কলকাতার চীনারা
চীনা ব্যবসায়ী টং অছির পরবর্তী প্রজন্ম রয়ে গিয়েছেন এই শহর ও তার লাগোয়া অঞ্চলে৷ শরীরে চীনা রক্ত বইলেও এঁরা কিন্তু পুরোদস্তুর ভারতীয়৷
ইতিহাস
প্রায় ২০০ বছর আগে ওয়ারেন হেস্টিংসের সময় টং অছি নামে এক চীনা ব্যবসায়ীর হাত ধরে কলকাতায় চীনাদের প্রবেশ ঘটে৷ সেই থেকে শুরু৷ নানা ব্যবসার হাত ধরে শহরে পা রাখেন চীনের হাক্কা কমিউনিটির মানুষরা৷ পুরনো কলকাতার চীনা ইতিহাসের রঙ আজ বড়ই ফিকে৷
এ দেশ তোমার আমার
মূলত টেরিটি বাজার অঞ্চলটিকেই চীনারা নিজেদের ‘ঘরদোর’ বানিয়ে এ দেশের জলহাওয়া আর মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছেন৷ পরে আস্তে আস্তে ছড়িয়ে পড়েছেন অন্যান্য অঞ্চলে, এমনকি শহরতলি, অলিগলিতে৷ বাষট্টির ভারত-চীন যুদ্ধের পর অবশ্য তাঁদের ‘হিন্দি চীনি ভাই ভাই’ বিশ্বাসে চিড় ধরেছে৷
চাই না যুদ্ধ
১৯৬২-র ভারত-চীন যুদ্ধ দেখেছেন বৃদ্ধ লি চুং৷ বললেন, ‘‘সেটা মনে না করাই ভাল৷ তখন টেরিটি বাজার থেকে হাওড়া যেতে গেলেও অনুমতি নিতে হত৷ পাঁচ বছর লাগাতার এই চলেছে৷ কোনও পরিস্থিতিতে যুদ্ধ যেন না বাঁধে৷ এটাই প্রার্থনা৷’’
অনেকটা বাঙালি
এতদিন ধরে কলকাতায় বাস করায় চীনাদের ভাষা, খাদ্যাভ্যাস ও ধর্মচর্চার বাঙালিকরণ ঘটেছে৷ বাঙালিদের সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে মহানগরের বুকে তাঁরাও সকালবেলা বাজার করেন চুটিয়ে৷
যিনি রাঁধেন
কলকাতার পূর্ব অংশে ট্যাংরা এলাকায় অবস্থিত চীনাপাড়ায় চীনা খাবারের ছোটবড় রেস্তোরাঁ আছে৷ সেগুলো চালাতে মহিলারাও যথেষ্ট পারদর্শী৷ তাঁরা নিজেরাই অনেকে কাঁচামাল কিনে আনেন৷
রন্ধনে চীন
বাঙালির ভোজের তালিকায় চীনা খাবারের রমরমা ক্রমশ বাড়ছে৷ বাঙালি ক্রমেই মজেছে চীনা ম্যাজিকে৷ মোমো-চাউমিন-চিলি চিকেনের হাত ধরে খাঁটি চীনা রেস্তোরাঁর সঙ্গে বঙ্গজীবনের অন্যতর যোগ আজও বিদ্যমান!
প্রাতঃরাশের স্বর্গ
মধ্য কলকাতার টেরিটি বাজার এলাকায় ব্ল্যাকবার্ন লেন৷ পাশেই ছাতাওয়ালা গলি৷ সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে এখানে পা দিলেই চীনা খাবারের গন্ধ পাওয়া যায়৷ প্রাতঃরাশের দুর্দান্ত সম্ভার নিয়ে মহানগরের ‘নীল আকাশের নীচে’র চীনাম্যানরা হাজির হন এখানে৷ মমো, স্যুপের স্বর্গরাজ্যে তাই রোজই ভিড়৷
রক্তে ব্যবসা
৬২-র পর চীনাদের ব্যবসা ধাক্কা খেলেও সময়ের ফেরে চীনা আলো বা পোশাক থেকে চীনা খাবার - সব কিছুতেই আবার চীনাদের ব্যবসা ভারতীয়দের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে চলেছে৷ ছাতাওয়ালা গলির ব্রেকফাস্ট টেবিলে সে কথা স্বীকার করে নিলেন তরুণ ব্যবসায়ী লি হান কুয়ান৷
বদলে যাবে ব্ল্যাকবার্ন লেন
ব্ল্যাকবার্ন লেনে চীনাদের ব্যবসা ঐতিহ্য, জৌলুস হারিয়ে টিমটিম করছে৷ শোনা যাচ্ছে সিঙ্গাপুরের সংস্থার সঙ্গে কথা হয়েছে রাজ্যের পর্যটন দফতরের৷ তৈরি হবে ব্রেকফাস্ট মার্কেট, প্রভিশন স্টোরস, ফুড স্ট্রিট, নাইট মার্কেট, হেরিটেজ ট্রেল, হেরিটেজ সেন্টার৷ চীনাদের অভাব অভিযোগ এবার মিটবে৷
ক্ষুদ্রশিল্পে
চীনারা অনেকেই বাড়িতে গড়ে তুলেছেন ক্ষুদ্রশিল্প৷ চিংড়ির চিপস, নুডুলস, সস তৈরি করে অনেকেই তা বাজারে নিয়ে আসেন৷
আজ সংখ্যালঘু
অভিবাসী হিসেবে সেই ১৮ শতকে এদেশে আসা— তারপর বন্দরে কাজ কিংবা চামড়ার ব্যবসা বা রেস্তোরাঁ খুলে চীনারা জমিয়ে দিয়েছিলেন চায়না টাউন৷ কলকাতায় চীনাদের সংখ্যাটাও ছিল এক লাখের মতো৷ এখন সেই সংখ্যাটা কমে মাত্র ২ হাজার৷ অন্যান্যদের ভিড়ে আজ হারিয়ে যেতে বসেছেন কলকাতার চীনারা৷