কমনওয়েলথ সম্মেলন
৫ নভেম্বর ২০১৩চলতি মাসে শ্রীলঙ্কায় শুরু হচ্ছে কমনওয়েলথ সরকার প্রধানদের শীর্ষ সম্মেলন৷ ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর যোগদানের বিরুদ্ধে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক নেতাদের চাপ, অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে মিত্রতা বজায় রাখার নীতি৷ এই দুইয়ের মধ্যে ভারতের স্বার্থের পক্ষে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তা স্থির করতে হবে দিল্লিকে৷ বিষয়টিকে অবশ্য অনেক সহজ করে দিয়েছে শ্রীলঙ্কার তামিল-প্রধান উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশের নির্বাচিত তামিল জাতীয় আতাঁত টিএনএ-র মুখ্যমন্ত্রী বিঘ্নেশ্বরণের আমন্ত্রণ৷ শুধু তাই নয়, তিনি ড. সিংকে জাফনা সফরেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন৷ অর্থাৎ, ভারতের তামিল জনগণ এবং শ্রীলঙ্কার তামিল সম্প্রদায়ের মধ্যে মতের বৈপরীত্য স্পষ্ট৷ শ্রীলঙ্কার তামিল জনগণ গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রাদেশিক সরকার গঠন করেছে৷ বলা বাহুল্য, তামিল সম্প্রদায়ের স্বার্থে তাঁদের এ অবস্থান গুরুত্বপূর্ণ৷
তামিল সম্প্রদায়ের স্বার্থে তাঁদের অবস্থান বুঝিয়ে দিয়েছে যে, ইলম বা স্বতন্ত্র তামিল রাষ্ট্রের পক্ষপাতি নন তাঁরা৷ পরিবর্তে তাঁদের লক্ষ্য, বৃহত্তর প্রাদেশিক স্বশাসন, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উভয় স্তরে৷ তার মানে অবশ্য এই নয় যে, তামিল জনগণের ওপর শ্রীলঙ্কা সরকারের নৃশংসতা এবং অত্যাচার তাঁরা ভুলে গেছেন বা ক্ষমা করে দিয়েছেন৷ সেই ক্ষত রয়েছে মনের গভীরে৷ নরমে-গরমে সমঝোতার মধ্যে একটা ভারসাম্য রেখে শ্রীলঙ্কার তামিল সম্প্রদায় ধীরে ধীরে এগোতে চাইছে রাজনৈতিক কর্তৃত্ব হাসিল করার অভিষ্ট লক্ষ্যের দিকে৷ তামিল প্রাদেশিক সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকছেন মুখ্যমন্ত্রী বিঘ্নেশ্বরণ স্বয়ং৷ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, পরিবর্তিত রাজনৈতিক ভূমিগত বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং-এর কমনওয়েলথ শীর্ষ সম্মেলনে যোগ না দেয়াটা হবে ভুল সিদ্ধান্ত৷
কেন এই দ্বিধা? পৃথক তামিল রাষ্ট্রের দাবিতে এটিটিই নেতা প্রভাকরণের নেতৃত্বে আড়াই দশকব্যাপী শ্রীলঙ্কার তামিল গেরিলা এবং শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর মধ্যে গৃহযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাস৷ মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে সারা বিশ্ব সরব হয়৷ শ্রীলঙ্কার তামিলদের রক্তে-রাঙ্গা প্রেসিডেন্ট রাজাপাখসের আতিথ্য গ্রহণ করাটা হবে অন্যায়, অনুচিত, এই মর্মে তামিলনাড়ু বিধানসভায় সর্বদলীয় এক প্রস্তাব পাশ করা হয়েছে৷ মনমোহন সিং সরকারের সাবেক শরিক দল ডিএমকে-র সভাপতি করুণানিধি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী যদি কলোম্বো কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দেন, তাহলে আসন্ন সংসদীয় নির্বাচনে তার ফল ভুগতে হবে কংগ্রেসকে৷ মনমোহন সিং-এর অবস্থা এখন শ্যাম রাখি না কূল রাখি৷
কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে দিল্লির সম্পর্কের দিকটা কখনই উপেক্ষা করার নয়৷ এমনিতে দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের জটিলতা অস্বীকার করা যায় না৷ নেপাল ও ভূটানের চীনের দিকে ঝোঁকার একটা প্রবণতা আছে৷ মালদ্বীপ আর আগের মতো ভারতের বশংবদ নেই৷ পাকিস্তানের কথা বলা বাহুল্য৷ বাংলাদেশের সঙ্গে মৈত্রি এখন তিস্তা ও ছিটমহল ইস্যুতে প্রশ্নচিহ্নের মুখে৷ এই অবস্থায় শ্রীলঙ্কাকে চীনের দিকে ঠেলে দেয়া ভারতের পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতাকেই প্রতিপন্ন করবে৷ জয়ললিতা বা করুণানিধি নিজেদের নির্বাচনি গণভিত্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে তৎপর, পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই৷ কেন্দ্রীয় সরকার সেই পথে হাঁটতে পারে না৷