1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খাদ্য পরিদর্শকদের সঙ্গে একদিন

১২ অক্টোবর ২০১০

পচা মাংস, ফল, শাক-সবজিতে রাসায়নিক দ্রব্য ও ডিমে সালমোনেলা ব্যাকটেরিয়া – এসব কেলেংকারির খবর জার্মানির মানুষকে মাঝে মাঝে আতঙ্কিত করে তোলে৷ অন্যদিকে ভোজ্যপণ্যের ওপর নজর রাখার জন্য ৪৫০টির মত দপ্তর রয়েছে জার্মানিতে৷

https://p.dw.com/p/PcKf
কড়া নজর রেখেও, রোধ করা যাচ্ছেনা খাবারের ভেজালছবি: picture-alliance / dpa / Stockfood

কড়া নজর রেখে চলেছেন খাদ্যনিয়ন্ত্রক, পশু চিকিৎসক ও খাদ্য রসায়নবিদ৷ কিন্তু তবুও রোধ করা যাচ্ছেনা খাদ্যের এই ধরনের ভেজাল৷

খাদ্য পরিদর্শকের জীবন

খাদ্য পরিদর্শক হতে হলে ভোজ্যপণ্য সম্পর্কে একটা সাধারণ শিক্ষা থাকতে হয়৷ তারপর বিশেষ ধরনের প্রশিক্ষণ নিয়েই কেউ এই কাজটায় দক্ষ হতে পারেন৷ কোনো বেকারিতে, রেস্তোরাঁয় বা মাংসের দোকানে ঢুকে চারিদিক দেখেই ধরতে পারেন তাঁরা গলদটা কোথায়৷ আসুন বন শহরের দুজন খাদ্য পরিদর্শকের কাজের সঙ্গী হওয়া যাক আজ৷

বন শহরের কেন্দ্রে ছোট এক মাংসের দোকান৷ সসেজ ও মাংসের অন্যান্য খাবার তৈরি হয় সেখানে৷ ৪৭ বছর বয়সি কসাই দুই খাদ্য পরিদর্শক শ্টেফান ট্রুটসেনব্যার্গ ও ডোমিনিক পেটারকে দেখে খুব যে খুশি হলেন, তা বলা যায়না৷ কিন্তু তাঁকে ধৈর্য ধরে সব কিছু দেখাতে হবে, এটাই নিয়ম৷ পরিদর্শকরা তাঁকে জিজ্ঞাসা করেন,‘‘আমরা কোথায় শুরু করব?''

সসেজ তৈরির ঘরটাতে কাজকর্ম শেষ৷ যন্ত্রপাতি, পাটাতন এসব কিছু পরিষ্কার করা হয়ে যায় ১০টার মধ্যেই৷ খাদ্য পরিদর্শক শ্টেফান ট্রুটসেনব্যার্গ একজন পশু চিকিৎসক৷ বড় একটি নিয়ন বাতি নজরে পড়লো তাঁর৷ এটা হঠাৎ বিস্ফোরিত হলে কাঁচের গুঁড়ো এসে পড়তে পারে সসেজে৷ এজন্য ঢাকনা জাতীয় কোনো কিছু রাখার ব্যবস্থা করতে হবে সেখানে৷ নির্দেশের সুরে জানান শ্টেফান ট্রুটসেনব্যার্গ৷

কসাই রাগ চেপে রাখতে পারলেননা৷ বললেন, ‘‘পোপের চেয়েও বড় পোপ হওয়া আরকি৷'' ট্রুটসেনব্যার্গ বললেন, ‘‘এটা আপনাদের নিজেদের ভালর জন্যই৷ এসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়ে থাকি আমরা৷'' তবুও খুশি নন কসাই৷ বললেন, ‘‘আপনাদের এই নির্দেশ জানা আছে আমার৷ সব কিছুই তো খরচাপাতির ব্যাপার, যেখানে ব্যবসার অবস্থা এত খারাপ৷''

Slow Food Event Cheese
মজুকরা খাবার কতোদিনের পুরোনো সে কথা জানতে চান খাদ্য পরিদর্শকরাছবি: Slow Food Archive

দোকানদারের সমস্যা

৭০ বছর ধরে এই মাংসের দোকানটা একটা পারিবারিক ব্যবসা৷ যারা নিয়মিত এখানে কেনাকাটা করতেন, তাদের অনেকেই মারা গেছেন৷ অল্পবয়সিরা সুপার মার্কেটে সস্তায় মাংস কেনে৷ তাই টানাটানির মধ্যেই চলতে হচ্ছে এখন৷ নতুন জিনিস পত্র কেনা বা মেরামত করার মত আর্থিক সামর্থ্য কোথায়!

