1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শিক্ষার প্রসার

১৪ জুন ২০১৩

বিলাসিতার উপকরণ নয়, আফ্রিকার দেশ ঘানার এক গ্রামে ই-রিডার হয়ে উঠেছে শিক্ষার একমাত্র পথ৷ প্রযুক্তির সার্থক প্রয়োগ করে বদলে যাচ্ছে অনেক শিশু-কিশোরের জীবন৷

https://p.dw.com/p/18pfU
ছবি: picture-alliance/dpa

১৪ বছর বয়সি গিডিয়নের বাড়ি আফ্রিকার দেশ ঘানার পূর্বাঞ্চলে একটি ছোট্ট গাঁয়ে৷ ভোরবেলা সে বেরিয়ে পড়ে বাজারমুখো৷ ছোট্ট একটি দোকান সাজিয়ে দিনে সাত ঘণ্টা কাজ করে৷ বিক্রি করে ‘কেংকে' - যা ভুট্টার ছাতুর তৈরি এক ধরনের খাবার৷ তার বাবা-মা, সাত ভাইবোন এই রোজগারের উপর নির্ভর করে৷ কাজ শেষ করে স্কুল যেতে যেতে দুপুর হয়ে যায়৷ তবুও সে যতটা পারে শেখার চেষ্টা করে৷ সরকারি স্কুলগুলো ভরতুকি পেয়ে থাকে বটে, তবে স্কুলে বিশেষ করে বইয়ের অভাব রয়েছে৷

অনেক ক্লাসে যত বই দরকার, তার অর্ধেকও নেই৷ ঘানায় ছাত্রছাত্রীদের নিজেদেরই বই কিনতে হয়৷ সবার সে সামর্থ্য থাকে না৷ গাঁয়ের লাইব্রেরিটিও বন্ধ৷ এখানে নেবার মতো বই'ও বিশেষ নেই, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসের উপর কিছু মান্ধাতার আমলের বই ছাড়া৷ তাও সবই দান করা৷

North Mara Gold Mine in Tansania
অনেক দেশেই স্কুলে প্রয়োজনীয় বই পাওয়া এখনো কঠিনছবি: DW/J. Hahn

এবার একটি আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংগঠন গোটা পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে৷ ‘ওয়ার্ল্ডরিডার' স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ‘ই-রিডার' বিলি করে৷ এই ইলেকট্রনিক রিডারে চার হাজার পর্যন্ত বই লোড করা যায়৷ ওয়ার্ল্ডরিডারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা কলিন ম্যাকএলউয়ি'র পক্ষে যা একটি ছোটখাট বিপ্লব৷ তিনি বলেন, ‘‘সারা বিশ্বে আজ প্রায় একশো কোটি শিশু আছে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল বিশ্বে, যাদের জন্য কোনো সঠিক শিক্ষাব্যবস্থা নেই৷ এটা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ৷ ই-রিডার এবং ই-রিডারের মাধ্যমে আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তি এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখে৷''

একটি ই-রিডারের দাম একশো ইউরো৷ বেসরকারি অনুদান আর জাতিসংঘ থেকে আসে এই অর্থ৷ ক্লাসে শিক্ষিকা প্রশ্ন করছেন, ‘‘তোমরা একবারে কতোগুলো বই হাতে ধরতে পারো? ছ'টা হলে কেমন হয়? একসঙ্গে চার হাজার বই হাতে নেয়া কি সম্ভব? এটার সাহায্যে তোমরা এখন সেটা পারবে৷''

এখন বহু প্রকাশনী তাদের বই নিখরচায় ডাউনলোড করতে দেয়৷ ই-রিডার দিয়ে কীভাবে পড়তে হয়, পড়ুয়ারা সেটা শীগগিরই শিখে ফেলে৷ ইন্টারনেট সংযোগ ছাড়াই বই ডাউনলোড করা যায় – মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক মারফত একটি বই ডাউনলোড করতে সময় লাগে মাত্র এক মিনিট৷

বহু ছাত্রছাত্রীরা এখন দ্বিগুণ বই পড়ে৷ অনেকে বছরে ৯০টা বই পড়ে ফেলেছে, বলছে ওয়ার্ল্ডরিডার৷ যেমন ১৬ বছরের রিটা৷ সে বললো, ‘‘আমি দেশের একজন নেতা হতে চাই৷ আমি মানুষজনকে সাহায্য করব৷ আমি ব্যারিস্টার হতে চাই৷ সব কিছু জানতে, বুঝতে গেলে আমাকে এখনও অনেক পড়তে হবে, বলে আমার ধারণা৷ যাতে আমি ভবিষ্যতে মামলাগুলো ঠিকমতো বিচার করতে পারি৷ যাতে মানুষজন কষ্ট না পায়৷''

এ পর্যন্ত ঘানা, কেনিয়া আর উগান্ডায় ই-রিডার বিলি করা হয়েছে৷ এবার দক্ষিণ অ্যামেরিকা আর এশিয়াতেও এই প্রকল্প চালু করা হবে৷

গিডিয়ন'ও বলছে, দুনিয়ায় কী ঘটছে তা জানার জন্য আরো বেশি করে পড়তে হবে৷ এখন ই-রিডার সবসময় তার সঙ্গে থাকে৷ কেংকে বেচার ফাঁকে ই-রিডার পড়ে গিডিয়ন৷ পরে একদিন সে কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে যাবে, বলছে গিডিয়ন৷ সে পথে প্রথম ধাপ তো সে পার হয়ে গেছে৷

এসি / এসবি