1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্যানসারের চিকিৎসায় ন্যানো ডায়মন্ডের সাফল্য

২৯ মার্চ ২০১১

ডায়মন্ড বা হীরাকে এখন শুধু মূল্যবান বস্তু বা অলংকারই বলা যাবেনা৷ এটিকে চিকিৎসার কাজেও ব্যবহার করা যাবে৷ শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এই তথ্যই দিলেন সম্প্রতি৷

https://p.dw.com/p/10jQ6
চিকিৎসার কাজেও ব্যবহার করা যাবে ডায়মন্ড বা হীরাছবি: AP

ক্যানসার চিকিৎসার কেমোথেরাপিতে ন্যানো ডায়মন্ড প্রয়োগ করে সুফল পাওয়া যাবে বলে মনে করেন তাঁরা৷

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. ডিন হো ও তাঁর সহকর্মীরা অতিক্ষুদ্র ন্যানো হীরা বা ন্যানোডায়মন্ড নিয়ে কাজ করছেন চিকিৎসা, বিশেষ করে ক্যানসারের চিকিৎসার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার জন্য৷ কিন্তু তাঁদের গবেষণাগারে হীরার টুকরোগুলি দ্যুতি ছড়ায়না৷ এই হীরা এমনভাবে গুঁড়ো করা যে, যে কোনো পাউডারের মতই মনে হবে এসব৷

Juwelen von Harry Winston
হীরা এখন শুধু মূল্যবান বস্তু বা অলংকারই নয়, ব্যবহৃত হবে চিকিৎসার কাজেওছবি: picture-alliance/dpa

এ প্রসঙ্গে ড. ডিন হো বলেন, ‘‘ন্যানো ডায়মন্ডের ব্যাস দুই থেকে আট ন্যানোমিটার৷ কিন্তু এর গুণাগুণ রীতিমত চোখে পড়ার মত৷ এই পদার্থটি নানা ধরনের ওষুধ প্রথমে আটকে রেখে পরে আস্তে আস্তে ছেড়ে দিতে থাকে৷ ন্যানোডায়মন্ড সহজেই প্রস্তুত করা যায়৷ একটু এ্যাসিড, একটি জাঁতাকল ও আল্ট্রাসনিক থাকলেই ন্যানোডায়মন্ড প্রস্তুত করা যায়৷ এই পদার্থটির গুণাগুণ চিকিৎসার জন্য অত্যন্ত ফলপ্রসূ হতে পারে৷''

ক্যানসার চিকিৎসার কেমোথেরাপিতে ন্যানোডায়মন্ডের প্রয়োগ সুফল বয়ে আনবে বলে আশা করেন বিজ্ঞানী ডিন৷ লক্ষ্য করা গেছে কেমোথেরাপির কার্যকারিতা কিছুদিন পরই কমতে থাকে৷ টিউমারগুলি ওষুধ প্রতিরোধক হয়ে পড়ে৷ ক্যানসারের কোষগুলি একধরনের মলিকিউল পাম্প তৈরি করে, যেগুলি থেরাপির ওষুধগুলিকে দ্রুত সরিয়ে ফেলে৷ এখন এমন সব পদার্থ তৈরি করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যেগুলি মলিকিউল পাম্পগুলিকে অবশ করে ফেলতে পারবে৷ কিন্তু মলিকিউল পাম্পগুলিও নানা ধরনের হয়ে থাকে৷ টিউমারের কোষগুলি তাই পাশ কাটাবার সুযোগ করে নেয়৷ ন্যানোডায়মন্ড ক্ষুদ্র হলেও পাম্পগুলির জন্য বড়৷ তাই ন্যানো ডায়মন্ডযুক্ত ওষুধগুলি বের করা সহজ হয়না৷ ক্যানসার চিকিৎসার কেমোথেরাপির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য ন্যানোডায়মন্ডযুক্ত ওষুধ কতটা সুফল বয়ে আনবে তা নিয়ে ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়েছেন ড. ডিনের টিম৷ মারাত্মক স্তনের ক্যানসারে আক্রান্ত কয়েকটি ইঁদুরকে গতানুগতিক পদ্ধতিতে অন্যগুলিকে ন্যানোডায়মন্ড প্রয়োগ করে চিকিৎসা করেন তাঁরা৷

