1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রিকেট ঈশ্বরের বিদায়

অমৃতা পারভেজ১৫ নভেম্বর ২০১৩

দীর্ঘ দুই যুগে ব্যাট হাতে ২২ গজ কাঁপিয়েছেন তিনি৷ ভক্তরা হতাশা, দুঃখ ভুলে যেতেন তাঁর ব্যাটিং-এ৷ টানা ২৪ বছর ধরে বিশ্বের ক্রিকেট ভক্তদের আনন্দে মাতিয়েছেন শচীন রমেশ টেন্ডুলকার৷ বিদায় বেলায় তাই বেদনাতুর তাঁর ভক্তকূল৷

https://p.dw.com/p/1AHcZ
Indian batsman Sachin Tendulkar celebrates after he completed 15,000 runs in test cricket on the third day of the first of three test match series between India and West Indies, in New Delhi, India, Tuesday, Nov. 8, 2011. (Foto:AP/dapd) INDIA OUT
ছবি: AP

গত দুই যুগে পৃথিবীটা পাল্টে গেছে৷ কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২৪ বছর কেটে গেলেও তাঁকে নিয়ে কমেনি ভক্তদের মাতামাতি৷ ভবিষ্যতেও হয়ত তাঁকে নিয়ে এই উন্মাদনা এমনই থাকবে৷ কিন্তু ক্রিকেট ব্যাট হাতে আর দেখা যাবে না শচীন রমেশ টেন্ডুলকারকে৷

১৯৭৩ সালের ২৪ এপ্রিল মুম্বইতে জন্ম শচীন টেন্ডুলকারের৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর পথচলা শুরু মাত্র ১৬ বছর বয়সে৷ ১৯৮৯ সালের ১৫ নভেম্বর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে খেলতে নামেন তিনি৷ অভিষেক ইনিংসে সংগ্রহ মাত্র ১৫ রান৷ এরপর ১৯৯৪ সালে ক্রিকেট জীবনের প্রথম শতকের পর আর ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে৷

দীর্ঘ ২৪ বছরে টেন্ডুলকার কত রেকর্ড গড়েছেন বা ভেঙেছেন তার হিসাব দেয়া মুশকিল৷ তিনিই প্রথম ক্রিকেটার যিনি ২০০তম টেস্ট খেলছেন৷ টেস্টে ১৫ হাজারের বেশি রান করে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি৷ ৪৬৩টি ওয়ানডেতে ১৮ হাজারেরও বেশি রানের রেকর্ডও তাঁর৷ সবচেয়ে বেশি ম্যাচ ও অর্ধশতকের রেকর্ডগুলোও তাঁর দখলে৷ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০০টি শতক এবং সর্বপ্রথম ওয়ানডেতে দ্বিশতক হাকানোর রেকর্ডটিও ক্রিকেট মহানায়কের৷ গত বছর ডিসেম্বরে আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন এই কিংবদন্তি৷

শুধু মাঠের ভেতর নয়, বাইরেও তিনি অনন্য সাধারণ এক ব্যক্তিত্ব৷ সতীর্থদের কাছে বরাবরই প্রিয় বন্ধু এবং শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি শচীন৷ অভিষেকের সময় অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার কপিল দেব ছিলেন সতীর্থ৷ কপিল থেকে শুরু করে ভারতীয় দলের বর্তমান নবীনতম সদস্যটি পর্যন্ত শচীনের গুণমুগ্ধ৷ তাঁকে নিয়ে বিতর্ক নেই বললেই চলে৷ পুরো ক্রিকেট জীবনেই আম্পায়ারের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার মানসিকতা দেখা গেছে টেন্ডুলকারের মধ্যে৷

ভারতীয়দের কাছে তিনি যেমন ক্রিকেটের ঈশ্বর, দেশের বাইরেও তাঁর তেমনি অসম্ভব জনপ্রিয়তা৷ যেখানেই খেলতে গেছেন পেয়েছেন মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসা৷ সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের ভীষণ প্রিয় ছিলেন তিনি৷ বলতেন, শচীনের খেলার ধরন ঠিক তাঁরই মতো৷ ইতিহাসের সেরা ক্রিকেটার হিসেবে শচীন টেন্ডুলকারকে আখ্যায়িত করেছেন ক্রিকেটের বরপুত্র ব্রায়ান লারা৷ বলেছেন, শচীন ক্রিকেটের মোহাম্মদ আলী৷

টেন্ডুলকার তাঁর দেশকে যেমন সম্মান এনে দিয়েছেন, তেমনি দেশেও পেয়েছেন অজস্র সম্মান৷ ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণ, সর্বোচ্চ ক্রীড়া পুরস্কার রাজীব গান্ধী খেল রত্ন, ভারতীয় রাজ্যসভার সম্মানসূচক সদস্য পদসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি৷

১৯৯৫ সালে চিকিৎসক অঞ্জলি মেহতাকে বিয়ে করেন ‘লিটল মাস্টার'৷ অঞ্জলি বরাবরই ক্রিকেটে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন তাঁকে৷ শচীন-অঞ্জলির দুই সন্তান সারা এবং অর্জুন টেন্ডুলকার৷

কেবল ভারত নয়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বই যেন কিছুদিন ধরে দুঃখ ভারাক্রান্ত৷ একটা টেস্ট সিরিজের অন্য সবকিছু বাদ দিয়ে শচীনকে বিদায় দেয়াই মূখ্য হয়ে উঠেছে মুম্বইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে৷ আমির খান, কপিল দেব, গাভাস্কারসহ সব সেলিব্রেটিরা তাই স্টেডিয়ামে উপস্থিত ‘লিটিল মাস্টার'-কে বিদায় জানাতে৷

ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্ট খেলে ঘরের মাঠ মুম্বই থেকেই বিদায় এই ক্রিকেট মহানায়কের৷ তাঁর অসাধারণ কাভার ড্রাইভ, নিখুঁত স্কয়ার কাট, ছক্কা মারা দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যগুলো আর দেখা যাবে না কখনো৷ শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের অবসর তাই ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল অধ্যায়ের সমাপ্তি৷ জয়তু শচীন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য