1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এক শিক্ষিত কুকুর – জানে ১ হাজার শব্দ

২৫ জানুয়ারি ২০১১

কুকুরের কাজ কুকুর করেছে! কিন্তু কী করেছে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক কুকুর চিনে ফেলেছে এক হাজারেরও বেশী শব্দ৷ কী করে সম্ভব হলো তা?

https://p.dw.com/p/102OH
যুক্তরাষ্ট্রের এক কুকুর চিনে ফেলেছে এক হাজারেরও বেশী শব্দছবি: AP

সারমেয় গোষ্ঠীর এই শিক্ষিত সদস্যটির নাম চেজার৷ মাদি কুকুরটির মালিক জন পিলে নামের এক ব্যক্তি৷ প্রায় তিন বছর আগে এক বুদ্ধি আঁটেন তিনি৷ অবশ্য আইডিয়াটি তিনি পেয়েছিলেন ২০০৪ সালে, যখন সংবাদপত্রে বেরিয়েছিল একটি জার্মান কুকুরের বিদ্যাজ্ঞানের খবরটি৷ রিকো নামের জার্মান ঐ কুকুরটি ২০০ শব্দ চিনতো৷ তার সামনে সেই শব্দ উপস্থাপন করা হলেই সেটি নিয়ে আসতো সে৷ দারুণ মজার তাই না! তাহলে চেজারের প্রভু আর বসে থাকেন কি করে! তাই তিনি যোগাড় করলেন নানা তথ্য উপাত্ত৷ পড়তে শুরু করলেন কুকুর বিদ্যা নিয়ে৷ এ নিয়ে তাঁকে সহায়তায় এগিয়ে আসে ওর্ফড কলেজের মনোবিদ্যার অধ্যাপক অ্যালিস্টন রিড এবং তাঁর সঙ্গীরা৷ সেই কলেজে একই বিষয়ে ৩০ বছর যাবত শিক্ষকতা করেছেন কুকুরটির মালিক জন৷

Bill Clintons Hund Buddy gestorben
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তাঁর কুকুর বাডিছবি: AP

চেজার হচ্ছে সারমেয় জাতির মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত বর্ডার কোলি জাতের – শক্তি এবং বুদ্ধিতে যারা অন্যদের চেয়ে বেশ এগিয়ে৷ ২০০৪ সালেই তিনি চেজারকে সেই ছেলেবেলায় নিয়ে এসেছিলেন স্থানীয় একটি কুকুর বিক্রি কেন্দ্র থেকে৷

খুব ভোর বেলা বের হয়ে পড়তেন জন৷ ঝিঁঝিঁ ডাকা ভোরে ৷ এরপর ক খ পড়াবার মতো তাকে নিয়ে দৈনিক পাঁচ ঘণ্টা করে কাগজ কলম আর খেলনা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যান জন৷ কি করে সে শিখলো সে এত শব্দ? বিষয়টি কঠিন৷ জন ও তার সাথিরা একটি খেলনা নিয়ে টানা ৪০ মিনিট কিংবা তারও বেশী সময় সেটির নাম উচ্চারণ করতো চেজারের সামনে৷ এরপর খেলনাটি লুকিয়ে রেখে চেজারকে বলা হতো ...যাও তো খুঁজে নিয়ে এসো অমুক খেলনাটি৷ প্রভুর কথা তো আর ফেলতে পারতো না সে, তাই খুঁজে আনতো সেটি৷ এভাবেই শুরু৷ প্রতিদিন ওর জন্য বরাদ্দ ছিল একটি শব্দ৷ আর অবশ্যই এ শব্দগুলো খেলনার নাম৷ আসলে মানবসম্প্রদায়ের শিশুদের যে কৌশলে শব্দ শেখানো হয়, অনেকটা সেই কৌশলই প্রয়োগ করেছিলেন তারা৷

আস্তে আস্তে দেখা গেলো চেজার খুবই মেধাবী আর অনুগত ছাত্র৷ এমনিতেই চেজার যে জাতের, তারা অন্য কুকুরের চেয়ে বেশী কাজ করতে পারে৷ অন্য কুকুরের চেয়ে মনিবের কথাও শোনে বেশী৷ একেবারে প্রভুভক্ত কুকুর!

পরিকল্পনার প্রথমেই ছিল চেজারকে শিখতে হবে জার্মান কুকুরটির চেয়ে বেশী শব্দ৷ বিয়াল্লিশ বছর বয়সী জন বলছেন, ‘‘আমি ওকে শিখিয়েছি৷ এ জন্য তিন বছর সময় লেগেছে৷ এই তিন বছরে ও শিখেছে ১ হাজার ২২টি শব্দ৷''

চেজারকে শেখাবার জন্য স্যালভেশন আর্মির দোকান থেকে বাচ্চাদের ব্যবহৃত খেলনা যোগাড় করতেন জন৷ তিনি জানালেন, সব খেলনার নাম মনে রাখা হয়তো ওর জন্য কষ্টকর৷ আর তাই ওকে শেখাবার সময় বিভিন্ন খেলনার নাম বিভিন্ন রঙের মোটা কলম দিয়ে লেখা হতো৷ তার খেলনাগুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন প্রাণী, মাছ এবং বল৷

এক হাজার শব্দ শেখানোর পর চেজারের মালিক জন চিন্তা করলেন, এবার কী করা যায়৷ মাথায় চিন্তা এলো, ‘‘ওকে কি ব্যাকরণ শেখানো সম্ভব! কারণ, কুকুরটি এই যেমন, প্রাণী কিংবা বল অথবা অন্য কিছু, কোনটা কোন দলের – তা বুঝতে পারে৷'' আর তাই ব্যাকরণের মতো খটোমটো বিষয়ে চিন্তা করছিলেন তিনি৷ অবশ্য এ নিয়ে বেশি দূর এগোননি তিনি৷

আপাতত ১০২২ শব্দ নিয়েই ক্ষান্ত রাখা হয়েছে চেজারকে৷ হাজারো জিনিসের মাঝে যদি চেজারকে নাম উচ্চারণ করে বলা হয়, ‘ওটা নিয়ে এসো তো', তখন দে ছুট৷ আর একটু পরেই তাকে দেখা যাবে সেটি ওর মুখে!

‘‘চেজার খুব ভালোবাসে খেলতে৷ এখন তাকে কিছু শেখানো হচ্ছে না৷ কিন্তু এই সময়েও সে প্রতিদিন সকালে উঠে বাইরে বেরোবার আব্দার করবে৷ বাইরে গিয়ে কিছু শেখার জন্য ব্যাকুল ভাবে তাকাবে, আমাকে ডাকবে৷ আর প্রতিদিন চার-পাঁচ ঘণ্টা সে থাকতে চাইবে আমার সঙ্গে'' – জানালেন জন৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন