থিত ছিল৷ অনেককেই একেবারে টার্গেট করে মেরে ফেলা হয়েছিল৷ তবে যা বেশ স্পষ্ট করে বলে দেয়া হয়েছিল তা হল, ‘‘যা হচ্ছে তা নিয়ে কেউ কথা বলতে পারবে না, এসব নিয়ে খোলাখুলি আলাপ-আলোচনা করা যাবে না৷'' কে মারা গেল, কে দোষী, কে নির্দোষ তা নিয়ে কেউই কোন শব্দ করেনি৷ করতে পারেনি৷''

Algerische Stadt Tlemcen
আন্দোলন, হত্যাযজ্ঞ, মানুষের প্রতি মানুষের ঘৃণা এসবই খুব কাছ থেকে দেখেছেন মাইসা বেইছবি: DW

গত কয়েক বছর ধরে আলজেরিয় সরকার দেশে রাজনৈতিক সংস্কারের কথা বলছেন৷ তবে ১৯৯০ সালে যা ঘটেছে তা নিয়ে কথা বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন৷ কোন প্রচার মাধ্যম এসব নিয়ে যেন কোন ধরণের প্রচার না করে বা কোন ধরণের প্রশ্ন না তোলে তার ওপর তীব্র নজর রাখা হচ্ছে৷ এসব নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও যে সব সাংবাদিক ৯০-এর ঘটানায় সোচ্চার বা প্রশ্ন তুলেছেন তাদের হুমকি দেয়া হচ্ছে৷ অনেককেই অপহরণ করা হয়েছে৷ তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি৷ তবে মাইসা বেই এসব হুমকিকে ভয় পান না৷

তিনি আরো জানান, ‘‘আমার অবস্থান আমি বেশ পরিস্কারভাবেই আমার সর্বশেষ লেখার মাধ্যমে তুলে ধরেছি৷ বইয়ের নাম ‘আমার আত্মার মৃত্যু হয়েছে৷' গল্পের মূল চরিত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা৷ তিনি ইংরেজি সাহিত্য পড়ান৷ ১৯৯০-এর আন্দোলনের সময় তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানকে তিনি হারান৷ তিনি কিছুতেই পুত্রের মৃত্যুকে মেনে নিতে পারেন না৷ তিনি মনে করেন তাঁর ছেলে বেঁচে রয়েছে৷ তিনি প্রতিদিন একটি করে চিঠি লেখেন তাঁর মৃত ছেলেকে উদ্দেশ্য করে৷ সেই চিঠিতে তিনি দেশের কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলেন৷ তিনি কেমন আছেন, কী নিয়ে চিন্তিত – তার সবকিছুই তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন৷ আলজেরিয়ার অন্যান্য মেয়েদের কী অবস্থা, তাদের ভবিষ্যৎ কেমন তা নিয়েও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন চিঠিতেই৷''

Algeria, mother, islamic, culture
১৯৯০-এর আন্দোলনের সময় তাঁর একমাত্র পুত্র সন্তানকে হারান মাইসা বেইছবি: DW

গত বছরের মে মাসে এই বইটি আলজেরিয়ায় প্রকাশিত হয়৷ প্রকাশ হওয়ার পরপরই শুরু হয়ে যায় বইটির পক্ষে এবং বিপক্ষে তুমুল তর্কবিতর্ক৷ লেখিকা চান নতুন করে সরকারের প্রতিটি কর্মকাণ্ড নিয়ে সুশীল সমাজ প্রশ্ন করুক৷ খোলাখুলি আলোচনা হোক এবং দেশের সাধারণ মানুষ এই আলোচনায় শরিক হোক৷ অতীতকে অগ্রাহ্য করে ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়া কোন অবস্থাতেই সম্ভব নয় তাও তিনি বেশ জোর দিয়েই জানান৷

লেখিকা মাইসা বেই বলেন, গণতন্ত্রের পথে আলজেরিয়ার যাত্রা হবে দীর্ঘ এবং কঠিন৷ বহুসময় লাগবে আলজেরিয়ার৷ এমনকি এক্ষেত্রে ব্যর্থতাও আসবে৷ ইউরোপের কাছ থেকে বড় রকমের কোন সাহায্য তিনি প্রত্যাশা করেন না৷ তিনি বলেন, এটা খুবই অদ্ভুত যে ইউরোপীয়রা দীর্ঘদিন ধরে ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণতীরের স্বৈরশাহীগুলোর ব্যাপারে নিশ্চুপ থেকেছে৷ তবুও মাইসা বেই এক ধরণের সতর্ক আশাবাদ লালন করছেন মনে মনে৷ তাঁর বিশ্বাস আলজেরিয়ার নারী পুরুষ সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হবে একদিন৷ আক্ষেপের সঙ্গে মাইসা বেই বললেন, ‘‘আরেকটি আন্দোলনে শরীক হতে দেশের মানুষ ভয় পাচ্ছে৷ তা আমি প্রায়ই শুনি৷ ১৯৯০ সালের সেই সময় থেকে আলজেরিয়া অনেক বড় একটি শিক্ষা গ্রহন করেছে৷ তবে বেশির ভাগ আলজেরিয় মনে করেন ইসলামী উগ্রপন্থীদের হাত ধরে দেশে কখনো গণতন্ত্র আসবে না৷ আশেপাশের দেশে এ বছরের শুরুতে আমরা তাই দেখছি৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক