কমনওয়েলথ গেমসের সেরা পাঁচ
৫ আগস্ট ২০১৪সেরকম কিছু ঘটনা থেকেই ‘সেরা পাঁচ' বেছে নিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি৷ সেখানে স্বাভাবিক কারণেই বাংলেদেশের হয়ে শ্যুটার আবদুল্লাহ-হেল বাকীর একটি রূপা জয়, পাকিস্তানের প্রতিযোগীদের মাত্র তিনটি রূপা এবং একটি ব্রোঞ্জ পদক প্রাপ্তি, কিংবা ১৫টি সোনাসহ ৬৪টি পদক জিতে ভারতীয়দের পদকতালিকায় পঞ্চম হওয়ার বিষয় উঠে আসেনি৷ এসেছে ইউসেইন বোল্ট-এর আসর মাত করা, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশন সভাপতির হাস্যকর কাণ্ড এবং ছোট্ট দ্বীপদেশ কিরিবাতির এক ভারোত্তোলকের ‘নায়ক' হয়ে ওঠাসহ পাঁচটি মজাদার ঘটনা৷
১৷ ইউসেইন বোল্টের নাচ
পুরুষদের ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের বিশ্বরেকর্ডধারী জ্যামাইকান অ্যাথলেট ইউসেইন বোল্ট কমনওয়েলথ গেমসে এবারই প্রথম অংশ নিলেন৷ চোটের কারণে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ না নিয়ে নেমেছিলেন শুধু ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলেতে৷ তাঁর আকর্ষণে আসর শুরুর আগেই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল এ ইভেন্টের সব টিকিট৷ কিন্তু পদক জয়ের দৌড় শুরুর দিনে গ্লাসগোয় শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি৷ তারপরও হ্যাম্পডেন পার্কের গ্যালারির একটা আসনও শুন্য ছিল না৷ উপস্থিত দর্শকদের তুমুল করতালির মধ্যে প্রত্যাশিতভাবেই সোনা জিতে নেন বোল্ট৷ তবে কারো কারো কাছে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবে দৌড় শুরুর আগের কয়েক মিনিট৷ অন্যান্য প্রতিযোগীর মতো বোল্ট তখন গতানুগতিক নিয়ম মেনে ‘ওয়ার্মআপ' করেননি৷ গা গরম করতে স্কটিশ ব্যান্ড ‘দ্য প্রোক্লেইমারস'-এর গান ‘আ অ্যাম গনা বি'-র সুরে সুরে নেচে বেড়িয়েছেন ট্র্যাকে!
২৷ সবাই উগান্ডার পক্ষে
রাগবি সেভেনে এবার সোনা জিতেছে দক্ষিণ আফ্রিকা৷ কিন্তু দু'দিনের এ ইভেন্টে দর্শকরা সবচেয়ে বেশি উৎসাহ জুগিয়েছেন প্রত্যেকটি ম্যাচে গো-হারা হারা উগান্ডাকে৷ আফ্রিকার এই দেশটির খেলোয়াড়দের প্রেরণা জোগাতে দর্শকরা সারাক্ষণ ‘উগান্ডা', ‘উগান্ডা' বলে চেঁচিয়েছেন৷ কমনওয়েলথ গেমস আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান লর্ড স্মিথ বললেন, ‘‘উগান্ডা প্রায় প্রতি মুহূর্তেই নাস্তানাবুদ হচ্ছিল, অথচ গ্যালারির প্রায় সবাই ‘উগান্ডা', ‘উগান্ডা' বলে চিৎকার করছিল৷ এই হচ্ছে গ্লাসগো!''
৩৷ ‘ব্রেভহার্ট' ওয়ালেস
১৯টি সোনা জিতে পদক প্রাপ্তিতে চতুর্থ হয়ে এবার তাক লাগিয়ে দিয়েছে আয়োজক স্কটল্যান্ড৷ স্বাগতিকদের হয়ে সবচেয়ে বেশি পদক জিতেছেন ড্যান ওয়ালেস৷ একটি সোনা এবং দুটি রূপা জেতা এই সাঁতারু সবার নজর কাড়েন ৪০০ মিটার ইন্ডিভিজুয়েল মিডলের সোনা জিতে৷ জয় নিশ্চিত হবার পর ‘ফ্রিডম' বলে চিৎকার করে ওঠেন ড্যান৷ সেই থেকে তাঁর ডাকনাম হয়ে গেছে ‘ব্রেভহার্ট'৷ ভক্তদের কাছে ‘ব্রেভহার্ট', অর্থাৎ সাহসিহৃদয় হয়ে ওঠা ড্যান আসর শেষে কী বলেছেন, জানেন? বলেছেন, কমনওয়েলথ গেমসের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ, কারণ, এ আসর তাঁর নারীভক্ত বাড়িয়েছে!
৪৷ ব্যাটন হাতে ‘নাকাল'
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তটিই সম্ভবত এ আসরের সবচেয়ে হাস্যকর স্মৃতি হয়ে থাকবে সবার কাছে৷ ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাতে কমনওয়েলথ গেমসের বাণী মোড়ানো ব্যাটন তুলে দিতে গিয়ে কমনওয়েলথ গেমস ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট প্রিন্স টুংকু ইমরানের কী যে অবস্থা হয়েছিল! শত চেষ্টা করেও ভেতর থেকে লিখিত বাণী বের করতে পারছিলেন না৷ অবশেষে বাধ্য হয়ে স্কটল্যান্ডের কিংবদন্তী ক্রীড়াবিদ ক্রিস হয়-এর সহায়তা চনা প্রিন্স ইমরান৷ ছয়টি অলিম্পিক সোনা জেতা ক্রিস হয় না থাকলে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যে আরো কতক্ষণ থমকে থাকতো কে জানে৷
৫৷ শাবাশ কাটোয়াটাউ!
এক হিসেবে গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসের সেরা তারকা কিন্তু ইউসেইন বোল্ট নন, সেই মর্যাদা দেয়া উচিত ডেভিড কাটোয়াটাউকে৷ প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপদেশ কিরিবাতির এই প্রতিযোগী পদক জয়ের মহিমা এবং উদযাপনে বোল্টকেও ছাড়িয়ে গেছেন৷ দেশের ইতিহাসে প্রথম সোনাটি এসেছে তাঁর হাত ধরে৷ তাই ২০০ কেজি ‘ক্লিন অ্যান্ড জার্ক' ক্যাটেগরির সোনা জেতার পর কাটোয়াটাউ সত্যি সত্যিই আনন্দে ভাসছিলেন৷ এত ওজন তোলার পর ভারোত্তোলকরা সাধারণত হাত তুলে উল্লাস প্রকাশ করার পর ক্লান্ত পায়ে মঞ্চ ছাড়েন৷ কিন্তু কাটোয়াটাউ ইতিহাসে নাম লেখানোর আনন্দে মঞ্চ ছাড়ার সময়টায় শুধু নেচেছেন৷
এসিবি/ডিজি (এএফপি, এপি)