1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কাগজ, আবার শিল্প...

৫ মে ২০১৭

প্যাপাইরাস, পেপার, কাগজ৷ এই কম্পিউটারের যুগেও সেই আদিম বস্তুটির উপযোগিতা শেষ হয়নি, কেননা মানুষ যতোটা সৃজনশীল, কাগজ ঠিক ততোটাই বহুরূপী৷

https://p.dw.com/p/2cPTb
DW Sendung Euromaxx Paperlux
ছবি: DW

বহুরূপী কাগজ

লেটারবক্সে এ ধরনের একটি আমন্ত্রণ পেলে কার না ভালো লাগে, বলুন – কেননা নিমন্ত্রণপত্রটিই তো একটি শিল্প! পেপারলুক্স নামের একটি ডিজাইন সংস্থা এ ধরনের নিমন্ত্রণপত্র ছেপে থাকে৷

পেপারলুক্স-এর পেপার ডিজাইনার সোরাইয়া ক্যুনে বলেন, ‘‘কাগজ এমন একটা জিনিস, যার বৈচিত্র্যের কোনো শেষ নেই৷ প্রতি বছর অসংখ্য নতুন ধরনের কাগজ বেরোচ্ছে৷ ফ্রান্সে একটা কাগজ তৈরি হচ্ছে, যা দারুণ: কারো তা হাতে নিলে গা ঘিন ঘিন করে; আবার কেউ বলেন, কি সুন্দর...’’

কাগজ একটি নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু, অথচ তার সঙ্গে অনেক আবেগ-অনুভূতি জড়িত থাকে৷ পেপারলুক্সে কাগজ থেকে নানা ধরনের জিনিস তৈরি করা হয়৷ কোনো বাঁধাধরা জিনিস নয়, ‘অ্যার্মেস’ ফ্যাশন লেবেলের মতো বড় বড় আন্তর্জাতিক খরিদ্দারদের ফরমায়েশ অনুযায়ী তৈরি সব একক পণ্য৷ সেক্ষেত্রে এ ধরনের চোখধাঁধানো, দামি নিমন্ত্রণপত্র খুব কাজে আসে৷

সোরাইয়া ক্যুনে জানালেন, ‘‘এটা হল চীনের একটি নিমন্ত্রণপত্র, যা দেখলেই বোঝা যায়৷ একে বলে ডিওরামা; কাগজের অনেক পাতা একসঙ্গে জুড়ে তৈরি করা হয়েছে৷ সব কিছু হাতে তৈরি, কোনো কিছু ছাপা বা রং করা হয়নি৷ আমরা শুধু একটা মোটা কাগজকে পাতে পাতে কেটে জোড়া দিয়েছি৷’’

পেপারলুক্স কোম্পানি

পেপারলুক্সের মালিক হলেন ক্যুনে দম্পতি মাক্স এবং সোরাইয়া৷ কর্মীর সংখ্যা বেশি নয়, সাকুল্যে আটজন৷ কোম্পানিটির পিছনে সৃজনীশক্তি হলেন মাক্স ক্যুনে৷ তিনি পেশায় নেমপ্লেট ও প্ল্যাকার্ড আঁকার শিল্পী৷ কারখানায় তিনি রোজ নিজেই হাত লাগান – যেমন এখানে হামবুর্গের আলস্টার হ্রদের ধারে অবস্থিত একটি অভিজাত রেস্টুরেন্টের মেন্যুকার্ড তৈরি হচ্ছে৷

পেপারলুক্স-এর ক্রিয়েটিভ ডাইরেক্টর মাক্স ক্যুনে বললেন, ‘‘পদার্থটা অনুভব করতে পারা আমাদের কাজের একটা বড় অংশ৷ পদার্থ কল্পনা করে নেওয়া যায় না৷ কাগজ নিয়ে ইন্টারনেটে কাজ করার চেষ্টা করা হয়েছে, বলা হয়েছে, ভেবে নাও ওয়েবসাইটের পটভূমিটা হল এক ধরনের কাগজ৷ কিন্তু কাগজ হাতে নেবার যা অনুভূতি, তা কখনও ওভাবে পাওয়া সম্ভব নয়৷’’

কাগজ আবিষ্কৃত হয় প্রায় দু’হাজার বছর আগে৷ আজ হাইটেক প্রয়োগ করে সেই কাগজ নিয়ে কাজ করা হচ্ছে৷ পেপারলুক্সের পেটেন্ট করা এই প্রক্রিয়ায় একটি ‘লেজার কাটার’ কাগজের সবচেয়ে ওপরের স্তরটি পুড়িয়ে দিচ্ছে – যার ফলে মিলিমিটার পর্যন্ত নিখুঁত নকশা ও অক্ষর ছাপা হচ্ছে৷ তবে কম্পিউটার সব কিছু একা করতে পারে না৷

মাক্স ক্যুনে বললেন, ‘‘আমি বসে বসে কাচের মধ্যে দিয়ে দেখছি, বেশ ভালোই কাজ হচ্ছে৷ কিন্তু শেষমেষ হয়তো কাগজের উপর সেটা ভালো দেখাবে না৷ আমাকে হয়তো কাগজটা বদলাতে হবে... কিন্তু কীভাবে? নতুন কাগজটাই বা কীরকম দেখাবে, তার উপর ছাপার হরফই বা কেমন দেখাবে...’’

প্রতিযোগীরাও আছেন

কাগজ দিয়ে যে কতো কিছু করা সম্ভব, অন্যান্য কোম্পানিও তা আবিষ্কার করেছে৷ বার্লিনের ডিজাইনার ক্যাথরিন গ্রিগুল জাপানি ওয়াশি কাগজ দিয়ে ল্যাম্প তৈরি করেন৷ ক্লাউডিয়া ডিল কাগজ দিয়ে তৈরি করেন ফ্যাশন জুয়েলারি৷ কাগজ মুড়ে, তা ল্যাকার করে তৈরি হয় ঝোলানো কানের দুল বা গলার নেকলেস৷ পেপারলুক্সের পণ্যগুলোও খদ্দেরদের চমকে দেবে, এই হল আশা ও উদ্দেশ্য৷

মাক্স ক্যুনে বললেন, ‘‘ভবিষ্যতেও ছাপার জিনিস থাকবে বলে আমার ধারণা, চিরকাল এভাবেই চলবে৷ তবে তফাতটা ক্রমেই আরো বাড়বে৷ একদিকে থাকবে সস্তার বিজ্ঞাপন, যা লেটারবক্স থেকেই আমি ফেলে দিই; অন্যদিকে এই ধরনের জিনিস, যা দেখলে মনে হয়, দারুণ! আমি এগুলোকে রাখব...’’

হামবুর্গ আলস্টারের রেস্টুরেন্টের মালিক তাঁর নতুন মেন্যুকার্ড দেখে খুব খুশি৷ ক্যুনে-রা ইতিমধ্যেই একাধিক ডিজাইন প্রাইজ পেয়েছেন এবং ভবিষ্যতে আরো পাবেন, কেননা কাগজের সব সম্ভাবনা শেষ হয়েছে বলে তারা মনে করেন না৷

লুকাস ফ্যোর/এসি