Grüne Diamanten in Freetown, Sierra Leone
ক্যানসার চিকিৎসার কেমোথেরাপিতে ন্যানোডায়মন্ডের প্রয়োগ সুফল বয়ে আনবেছবি: AP

এ প্রসঙ্গে ড. ডিন বলেন, ‘‘গতানুগতিক পদ্ধতিতে ওষুধগুলি সঙ্গে সঙ্গে মলিকিউলপাম্প দিয়ে বের হয়ে যায়৷ ওষুধগুলির কাজ করার প্রায় কোনো সুযোগই থাকেনা৷ আমাদের পরীক্ষা নিরীক্ষাতেও সাধারণ পদ্ধতিতে ক্যনসারের টিউমারগুলি ওষুধ দেয়া সত্ত্বেও বাড়তে থাকে৷ কিন্তু ন্যানো ডায়মন্ডযুক্ত ওষুধগুলি ক্যানসারের কোষে কাজ করে দীর্ঘ সময় এবং ইঁদুরগুলি এক সপ্তাহের বদলে বেশ কয়েক সপ্তাহ বেঁচে থাকে৷''

এতে বোঝা যাচ্ছে, ন্যানোডায়মন্ড প্রয়োগ করার ফলে ওষুধের কার্যকারিতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পায়৷ শুধু তাই নয়, টিউমারের কোষে ওষুধগুলি সক্রিয় থাকে বহু দিন৷ আরেকটি ইতিবাচক দিক হল, এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই৷ হয়তো বা ন্যানোডায়মন্ড রক্তবাহী শিরা দিয়ে শরীরের সুস্থ কোষগুলিতে ঢুকতে পারেনা৷ অন্যদিকে টিউমারের কোষগুলি পাতলা হয় বলে ন্যানোডায়মন্ডযুক্ত ওষুধ সহজেই প্রবেশ করে কার্যক্ষম থাকতে পারে৷ ড. ডিন হো এখন পরীক্ষা করে দেখতে চান ন্যানোডায়মন্ড আরো কাজ করতে পারে কিনা৷ তিনি জানান, ‘‘যকৃৎ ও কিডনিতে সংক্রমণের কোনো চিহ্ন দেখা যায়নি৷ শরীরের জিনের কার্যকারিতাতেও কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ তবে প্রাণীভেদে ন্যানোডায়মন্ডের কাজেও কোনো পরিবর্তন হয় কিনা, তা বের করার জন্য আমরা এরপর খরগোশের ওপর পরীক্ষা চালাব৷ এটা বেশ আশাব্যঞ্জক''৷

ন্যানোডায়মন্ড দিয়ে আরো কিছু পরীক্ষা নিরীক্ষার পর মানুষের ওপর তা প্রয়োগ করা হবে৷ এজন্য কয়েক বছর লেগে যেতে পারে৷ জানালেন ড. ডিন৷ তবে শুধু টিউমার নয়, অন্যান্য অসুখ বিসুখেও ন্যানো ডায়মন্ডের প্রয়োগ সুফল আনবে কিনা তা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন বিজ্ঞানীরা৷ ড. ডিন বলেন, ‘‘আমরা অনেক ওষুধ ন্যানোডায়মন্ডের সঙ্গে যুক্ত করে দেখেছি৷ ক্যানসারের ওষুধে বা কোনো সংক্রমণ ভাল হওয়ার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে ন্যানোডায়মন্ড৷ এক্ষেত্রে রয়েছে অনেক সম্ভাবনা৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন