1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কৃত্রিম হৃদযন্ত্র

মার্টিন রিবে/এসবি১৯ জানুয়ারি ২০১৫

আজকাল অনেক কমবয়সি মানুষেরও হৃদরোগ হচ্ছে৷ চিকিৎসার অগ্রগতির ফলে তাদের সহায়তা করাও অনেক সহজ হয়ে পড়েছে৷ কিন্তু হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে গেলে অঙ্গ প্রতিস্থাপন ছাড়া উপায় নেই৷ এক কৃত্রিম হৃদযন্ত্র অনেকের প্রাণ বাঁচাতে পারে৷

https://p.dw.com/p/1EMTn
Kunstherzimplantation
ছবি: Hospital Dr. Gustavo Fricke

জার্মানিতে তৈরি হচ্ছে বিশ্বের ক্ষুদ্রতম কৃত্রিম হৃদযন্ত্র৷ কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়াই বহু বছর ধরে সেটি চালু থাকে, কোনো তার না থাকায় সংক্রমণের ভয়ও নেই৷ অদূর ভবিষ্যতে এটি বাজারে এলে সারা বিশ্বে হাজার হাজার রোগী নতুন জীবন পেতে পারেন৷ কারণ সে ক্ষেত্রে তাঁদের আর কারো অঙ্গদানের জন্য অপেক্ষা করতে হবে না৷

জার্মানির আখেন শহরের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আরডাব্লিউটিএইচ-এর অধ্যাপক উলরিশ স্টাইনসাইফার ও তাঁর টিম নতুন এই কৃত্রিম হৃদযন্ত্র তৈরি করেছেন৷ সেই ১৯৯০-এর দশক থেকেই ইনস্টিটিউট অফ অ্যাপ্লায়েড মেডিকাল টেকনোলজি-তে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র নিয়ে কাজ চলছে৷ বিজ্ঞানীরা এবার সেই হৃদযন্ত্র এত ছোট করতে পেরেছেন, যাতে আরও বেশি মানুষের শরীরে তা ইমপ্লান্ট করা যায়৷ অধ্যাপক স্টাইনসাইফার বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য ছিল, কৃত্রিম হৃদযন্ত্র যেন ৮০ শতাংশ রোগীর শরীরে খাপ খায়৷ জায়গাটি খুব ছোট হওয়ায় আমাদের কৃত্রিম হৃদযন্ত্রও খুব ছোট আকারের করতে হয়েছে, যাতে সেটি বুকের খাপে স্থান পায়৷''

Kunstherzimplantation
কৃত্রিম অ্যাক্সিয়াল পাম্পছবি: Hospital Dr. Gustavo Fricke

এর মূল অংশ হলো একটি পাম্পিং ইউনিট, যেটি পুরোপুরি মানুষের হৃদযন্ত্রের বিকল্পের কাজ করে৷ সেটি চালায় এমন এক ইঞ্জিন, যা একটি মাত্র অংশ দিয়ে তৈরি এবং যেটি সহজেই চৌম্বক ক্ষেত্রে নড়াচড়া করতে পারে৷ আরডাব্লিউটিএইচ আখেন-এর ফেলিক্স গ্রেফ বলেন, ‘‘এখানে কয়েল দেখতে পাচ্ছি, পেঁচানো কয়েল, আর এখানে কালো চুম্বকগুলি৷ কয়েলে বিদ্যুত চলাচল শুরু হলে পেন্ডুলামের মতো নড়াচড়া শুরু হয়৷ ফলে হৃদপিণ্ডের বাম ও ডান চেম্বারের ভেন্ট্রিকল বা নিলয় খালি হয় এবং শরীরে রক্তের চলাচল সৃষ্টি হয়৷''

