আয়ারল্যান্ডের কথা
২৯ নভেম্বর ২০১৩আয়ারল্যান্ড যে অর্থনৈতিক বিচারে নিরাময়ের পথে, তার প্রমাণ হিসেবে একটি পরিসংখ্যান পেশ করা চলতে পারে৷ নেওয়া যাক ‘গোস্ট এস্টেট' বা ‘ভুতুড়ে' আবাসন প্রকল্পগুলোকে৷ ২০০৮ সাল পর্যন্ত আয়ারল্যান্ডে এই আবাসন প্রকল্পগুলো ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছিল৷ কম সুদে ব্যাংক ঋণ এবং সেই সঙ্গে কর ছাড়ের ফলে অনেকেই ‘প্রপার্টি'-তে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছিলেন - এ' হলো নব্বই-এর দশকের কথা৷
২০০৮ সালে সেই প্রপার্টির বাজার ধসে যাওয়ার পর বহু আংশিকভাবে নির্মিত আবাসন প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়৷ যারা সেই সব প্রকল্পে ফ্ল্যাট কিনেছেন, তাদের দেখতে হয়, প্রকল্পের সাইটগুলোর কি দৈন্যদশা৷ ফুটপাথ কিংবা তারের বেড়া নেই; ম্যানহোল কভার এবং রাস্তার আলো চুরি গেছে৷ অবক্ষয়ের সেখানেই অন্ত নয়: কোনো কোনো প্রকল্পের একাংশকে শেষমেষ বুলডোজার দিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া ছাড়া আর কোনো পথ কিংবা পন্থা থাকেনি৷
আয়ারল্যান্ডে বাড়ি তৈরি বাজার তুঙ্গে পৌঁছয় ২০০৭ সালে৷ তারপরে যে ‘প্রপার্টি ক্র্যাশ' ঘটে, প্রধানত তার কারণেই আয়ারল্যান্ডকে ২০১০ সালে আন্তর্জাতিক আর্থিক ত্রাণের শরণাপন্ন হতে হয়৷ আয়ারল্যান্ডে প্রপার্টির মূল্য আজও ২০০৭ সালের তুলনায় ৪৭ শতাংশ কম – এবং তা রাজধানী ডাবলিনে বাড়ির দাম বাড়া সত্ত্বেও৷ তবে গত ১২ মাসে সারা দেশে প্রপার্টির দাম বেড়েছে গড়ে ছয় শতাংশ, ডাবলিনের ক্ষেত্রে যেটা ১৫ শতাংশ৷
ফেরা যাক ভুতুড়ে আবাসন প্রকল্পগুলোর কথায়৷ ২০১০ সালে আয়ারল্যান্ডে এ'ধরনের অসম্পূর্ণ বা পরিত্যক্ত আবাসন প্রকল্পের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৮৪৬; আপাতত সেটা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৫৮-য় -– অর্থাৎ প্রায় ৫৬ শতাংশ কম৷ সরকারি বিবরণে দেখা যাচ্ছে যে, বিগত ১২ মাসে ৫০০টি অসম্পূর্ণ আবাসন প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে৷ সব মিলিয়ে এটা যে দেশের অর্থনৈতিক নিরাময়ের একটা বড় লক্ষণ, তা-তে কোনো সন্দেহ নেই৷
দেশান্তরী
তবে আয়ারল্যান্ড এমন একটি দেশ, যার অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আন্দাজ পেতে হলে চিরকালই নজর রাখতে হয় দেশান্তরীর সংখ্যাটির দিকে – খেয়াল রাখবেন, অভিবাসী নয়, দেশান্তরী৷ ঊনবিংশ শতকের গোড়ায় মন্বন্তরের সময় আয়ারল্যান্ড ছেড়ে দেশত্যাগী হয়েছিলেন পাঁচ লাখ মানুষ৷ আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পঞ্চাশের দশকেও প্রায় আড়াই লাখ আইরিশ দেশ ছাড়েন৷
কিন্তু আজ যারা আয়ারল্যান্ড ছাড়ছেন, তারা চাকরি ছেড়েও বিদেশে যাচ্ছেন, শুধু বেকারত্ব থেকে পালিয়ে কাজের সন্ধানে নয়৷ তার একটা কারণ হলো, বিশেষ করে চিকিৎসকদের ক্ষেত্রে, কাজের মাত্রাধিক সময় এবং কষ্টদায়ক পরিবেশ৷ হাসপাতালে কনসালট্যান্ট পাওয়া যেমন শক্ত, তেমন জুনিয়র ডাক্তারদের একটানা ৩১ ঘণ্টা ডিউটি করার দৃষ্টান্তও আছে৷ কাজেই তারা দেশ ছাড়ছেন এবং আয়ারল্যান্ডে আবার শোনা যাচ্ছে একটি ‘হারানো প্রজন্মের' কথা৷
সরকারের প্রচেষ্টা হলো আয়ারল্যান্ডকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির একটি কেন্দ্রবিন্দু করে তোলা: যে কারণে গুগল, ফেসবুক, ই-বের প্রতি আইরিশ সরকার এতোটা সদয়৷ তার ফলও পাওয়া যাচ্ছে৷ আয়ারল্যান্ডে বেকারত্ব কমে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশে – যা কিনা ইউরো এলাকার গড়ের সামান্য উপরে৷ নয়ত আয়ারল্যান্ডে বেকারত্বের হার ছিল ১৫ শতাংশ – আবার তা-ও মানুষজন বিপুল সংখ্যায় দেশান্তরী হবার কারণে, নয়ত বেকারত্বের হার দাঁড়াত ২০ শতাংশে৷
এসি/জেডএইচ (এএফপি, রয়টার্স)