1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উপোসেই উপশম!

১৩ এপ্রিল ২০১৪

ওষুধে নয়, পথ্যে নয়, নিয়ম মেনে উপোসেই নিরাময় ঘটবে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, বাত, বদহজম, এমনকি বিষণ্ণতার! তাই ইউরোপের সবচেয়ে ধনী দেশ জার্মানির অনেক স্বচ্ছল ব্যক্তিই এখন সুস্থ জীবনের জন্য ‘উপোস চিকিৎসায়’ ঝুঁকছেন৷

https://p.dw.com/p/1Bgr9
ওষুধে নয়, পথ্যে নয়, নিয়ম মেনে উপোসেই নিরাময় ঘটবে হৃদরোগ, শ্বাসকষ্ট, বাত, বদহজম, এমনকি বিষণ্ণতার!ছবি: picture-alliance/dpa

জার্মানিতে তাঁদের জন্য গড়ে উঠেছে বহু ক্লিনিক, রোগীকে যত্নআত্তি করার বদলে কড়া নিয়মে উপোসে রাখার বিষয়ে যারা বিশেষজ্ঞ৷ এমনকি উপোসের জন্য আছে বীমার ব্যবস্থাও৷

৫৭ বছর বয়সি মিশায়েল ফান আল্মজিক গত দুই দশক ধরে প্রতি বছর একটি মাস কাটান সুইজারল্যন্ড সীমান্তে অবস্থিত লেক কনস্ট্যান্সের তীরে বুখিংগার-ভিলহেল্মি ক্লিনিকে৷

ওই একমাস তাঁর দিন শুরু হয় কেবল এক কাপ হারবাল চা দিয়ে৷ দুপুরে শুধুমাত্র ফলের রস৷ বিকালে দুই ঘণ্টা হাঁটার পর নৈশভোজে পাতলা ঝোল আর একটুখানি মধু৷ আর হ্যাঁ, এই খাবার হজম করতে তিনি সারাদিনে পান করেন কম করে হলেও দুই লিটার পানি৷

Galerie Fastenzeit Heilfasten
ছবি: picture-alliance/dpa

মিশায়েল মিউনিখে একটি পিআর ফার্ম চালান৷ এই ক্লিনিকে তিনি প্রথম এসেছিলেন মুটিয়ে যাওয়া নিজে থেকে ঠেকাতে না পেরে৷ কিন্তু প্রশ্ন হলো, বছরে একমাস প্রায় অভুক্ত থেকে কী উপকার হচ্ছে? মুচকি হেসে মিশায়েলের উত্তর, ‘‘এক সপ্তাহ করে দেখুন, মাত্র একটা সপ্তাহ, নিজেই বুঝতে পারবেন৷''

একই ভাবে হাইপারটনশনের চিকিৎসা চলে এ ক্লিনিকে৷ এ ধরনের রোগীদের দিনে ২০০ থেকে ২৫০ ক্যালরির বেশি খাওয়া মানা৷ একজন মধ্যবয়সি ব্যক্তিকে সাধারণত দিনে যে পরিমাণ খাবার খেতে বলা হয়, হাইপারটনশনে খেতে হবে তাঁর এক দশমাংশ৷

উপোসের জন্য খরচ কিন্তু মোটেও কম নয়৷ এ ধরনের একটি ক্লিনিকের মোটামুটি একটি ঘরে ১০ দিন থাকলে গুণতে হয় প্রায় আড়াই হাজার ইউরো৷ বেশি সুযোগ সুবিধা চাইলে খরচও বাড়ে৷

নয়নাভিরাম লেক কনস্ট্যান্সের তীরে যার নামে বুখিংগার-ভিলহেল্মি ক্লিনিক, সেই ওটো বুখিংগার উপসোর পথ বেছে নিয়েছিলেন গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়ার আশায়৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯১৭ সালে ওই রোগেই তাঁকে নৌ-বাহিনীর চিকিৎসকের চাকরি ছাড়তে হয়েছিল৷ প্রায় একশ বছর পর তাঁর সেই ‘উপোস চিকিৎসা' পুরো জার্মানিতেই এখন দারুণ জনপ্রিয়৷

স্পেনের মারবেলা এলাকার উবেরলিংগেন ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফ্রাঁসোয়া ভিলহেল্মি দে টলেডোর দাবি, উপোস মানবদেহের ‘নিজস্ব সঞ্জীবনী শক্তিকে' জাগিয়ে তোলে৷

এই ক্লিনিকের প্রধান চিকিৎসক স্তেফান দ্রিনদা জানান, মারবেলায় তাদের শাখাটি চলছে গত ৪০ বছর ধরে৷ প্রতি বছর তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগী পাচ্ছেন তারা৷ এর মানে হলো, এ পর্যন্ত আড়াই লাখ রোগীকে ‘উপোস চিকিৎসা' দিয়েছে উবেরলিংগেন ক্লিনিক৷

জার্মানিতে এ পদ্ধতির জনপ্রিয়তার কারণে প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ‘ডের স্পিগেল' ২০১১ সালে একটি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদন করে উপোস চিকিৎসা নিয়ে৷ ওই প্রতিবেদনে উবেরলিংগেন ক্লিনিকের সাবেক কর্মী হেলমুট ল্যুয়েৎসনারের লেখা উপোস বিষয়ক একটি বইয়ের কথা বল হয়, যেটি সেই ১৯৭০ এর দশকে ২০ লাখ কপি বিক্রি হয়েছিল৷

এসেন, ইয়েনা ও বার্লিনের মতো শহরে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে উপোস নিয়ে গবেষণা হয়, এমনকি এ চিকিৎসা পদ্ধতির প্রশিক্ষণও দেয়া হয়৷

এত জনপ্রিয়তার পরও বিশেষজ্ঞদের সতর্কবাণী হলো – উপোস যদি করতেই হয়, তা অবশ্যই কোনো চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে করা উচিত৷ এছাড়া স্বাস্থ্যে কতেটা পরিবর্তন এলো – তাও পরীক্ষা করাতে হবে নিয়মিত৷

জেকে/ডিজি (এএফপি, এপি)