1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ওমানে নারী গৃহকর্মীরা সংকটে

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৩ জুলাই ২০১৬

ওমানে বাংলাদেশের নারী গৃহকর্মীরা চরম নির্যাতন আর আবমাননার মধ্যে আছেন৷ তাঁদের সঙ্গে ক্রীতদাসের মতো আচরণ করা হয়৷ অনেকেই সেখানে আটক বা ‘বন্দি' আছেন ৷ দেশে ফিরতে চাইলেও ফিরতে পরছেন না৷

https://p.dw.com/p/1JOJn
ভারতের এক গৃহকর্মী
ছবি: DW

যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য দিয়েছে৷ বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিকারীদের সংগঠন – বায়রার সাবেক মহাসচিব আলি হায়দার চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘সরকারে উচিত হবে দ্রুত তাদের আইনগত সহায়তা দিয়ে দেশে ফেরত আনা৷''

এইচআরডাব্লিউ কাতারে অবস্থানরত বাংলাদেশি কয়েকজন নারী গৃহকর্মীর সাক্ষাত্‍কারও প্রকাশ করেছে৷ তাঁদের একজন আসমা ২০১৫ সালের মে মাসে আরব আমিরাতে যান৷ তিনি জানান, তাঁর রিক্রুটিং এজেন্ট তাঁকে একজন ওমানি ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন, এরপর তাঁর পাসপোর্ট আটকে রেখে ওমানে নিয়ে যান৷ সেখানে তাঁর বাড়িতে দিনে ২১ ঘন্টা কাজ করতে বাধ্য করা হতো, ঠিক মতো খাবার দেয়া হতো না এবং যৌন হয়রানি করা হতো৷ আসমাকে সেখানে এক টাকাও বেতন দেয়া হয়নি৷ ওই ওমানি ব্যক্তি আসমাকে জানায়, সে ১ হাজার ৫৬০ রিয়েল (৪ হাজার ৫২ ডলার) দিয়ে তাঁকে (আসমা) কিনেছে৷ এখান থেকে মুক্তি চাইলে সেই টাকা আসমাকে দিতে হবে৷

আরেক বাংলাদেশি গৃহকর্মী বাবলি জনিয়েছেন, তাঁকে ওমানে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে৷ তাঁর কোনো সাপ্তাহিক ছুটি ছিল না৷ বসার সময় পর্যন্ত ছিল না৷ তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন, সেখানকার মালিক সবসময় তাঁকে গালাগালি করতো বলেও জানিয়েছেন বাবলি৷

আলী হায়দার চৌধুরী

পারভীন জানিয়েছেন, ওমানের বন্দর নগরী সোহারে কাজ করতেন তিনি৷ সেখানে ১৬ মাস কাজ করেছেন৷ প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করতে হতো৷ তাঁকে প্রতিমাসে মাত্র ৫০ ওমানি রিয়েল (১৩০ ডলার) দেওয়া হতো৷

আরেক বাংলাদেশি গৃহকর্মী মমতা জানান, তিনি যে বাড়িতে কাজ করতেন সেখানকার মালিক তাঁকে মারধর করতেন৷ তিনি পুলিশের কাছেও এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলেন৷ কিন্তু পুলিশ তাঁকে আবার ওই মহিলার কাছেই ফেরত পাঠিয়েছিল৷ এরপর তাঁকে তালাবদ্ধ করে রাখতেন ওই মহিলা৷ একবার তাঁকে আট দিন ধরে একটি রুমে বন্দি করে রাখা হয়েছিল৷ তখন তাঁকে খেজুর পাতা এবং পানি ছাড়া আর কিছু খেতে দেওয়া হয়নি৷

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এ রকম ৫৯ জন অভিবাসী গৃহকর্মীর সাক্ষাত্‍কার নিয়েছে৷ তাঁদের অনেকেই বলেছেন যে, তাঁদের পাচার করে জোর করে কাজে বাধ্য করা হচ্ছে৷ তাঁদের কর্মক্ষেত্রের মালিকরাও বলেছেন, তাঁদের তারা কিনে নিয়েছেন৷

বুধবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, ওমানে ১ লাখ ৩০ হাজার বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন৷ ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ইথিওপিয়াসহ এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে নারী গৃহকর্মীরা উন্নত জীবনের আশায় মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করতে যান৷

তাঁদের মধ্যে কিছু কর্মী বাস্তবে একটি ভালো কাজের সন্ধান পেলেও বাকিরা চরম অমানবিক অবস্থায় কাজ করতে বাধ্য হন৷

ওমানের কাফালা পদ্ধতির কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের হয়রানি ও নির্যাতনের সুযোগ পান মালিকরা৷ ওমানের অনেক বাড়িতে বিদেশি গৃহকর্মীরা বন্দি রয়েছেন৷ দাসত্ব যৌন নির্যাতন, মারধর, বেতন না দেয়ার মতো অনেক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তাঁরা৷

বায়রার সাবেক মহাসচিব আলি হায়দার চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে জানান, এখানে দু'ধরণের সমস্যা রয়েছে৷ এক শ্রেণির গৃহকর্মী আছেন যাঁরা প্রশিক্ষণ ছাড়াই সেখানে গিয়েছেন৷ ফলে তাঁরা সেখানকার কাজে খাপ খাওয়াতে না পেরে দেশে ফিরতে চাইছেন৷ আর আরেক অংশ আসলেই নির্যাতন, যৌন নির্যাতন এবং বেতন না পাওয়ার ঘটনার শিকার হচ্ছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘এই নারী গৃহকর্মীদের অপরিকল্পিতভাবে সেখানে পাঠানো হয়েছে৷ ফলে এই অমানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ যাঁরা অভিযোগ করছেন তাঁদেরও আটক রাখা হচ্ছে, কারণ, অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তাঁদের সেখানে রাখা হচ্ছে৷''

বায়রার সাবেক মহাসচিব আরো বলেন, ‘‘সরকারের উচিত হবে দূতাবাসের মাধ্যমে আইনি সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশের যেসব গৃহকর্মী নির্যাতিত হচ্ছেন, আটক আছেন তাঁদের দেশে ফেরত আনা৷''

তিনি আরো বলেন, ‘‘গৃহকর্মীদের ২০ ঘণ্টা মালিকের বাড়িতে না রেখে কাজ শেষে তাঁরা যাতে ডরমিটরিতে থাকতে পারেন, সেই ব্যবস্থার দিকে যেতে হবে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য