1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ঝরাপাতার জীবন আমাদের’

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১০ অক্টোবর ২০১৪

বাংলাদেশের একটি জেলা শহর টাঙ্গাইলের যৌনপল্লি থেকে উচ্ছেদ হওয়া ২,০০০ যৌনকর্মী এবং অধিবাসীদের জীবন এখন ঝরা পাতার মতো৷ তাঁরা যেন ভাসমান৷ উচ্ছেদ হওয়ার পর অনাহারে, অর্ধাহারে জীবন কাটাচ্ছেন তাঁরা৷

https://p.dw.com/p/1DT6w
Kinderprostitution in Bangladesch
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages

এরই মধ্যে তিন শিশুসহ মারা গেছেন সাতজন৷ তাই জীবনের তাগিদে, বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টা হিসেকে তাঁরা খুব তাড়াতাড়ি আন্দোলনে নামবেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘নারীমুক্তি'-র সভানেত্রী আকলিমা বেগম আঁখি৷

গত ১২ই জুলাই একরাতেই উচ্ছেদ করা হয়েছে ২০০ বছরের পুরনো টাঙ্গাইলের কান্দাপড়া যৌনপল্লি৷ পল্লির ৯০০ যৌনকর্মীসহ ২,০০০ নারী ও শিশু তাঁদের আবাসন এবং পেশা হারিয়ে পথে নামতে বাধ্য হয়েছেন৷ এই যৌনপল্লি উচ্ছেদ করা হয়েছে স্থানীয় কিছু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতার নেপথ্য ষড়যন্ত্রে৷ কারণ তাঁরা পল্লির সাড়ে তিন একর জমি দখল করতে চান৷

‘নারীমুক্তি'-র সভানেত্রী আকলিমা বেগম আঁখি বলেন, ‘‘আমরা উচ্ছেদের একমাস পর আবারো অবস্থান নিয়েছিলাম কান্দাপড়ায় আমাদের বসতি এবং জমি ফিরে পাওয়ার জন্য৷ কিন্তু দু'দিনের বেশি অবস্থান করতে পারিনি৷ পুলিশ প্রশাসন আমাদের আবার হটিয়ে দেয়৷ এখন আমাদের কেউ কেউ রাস্তায়, কেউ মানিকগঞ্জ, কেউ দৌলতদিয়া বা অন্য কোথাও অবস্থান করছেন৷ কাজ নেই, খাবার নেই৷ এক ঝরাপতার জীবন আমাদের৷''

যৌনকর্মী হাসি বেগম জানান, ‘‘আমরা আমাদের সারা জীবনের সঞ্চয়, আমাদের সম্পদ কিছুই রক্ষা করতে পারিনি৷ এককাপড়ে জীবন নিয়ে পালিয়েছি৷ আমাদের উচ্ছেদের সময় সশন্ত্র হামলাকারীরা ভাঙচুর করে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার হুমকি দেয়৷ অথচ আমাদের রক্ষায় সমাজের কেউ এগিয়ে আসেনি৷''

কান্দাপড়া যৌনপল্লিতে মোট ৫৯টি বাড়ি ছিল, যার সবই গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে৷ এই সব বাড়ি এবং জমির মালিক যৌনকর্মীরা৷ যৌনকর্মীদের নেত্রী আনোয়ারা বেগম ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘৫৯টির মধ্যে ৪২টি বাড়ির মালিক আমরা৷ কিন্তু আমাদের ‘সমাজবিরোধী' অপবাদ দিয়ে উচ্ছেদ করা হলো৷ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জমি গ্রাস করার জন্য প্রশাসনের সহায়তায় বেআইনি কাজ করেছে৷ আমরা কিন্তু আইন মেনেই নিজেদের জমিতে ব্যবসা করতাম৷''

উচ্ছেদের সময় যৌমকর্মীদের ২০০ কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতি হয়েছে৷ এ নিয়ে মামলা করতে গেলেও থানা মামলা নেয়নি৷ আর প্রশাসন তাদের জমির দলিলপত্র চাওয়ার পর, দলিলপত্র দেয়া হয়েছে বলে জানান আকলিমা বেগম আঁখি৷ কিন্তু প্রাশাসন নানা টালবাহানা করছে৷ ৩০ জন যৌনকর্মী এখন প্রশাসনের হেফাজতে আছেন৷ তাঁদের দিয়ে নতুন কোনো ষড়যন্ত্র করা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তিনি৷

এর আগেও ২০০৬ এবং ২০১০ সালে যৌনপল্লিটি উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছিল৷ তখন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিরোধের কারণে উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি৷ তবে এবার প্রভাবশালীরা জড়িত থাকায় আর থামানো যায়নি৷

টাঙ্গাইলের সাংবাদিক বদরুল হাসান লিটন ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘উচ্ছেদকরা যৌনপল্লির জমি টিন দিয়ে ঘিরে রেখেছে৷ সেখানে পুলিশ পাহারাও আছে৷ উচ্ছেদের পর অন্তত দু'বার যৌনকর্মীরা ফিরে আসার চেষ্টা করলে, তাঁদের হটিয়ে দেয় পুলিশ৷'' তিনি জানান, ‘‘এই জমির মালিক যে যৌনকর্মীরা, এটা সবাই জানেন৷ তবে একটি মহল এখন একে খাস জমি হিসেবে দেখিয়ে দখলের চেষ্টা করছে৷''

‘নারীমুক্তি'-র সভানেত্রী আকলিমা বেগম আঁখি বলেন, ‘‘আমরা আবার সংগঠিত হচ্ছি৷ যোগাযোগ করছি৷ ঈদের জন্য চুপচাপ ছিলাম৷ শিগগিরই আমরা আন্দোলনে যাব৷ আমরা আমাদের জমি ও ভবন ফেরত চাই৷ আমাদেরও সম্পদ নষ্টের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে৷ আমাদের জমিতেই আমাদের পুনর্বাসন করতে হবে৷ আমরা না খেয়ে মরতে চাই না৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য