খাদ্য পরিদর্শকরা তারপর নজর দিতে গেলেন কোল্ড রুমে৷ সেখানেও যন্ত্রপাতিগুলিকে খুব একটা আধুনিক বলা যাবেনা৷ এক জায়গা থেকে চুঁয়ে চুঁয়ে পানি পড়ে জমা হচ্ছে বালতিতে, যেটি খালি করা প্রয়োজন৷ তবে আরেকটা বিষয়ও চোখে পড়ল ডোমিনিক পেটারের৷ যিনি একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাচকও৷

সবার উপরে ভোক্তার স্বার্থ

তিনি জানান, ‘‘এগুলি আপনারা কবে থেকে ফ্রিজ করে রাখতে শুরু করেছেন, তা লিখে রাখাটা খুবই জরুরি৷ গত বছর পচা মাংসের বিষয়টি নিয়ে বেশ হৈচৈ পড়েছিল৷ পরিদর্শন করার সময় ফ্রিজ করার শুরুর তারিখটা যদি দেখানো না যায়, তাহলে ধরে নিতে হবে মাংসটা বেশ পুরোনো৷''

অবশেষে মাংসের দোকান থেকে ভালভাবেই বিদায় নিলেন পরিদর্শকরা৷ কেননা সব মিলিয়ে দোকানটা বেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন৷ তাঁরা পরে আবার এসে দেখবেন, তাঁদের নির্দেশ মত কাজ করা হয়েছে কিনা৷ এ জন্য জিনিসপত্র কেনার রসিদ বা ক্ষেত্রবিশেষে তুলে রাখা ছবিও দেখতে চাইতে পারেন তাঁরা৷

শ্টেফান বলেন, ‘‘সবচেয়ে খারাপ হল, পোকামাকড়ের উপদ্রব৷ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে কাজকর্ম না করলে পোকারাও আস্তানা গাড়ে সেখানে৷ এক জায়গায় আমি তো সারি সারি আরশোলাও দেখেছি, যেটা ছিল আমার কাছে সবচেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা৷''

বেকারির অভিজ্ঞতা

এরপর দুই পরিদর্শক গেলেন এক বেকারিতে৷ কয়েক দিন আগে মেরামত করা হয়েছে এটি৷ শো-কেসে থরে থরে সাজানো লোভনীয় রুটি, কেক, বিস্কুট৷ এখানে সব কিছুই নতুন – মেঝে, দরজা, জানালা, সিলিং, কোল্ড রুম ইত্যাদি চকচক করছে৷ অল্পবয়সী মালিক বেশ গর্বভরে দেখালেন এসব৷ তিনি খাদ্য পরিদর্শকদের জিজ্ঞাসা করেন: ‘‘আমার একটি প্রশ্ন আছে৷ আমরা খাবারগুলি যতটা সম্ভব খুলে রাখতে চাই, যাতে ক্রেতারা তা দেখতে পারেন৷ আমার কর্মচারীদের কাছেও তা ভাল লাগবে৷''

কিন্তু পরিদর্শকরা খাবারের জিনিস খোলা না রাখারই পরামর্শ দিলেন৷ কেননা ধূলাবালি ও পোকামাকড় পড়তে পারে এসবে৷ বেকারিটির মেরামতের কাজ শেষ হয়নি বলে পরিদর্শনপর্বও এবারকার মত স্থগিত রাখলেন দুই খাদ্য পরিদর্শক৷ সবশেষের গন্তব্যস্থান এক বৃদ্ধনিবাস৷ সবকিছুই নিখুঁত৷ ভাঁড়ার ঘর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন৷

ট্রুটসেনব্যার্গ বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, যেন আমরা জানান দিয়েই এসেছি এখানে৷ সবকিছুই এত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, সাজানো গোছানো যে, ব্যাপারটা প্রায় অস্বাভাবিক লাগছে৷'' অবশেষে কোল্ড রুমে এসে কিছু গলদ ধরা পড়ল৷ যেখানে খাবার রাখা হয়েছে, তার ঠিক ওপরেই ছত্রাক পড়া দুটো সিলিং ফ্যান ঘুরছে৷ এটা একেবারেই ঠিক নয়৷ খাবারের কাছে পিচবোর্ডের বাক্স বা পানীয় জলের বাক্স রাখাও ঠিক নয়৷ ‘‘আগে এগুলি কোনো নোংরা জায়গায় ছিল কিনা, তা কে জানে৷''

আজকের মত কাজ শেষ হল দুই খাদ্য পরিদর্শকের৷ দিনটি সম্পর্কে তাঁদের মন্তব্য হল: ‘‘খুব একটা উত্তেজনাকর নয়''৷ সচরাচর চারটার মধ্যে একটা প্রতিষ্ঠানেই বেশ অস্বস্তিকর কোনো কিছুর সন্ধান পাওয়া যায়৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন