কংগ্রেসে নেতৃত্বের সংকট?
২৪ জুলাই ২০১৪বছরের শেষ নাগাদ তিনটি রাজ্যের বিধানসভা ভোটেও নেতৃত্বহীনতার আঁচ পড়বে বলে অনেকে মনে করছেন৷ পুব থেকে পশ্চিম ভারতের পাঁচটি রাজ্যে কংগ্রেসের নেতৃত্বের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের প্রত্যক্ষ অভিঘাতে৷ দল কার্যত আজ দিশাহীন৷ তারই জেরে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে দলের মধ্যে বিদ্রোহ৷ নেতাকর্মীদের মধ্যে বেড়েছে দলত্যাগের হিড়িক৷ এটা বাড়তে পারে এ বছরের শেষ নাগাদ মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনের মুখে৷
এই প্রবণতায় মনে হয় দলের গান্ধী-পরিবারের হাইকমান্ডের নিয়ন্ত্রণ ক্রমশই যেন শিথিল হয়ে পড়ছে৷ আসামে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগই মন্ত্রিসভার শিক্ষা ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বাস শর্মা রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে রাজ্যে নেতৃত্ব বদলের দাবি জানান৷ মুখ্যমন্ত্রীর ওপর অনাস্থা জানাতে ২৬ জন বিদ্রোহী বিধায়ককে নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাঁর হাতে এক স্মারকলিপি দেন৷ হেমন্ত শর্মা বলেন, সংসদীয় নির্বাচনে কংগ্রেস রাজ্যে পেয়েছে মাত্র তিনটি আসন৷ নেতৃত্ব বদল না হলে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যে দলের অস্তিত্বে টান পড়বে যদি না দলের হাই কমান্ড এর বিহিত করে৷
পশ্চিমবঙ্গে তিনজন বিধায়ক কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে যোগ দেন শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসে৷ এদের মধ্যে একজন বিধানসভায় কংগ্রেসের মুখ্য সচেতক বা চিফ হুইপ অসিত মাল৷ অপর দুজন হলেন উমাপদ বাউরি ও গুলাম রাব্বানি৷ অসিত মাল আভাস দেন, আরো কিছু বিধায়ক কংগ্রেস ছাড়ার জন্য পা বাড়িয়ে আছে৷ এই প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মন্তব্য, নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্যই তাঁরা দল ছেড়েছেন৷ কংগ্রেস এক বিরাট সংগঠন৷ দু-চারজন দল ছাড়লে কিছু যায় আসেনা৷
মহারাষ্ট্রেও কংগ্রেসের একই অবস্থা৷ রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী নারায়ণ রানে রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চৌহানকে অপসারণের দাবিতে৷ বলেছেন, রাজ্যে নেতৃত্ব বদল না হলে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে দলের ভবিষ্যৎ অন্ধকার৷ দলের মধ্যে প্রকাশ্য বিদ্রোহ বিধানসভা ভোটে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, সেটা আংশিক স্বীকারও করেছে দলের একটা বড় অংশ৷ রানের জনভিত্তি মহারাষ্ট্রের কোঙ্কন এলাকায়৷ ২০০৫ সালে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন৷ কিন্তু সেই থেকে তাঁর লক্ষ্য মুখ্যমন্ত্রীর গদি৷
বিধানসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রী বদল করাটা দলের পক্ষে উচিত হবে না৷ কংগ্রেস হাইকমান্ড তাই এই ধরনের ব্যক্তিগত উচ্চাকাঙ্ক্ষার দাবির কাছে মাথা নত করবে না বলে জানিয়েছে৷ পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, রানের দাবিতে কান না দিলে রানের সামনে দুটো পথ খোলা৷ সরাসরি হয় বিজেপি-তে, না হয় মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা দলে যোগ দেয়া৷ মহারাষ্ট্রে সংসদীয় নির্বাচনে বিজেপি বিরাট সাফল্য পাবার পর থেকেই বিজেপিতে যাবার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন রানে৷
জম্মু-কাশ্মীরে প্রবীণ কংগ্রেস নেতা দুবারের সাংসদ চৌধুরী লাল সিং দল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স দলে, কংগ্রেস- ন্যাশনাল কনফারেন্স জোট ভেঙে যাবার দুদিন পরেই৷ তাঁর অভিযোগ, দলে নিয়ম নীতির বালাই নেই৷ কংগ্রেসের ওজনদার নেতা গুলাম নবি আজাদ ছলচাতুরি করে তাঁকে সরিয়ে রাজ্যের উধমপুর আসনে নিজে দাঁড়ান গত সংসদীয় নির্বাচনে৷
দলের ভাঙন ঠেকাতে কংগ্রেসের মধ্যে চিন্তন শিবিরের কথা উঠছে৷ সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্টনির নেতৃত্বে সংসদীয় নির্বাচনে দলের বিপর্যয়ের কারণ বিশ্লেষণ এবং দলকে পুনরুজ্জীবিত করার উপায় বাতলাতে এক কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ দলকে বাঁচাতে সেকেলে ধ্যানধারণা থেকে বেরিয়ে নতুন কর্ম কৌশল স্থির করতে হবে কংগ্রেসকে যেটা করতে পেরেছে বিজেপি৷