কোনো তার ছাড়াই শুধু ত্বকের মাধ্যমে কৃত্রিম হৃদযন্ত্রে বিদ্যুৎ পাঠানো হয়৷ ত্বকের নীচে তার না থাকায় সংক্রমণও ঘটে না৷ রোগীর বেল্টে ব্যাটারি বসানো থাকায় হাঁটাচলার ক্ষেত্রেও আর তেমন কোনো বাধা থাকে না৷ অধ্যাপক স্টাইনসাইফার বলেন, ‘‘এখান থেকে কৃত্রিম হৃদযন্ত্রে শক্তি পাঠাতে হয়৷ সমস্যা হলো ত্বকের মাধ্যমে তা প্রেরণ করা৷ আমরা এ ক্ষেত্রে ‘ইন্ডাকটিভ কাপলিং' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এই কাজ করছি৷ দুটি কয়েল-এর মধ্যে একটি ইমপ্লান্ট করা রয়েছে৷ অন্যটি বাইরে থাকে৷ ‘ইন্ডাকশন' প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শক্তি পাঠানো হয়৷ এটা সহজেই দেখানো যায়৷ একটি এলিমেন্ট কাছে আনলেই ডায়ড জ্বলে ওঠে৷ অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে ‘ইন্ডাকটিভ' প্রক্রিয়ায় বিদ্যুৎ পাঠানো হচ্ছে৷''

বর্তমানে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সময় পর্যন্ত রোগীর জন্য কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড ব্যবহার করা হয়৷ কিন্তু জার্মান গবেষকরা স্থায়ীভাবে কৃত্রিম হৃৎপিণ্ড ব্যবহার সম্ভব করতে চান৷ এখনো পর্যন্ত পরীক্ষায় প্রটোটাইপগুলি পাঁচ বছর পর্যন্ত ব্যবহারের উপযোগী বলে প্রমাণ করা গেছে৷ এই সময়কালে ২০,০০০ কোটিরও বেশি হৃৎস্পন্দন ঘটে৷ মেরামতি বা ব্যাটারি বদলানোর কোনো প্রয়োজন পড়ে নি৷

হৃৎপিণ্ডের চেম্বারদুটির মধ্যে ‘ফ্লো' এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷ রক্ত অতি দ্রুত বা অতি ধীরে চলাচল করলে চলবে না৷ অন্যথায় চেম্বারের ক্ষতি হতে পারে৷ কম্পিউটার সফটওয়্যারের মাধ্যমে গবেষকরা রক্তের প্রতিক্রিয়া সিমুলেট করছেন৷ রক্তের সারফেস ও গতিবিধি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করা হয়৷ অধ্যাপক স্টাইনসাইফার বলেন, ‘‘আমরা আমাদের কৃত্রিম হৃদযন্ত্রে শুধু ‘অপটিমাইজড সারফেস' ও উপকরণ ব্যবহার করেছি, যা রক্ত বহনের জন্য বেশ উপযুক্ত৷ এছাড়া পাম্পিং চেম্বারে রক্ত চলাচলের আদর্শ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে৷''

রক্ত চলাচলের সিমুলেটর-এ রক্তের চাপ মাপা হচ্ছে৷ কৃত্রিম হৃদযন্ত্রের ভিতরের চাপ কোনো সেন্সর ছাড়াই স্থির করা হয়৷ এক কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে নানা তথ্য জমা পড়ে৷ তারপর অ্যালগোরিদমের সাহায্যে স্থির হয়, রক্তের চাপ বাড়বে না কমবে৷ যেমন সিঁড়ি দিয়ে ওঠার সময় আরও অক্সিজেন লাগে বলে পাম্পের গতি বাড়ানোর নির্দেশ আসে৷

এখনই এই হৃদযন্ত্র সফলভাবে বাছুরের শরীরে ট্রান্সপ্লান্ট করা হচ্ছে৷ দু'বছর পর প্রথম বার মানুষের উপর তা পরীক্ষা করা হবে৷ তখন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের বিকল্প হিসেবে এর ব্যবহার শুরু হবে৷ অধ্যাপক স্টাইনসাইফার বলেন, ‘‘শরীরের হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে সার্কুলেশন চালিয়ে যাবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললে এবং প্রতিস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় হৃদযন্ত্র না পেলে কৃত্রিম হৃদযন্ত্র ব্যবহার করা যেতে পারে, যাতে সার্কুলেশন আবার স্বাভাবিক হয়ে পড়ে৷''

প্রতিস্থাপনের অপেক্ষায় যাঁরা বসে আছেন, তাঁদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বর্তমানে অন্যের দান করা হৃদযন্ত্র পান না৷ জার্মানিতে তৈরি কৃত্রিম হৃদযন্ত্র ভবিষ্যতে অনেক মানুষের জীবন বাঁচাতে পারবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য