1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

একমাসের বাচ্চা নিয়ে আগরতলায় যান মুক্তিযোদ্ধা ফৌজিয়া

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১১

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আগরতলার নাম বহুবার এসেছে এবং আসবে৷ সেই আগরতলার একটি ক্যাম্পে মুক্তিযুদ্ধের সময় চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন ডা. ফৌজিয়া মুসলেম৷ মাত্র এক মাস বয়সের সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ক্যাম্পে গিয়েছিলেন৷

https://p.dw.com/p/12Ymu
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরছবি: Gerhard Klas

১৯৭১ সালে মে মাসের ৫ তারিখে আগরতলায় পাড়ি জমান ডা. ফৌজিয়া মুসলেম৷ আর তাঁর মেয়ে জন্ম নিয়েছিল এপ্রিলের ২ তারিখে৷ অর্থাৎ কোলে তখন এক মাস তিন দিন বয়সি সন্তান৷ স্বাভাবিকভাবেই একজন মা চাইবেন তার পুরো সময়টা বাচ্চাকে দিতে৷ কিন্তু সবসময় যে হিসেব মতো কাজ হবে তা তো আর নয়৷ ফলে ঐ দুধের বাচ্চাকে ঘরে রেখেই সম্ভাব্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা দিতেন ডা. মুসলেম৷

ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা৷ নারী অধিকার নিয়ে ছিলেন সোচ্চার৷ তাই ঊনসত্তর সালে ডাক্তারি পড়া শেষে কয়েকজন মিলে তৈরি করেছিলেন মহিলা সংগ্রাম পরিষদ৷ এরপর একাত্তর সালে যুদ্ধ শুরু হলে মহিলাদের উদ্বুদ্ধ করেছেন যুদ্ধে অংশ নিতে৷ ফৌজিয়া মুসলেম বলেন, ‘‘আমরা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে যেসব মহিলাদের যুক্ত করেছিলাম তাদেরকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে রাখতে এমনকি যুদ্ধে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলাম৷''

তিনি বলেন, ছোট্ট বাচ্চা থাকার কারণে হয়তো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেয়াটা হয়নি৷ তবে চেষ্টা করেছেন পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অংশ নিতে৷ এজন্যই চলে গেছেন আগরতলায়৷ দিয়েছেন সম্ভাব্য মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা৷ এছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম জোগাড়ের কাজও করতে হয়েছে তাঁকে৷ আরও যে কাজটি করেছেন সেটা হচ্ছে আগরতলার নারীদের মধ্যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সমর্থন গড়ে তোলা৷ ফলে যেটা হয়েছে সেটা হচ্ছে, আগরতলার স্থানীয় মানুষ বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে৷

Bangladesh Unabhängigkeitsbewegung
ছবি: Public domain

কিন্তু কীসের জন্য এত কষ্ট? যে উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করা তা কি পূরণ হয়েছে বা হচ্ছে? উত্তরে ডা. মুসলেম বলেন একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন ও প্রগতিশীল বাংলাদেশ পাবেন এই আশা ছিল তাঁর৷ কিন্তু সেই উদ্দেশ্য পূরণের আগেই সেটা আবারও বাধাগ্রস্ত হয়েছে ১৯৭৫ সালে, মন্তব্য এই মুক্তিযোদ্ধার৷

তবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী ডা. মুসলেম৷ তিনি বলেন, বর্তমান বা আগামীতে যে প্রজন্ম আসছে তারা একটা উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে বলে মনে করেন তিনি৷

বর্তমানে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়শনের স্বাস্থ্য উন্নয়ন প্রকল্পের রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের প্রধান হিসেবে কাজ করছেন ডা. মুসলেম৷ তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় পাওয়া হচ্ছে, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বিশ্বে বাংলাদেশের পরিচিতি৷ এই দেশে গণতন্ত্রের কথা বলা যাচ্ছে, স্বাধীনভাবে সংস্কৃতি চর্চা করা যাচ্ছে এজন্য সুখী তিনি৷

যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যাপারে এই মুক্তিযোদ্ধা সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিলেন৷ তিনি বলেন, বিষয়টা খুব একটা সহজ নয়৷ কেননা যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমা করে দেয়ার পরই ৭৫'এর ঘটনা ঘটেছিল৷ তাই এবার বিচারের পর সম্ভাব্য কী হতে পারে সেসব চিন্তা করেই এগোনো উচিত৷ ডা. মুসলেম বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধের বিচার হতেই হবে৷ তবে আমরা আশা করি, যারা এই কঠিন দায়িত্বে আছেন তারা বিচার পরবর্তী সম্ভাব্য বিষয়গুলোর ব্যাপারে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেই সব কাজ শেষ করবেন''৷

প্রতিবেদন: জাহিদুল হক

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক