1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রাইমিয়া রাশিয়ার নিয়তির প্রতিফলন

ইঙ্গো মানটয়ফেল/এসবি১৬ মার্চ ২০১৫

ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে চলমান যুদ্ধ এক বছর আগে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখলের ঘটনাকে কিছুটা ঢেকে রেখেছে বটে, কিন্তু সেখানেই রাশিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ টের পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করেন ডয়চে ভেলের ইঙ্গো মানটয়ফেল৷

https://p.dw.com/p/1ErYb
Ukraine Russland Flagge auf dem Krim Gebäude in Simferopol
ছবি: picture-alliance/dpa

রুশদের জন্য ক্রাইমিয়ার এক বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে৷ কারণ রাশিয়ার প্রায় প্রত্যেক নাগরিকই জীবনের কোনো সময়ে কৃষ্ণ সাগরের তীরে এই রৌদ্রোজ্জ্বল উপদ্বীপে ছুটি কাটিয়েছেন৷ মনোরম পরিবেশের কারণে সেই ঊনবিংশ শতাব্দী থেকেই রুশ সংস্কৃতিতে ক্রাইমিয়াকে অবসর বিনোদনের বড় আকর্ষণ হিসেবে গণ্য করা হয়৷ প্রথমে ‘জার' বা সম্রাটরা গ্রীষ্মে সেখানে যেতেন৷ সোভিয়েত আমলে গোটা দেশের মানুষের কাছে ক্রাইমিয়া হয়ে ওঠে বেড়ানোর সেরা গন্তব্য৷ গত শতাব্দীর ষাটের দশকের শুরু থেকে রাশিয়ার লক্ষ লক্ষ ‘শ্রমজীবী ও কর্মজীবী' মানুষ সেখানে ছুটি কাটিয়েছেন৷ এমনকি রাশিয়া থেকে ইউক্রেন বিচ্ছিন্ন হবার পরও ক্রাইমিয়ায় রুশ নাগরিকদের ঢল বন্ধ হয়নি৷

তাই রাশিয়ার অনেক মানুষ যখন ক্রাইমিয়াকে ‘আমাদের উপদ্বীপ' বলেন, তখন অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই৷ ঠিক এক বছর আগে, অর্থাৎ ২০১৪ সালের ১৮ই মার্চ ক্রাইমিয়া যখন ‘রাশিয়ায় ফিরে যায়', তখন অনেক রুশ নাগরিক এই ঘটনাকে ঐতিহাসিক ন্যায়ের ফল হিসেবেই গণ্য করেছিলেন৷ তাঁরা রুশ সরকারের যুক্তি সহজেই মেনে নিয়েছিলেন৷ ক্রেমলিন তখন বলেছিল, ক্রাইমিয়ার জনগণ এক গণভোটের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় রাশিয়ার অংশ হতে চেয়েছে এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন সেই ইচ্ছার মর্যাদা দিয়েছেন মাত্র৷

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন

‘ক্রাইমিয়া আমাদের' – এই রণংদেহী স্লোগানকে ঘিরে এত আবেগ ও উচ্ছ্বাস উপেক্ষা করা সত্যি কঠিন৷ কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বের আইনগত ব্যাখ্যা খুবই স্পষ্ট৷ রাষ্ট্র হিসেবে রাশিয়ার ক্রাইমিয়া দখল বে-আইনি – এমনকি ইউক্রেনের সংবিধানের পরোয়া না করলেও তা বে-আইনি থেকে যায়৷ সেই সংবিধানে এমন কোনো বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রয়াসের বিধান নেই৷ অথবা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি উপেক্ষা করলেও এই পদক্ষেপ বে-আইনি থেকে যায়৷ উল্লেখ্য, সেই সব চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া ক্রাইমিয়া সহ ইউক্রেনের গোটা ভূখণ্ডের অখণ্ডতা বার বার স্বীকার করেছে৷ পশ্চিমা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী ক্রাইমিয়ার গণভোট সেই অঞ্চলের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি৷ তড়িঘড়ি করে আয়োজিত এই গণভোটের আগে কোনো রাজনৈতিক আলোচনা প্রক্রিয়া দেখা যায়নি৷ এমনকি গণভোটের প্রশ্ন স্থির করার ক্ষেত্রে ভোটারদের কাছে ইউক্রেনে থেকে যাবার কোনো সুযোগও রাখা হয়নি৷ গণভোটের সময় সশস্ত্র রুশ সৈন্যদল ও তাদের সহযোগী ‘আত্মরক্ষা বাহিনী' কড়া নজর রেখেছে৷ রাশিয়ার অনেক মানুষ মানতে না চাইলেও এটা ঘটনা, যে পশ্চিমা বিশ্ব রুশ ফেডারেশনে ক্রাইমিয়ার অন্তর্ভুক্তি কোনোদিন আইনসিদ্ধ হিসেবে মেনে নেবে না৷

ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কাঠামোর মৌলিক প্রশ্ন

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ডনবাস অঞ্চলে রক্তাক্ত সংঘাত ও মিনস্ক চুক্তি কার্যকর করার কূটনৈতিক প্রচেষ্টার প্রেক্ষাপটে ক্রাইমিয়া বেদখলের আইনি বিশ্লেষণ তেমন গুরুত্বপূর্ণ বলে নাও মনে হতে পারে৷ কিন্তু ডনবাস সংকটের কূটনৈতিক সমাধানসূত্র পাওয়া গেলেও ক্রাইমিয়ার ‘স্ট্যাটাস' পশ্চিমা বিশ্ব ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে স্থায়ী সমস্যা হয়ে থাকবে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের ঘটনা মেনে নিতে পারে না, মানবেও না৷ এর মধ্যে প্রেসিডেন্ট পুটিন-ও ধীরে ধীরে ক্রাইমিয়ার তথাকথিত গণভোটের ক্ষেত্রে রাশিয়ার প্রকৃত ভূমিকা সম্পর্কে আরও খোলামেলা হয়ে উঠছেন৷

Ingo Mannteufel, Leiter der Europa-Redaktion der DW
ইঙ্গো মানটয়ফেল, ডয়চে ভেলেছবি: DW

না চাইতেও ক্রাইমিয়া ইউরোপের ভঙ্গুর শান্তি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছে৷ রাশিয়া ও পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্কের প্রকৃত উন্নতি তখনই সম্ভব হবে, যখন ক্রাইমিয়ার ‘স্ট্যাটাস' আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করবে৷ হয় ক্রাইমিয়া আবার ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে, অথবা রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে এক চুক্তির আওতায় এক নিরপেক্ষ ইউক্রেনীয় নেতৃত্ব স্বেচ্ছায় ক্রাইমিয়ার উপর কর্তৃত্বের দাবি ছেড়ে দেবে৷

দুটি বিকল্পই এই মুহূর্তে অবাস্তব মনে হচ্ছে৷ প্রেসিডেন্ট পুটিন-এর স্বৈরাচারী নীতি এর অন্যতম কারণ৷ রাশিয়ায় কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের আগে ক্রাইমিয়ার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক স্তরে গ্রহণযোগ্য কোনো সমাধানসূত্র দেখা যাবে না৷ ক্রাইমিয়া তাই রাশিয়ার নিয়তির আয়না হয়ে উঠেছে৷ রুশদের জন্য এটি সত্যিই এক বিশেষ স্থান হয়ে উঠেছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য