কার্বন ডাই অক্সাইড খুলছে সম্ভাবনার দুয়ার
১৬ মে ২০১১বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এই কার্বন ডাই অক্সাইডের আরও কিছু গুণাগুণ আবিষ্কার করেছেন যা ভবিষ্যতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে৷
একটা সময় ছিল যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছিল পরিচ্ছন্ন৷ বাতাসের অণুর মধ্যে শতকরা ০.০২৮ শতাংশ ছিল কার্বন ডাই অক্সাইডের অণু৷ কিন্তু শিল্পায়নের ফলে সেই বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে৷ কয়লা, তেল এবং গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহারের কারণে বাতাসের অণুর মধ্যে এখন কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ০.০৩৮ শতাংশে৷ বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বাতাসে এই কার্বন নিঃসরণের মাত্রা দিন দিন আরও বেড়ে চলেছে৷ এই অবস্থাতে ফসিল ফুয়েল হিসেবে নয়, বরং কার্বনের বিকল্প ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাই দিন দিন বেড়ে চলেছে৷
বর্তমান বিশ্বের রাসায়নিক শিল্প যেভাবে বেড়ে চলেছে তার অন্যতম উৎস হচ্ছে তেল৷ এছাড়া তুলনামূলক হালকা হওয়ার কারণে প্লাস্টিকের তৈরি জিনিসপত্রের পরিমাণও দিন দিন বাড়ছে৷ এই ক্ষেত্রে কার্বন ডাই অক্সাইড হতে পারে একটি নতুন সম্ভাবনা৷ কার্বন ডাই অক্সাইড অবশ্য শিল্পের ক্ষেত্রে অনেক দিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে৷ এক্ষেত্রে নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ ইউরিয়া সার কিংবা অ্যাসপিরিনের কথা চলে আসতে পারে৷ তবে কার্বন ডাই অক্সাইডকে আরও বহুমাত্রায় ব্যবহারের নতুন একটি সম্ভাবনা তুলে ধরেছেন জার্মানির মিউনিখের টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বেরনার্ড রিগার৷
জার্মান এই গবেষক এজন্য একটি নতুন ধরনের প্লাস্টিকের কথা বলছেন৷ এর নাম নাম পলিপ্রোপিলেন কার্বোনেট বা সংক্ষেপে পিপিসি৷ কার্বন ডাই অক্সাইড এবং প্রপিলেন অক্সাইডের মিলিত প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবে এই পিপিসি তৈরি হয়ে থাকে৷ প্রফেসর বেরনার্ড রিগার দেখিয়েছেন যে, কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহার করে কীভাবে এই পিপিসিকে আরও বহুমাত্রিক এবং উন্নত পদ্ধতিতে কাজে লাগানো সম্ভব৷ যদিও এই পিপিসির সঙ্গে গবেষকরা বেশ কয়েক দশক আগে থেকেই পরিচিত হয়েছে, তবে এই রাসায়নিক প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতিটি এতদিন ধরে অজানা ছিল৷ এবং সেই ক্ষেত্রেই সফল হয়েছেন জার্মান গবেষক রিগার৷ তিনি মনে করছেন, একদিন তেলের উৎস শেষ হয়ে যাবে৷ তাই সেই দিন আসার আগেই শিল্পোৎপাদনের জন্য নতুন একট বিকল্প উৎস খুঁজে বের করতে হবে৷ আর কার্বন ডাই অক্সাইড হতে পারে সেই নতুন উৎস৷
গবেষকরা তাদের পরীক্ষায় ক্যাটালিসিস ব্যবহার করেছেন যেটা গাড়ির ক্যাটালিস্টের মত৷ ক্যাটালিস্ট যেভাবে গাড়ির গ্যাসকে তুলনামূলক কম ক্ষতিকর হিসেবে নিঃসরণে সহায়তা করে তেমনি ক্যাটালিসিসও কার্বন ডাই অক্সাইডের অনুগুলোর প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের ভিন্ন কোন পদার্থে পরিণত করতে সহায়তা করে৷
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই সূত্র অনুসরণ করে কার্বন ডাই অক্সাইডকে সিডি-র মত উন্নত পণ্যে পরিণত করা সম্ভব এবং তারা দেখেছেন যে ভিন্ন ধরণের ক্যাটালিসিস ব্যবহার করে কার্বন ডাই অক্সাইডের অনুগুলোর প্রতিক্রিয়াতেও ভিন্নতা আনা সম্ভব৷ প্রফেসর রিগার মনে করছেন যে এই ভাবে একাধিক ধরণের পলিপ্রোপিলেন কার্বোনেট প্লাস্টিক তৈরি করা সম্ভব৷ গবেষণাগারে যে পিপিসি তৈরি হচ্ছে তার শতকরা ৫০ ভাগই কার্বন ডাই অক্সাইড, তাই এই প্লাস্টিকে কোন ধরণের ভেজাল নেই৷
এই ব্যাপারে প্রফেসর রিগার বলেন, ‘‘আমি মনে করি কার্বন ডাই অক্সাইডকে মূল্যবান কাজে ব্যবহারের একটি ফলাফল রয়েছে৷ সেটা ওষুধ কিংবা পলিমারও হতে পারে৷ পলিমার তৈরিতে কার্বন ডাই অক্সাইড ব্যবহৃত হলে সেটাকে পণ্যেও রূপান্তর করা সম্ভব৷ এবং এক্ষেত্রে আমরা শুধু নতুন পলিমার তৈরিই করছি না, ক্যাটালিসিসকেও ব্যবহার করছি সম্পূর্ণ নতুনভাবে৷''
এক বছর আগে প্রফেসর রিগার জার্মানির বহুজাতিক রাসায়নিক কোম্পানি বিএএসএফ'এর সঙ্গে কাজ শুরু করেন৷ তারা এই প্লাস্টিককে বাজারে আনার জন্য ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে৷ ওষুধ কিংবা সিডি যেটাতেই হোক না কেন, কার্বন ডাই অক্সাইডকে ব্যবহার করে নতুন ধরণের প্লাস্টিক তৈরি অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে বলে অনেকের ধারণা৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: আবদুল্লাহ আল-ফারূক