আরও জার্মান অস্ত্র
১০ আগস্ট ২০১৩জার্মান সরকার ২০১৩ সালে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের ছয়টি দেশে প্রায় ৮১ কোটি ৭০ লক্ষ ইউরো মূল্যের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির ছাড়পত্র দিয়েছে৷ সরকার স্বেচ্ছায় এই তথ্য প্রকাশ করেনি৷ বামপন্থি দলের এক সাংসদের প্রশ্নের উত্তরে অর্থনীতি মন্ত্রণালয় এ কথা জানিয়েছে৷ ফলে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র রপ্তানিকারী দেশ হিসেবে জার্মানি নতুন রেকর্ড-এর পথে এগোচ্ছে৷ কারণ জার্মানির নিরাপত্তা পরিষদ তাদের গোপন বৈঠকে এ সব দেশকে ১৪০ কোটি ইউরো মূল্যের অস্ত্র রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে৷ বছরের প্রথমার্থেই এই সব সিদ্ধান্তের ফলে উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের সদস্য বাহরাইন, কাতার, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত জার্মানি থেকে আধুনিক সামরিক সরঞ্জাম কিনতে পারবে৷ ক্ষুদ্র রাষ্ট্র কাতারই সাড়ে তেষট্টি কোটি ইউরো মূল্যের অস্ত্র কিনছে৷
তবে এ সব দেশে ঠিক কোন অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করা হচ্ছে বা তার সংখ্যাই বা কত, সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি৷ সেটা জানতে আগামী বাৎসরিক রিপোর্ট প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে৷ তবে সংবাদ মাধ্যমের সূত্র অনুযায়ী কাতার ৬২টি ‘লেপার্ড ২' সাঁজোয়া গাড়ি পাচ্ছে৷
মানবাধিকার নিয়ে দুশ্চিন্তা
জার্মানির বামপন্থি দল ‘ডি লিংকে'-র প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ ইয়ান ফান আকেন সরকারের অস্ত্র রপ্তানি নীতির তুমুল সমালোচনা করেছেন৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, দাবি করা হয় যে জার্মানির অস্ত্র রপ্তানি সংক্রান্ত নীতিমালা নাকি খুবই কড়া৷ কোনো দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিও নাকি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ এক মানদণ্ড৷ অথচ পররাষ্ট্র নীতি সংক্রান্ত স্বার্থ দেখিয়ে প্রায়ই বাকি নিয়মের তোয়াক্কা করা হয় না৷ তিনি আরও মনে করিয়ে দেন, যে পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলির মানবাধিকার পরিস্থিতি মোটেই প্রশংসার যোগ্য নয়৷
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশানাল-এর সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী কাতারে বন্দিদের নিপীড়ন, নারীদের অধিকারের অবমাননা, মত প্রকাশের অধিকার খর্ব করার নানা ঘটনার উল্লেখ রয়েছে৷
সৌদি আরবের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ৷ সে দেশে বন্দিদের উপর ঢালাও শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছে অ্যামনেস্টি সহ একাধিক সংগঠন৷ অথচ জার্মানি চলতি বছরেই এখনো পর্যন্ত ১১ কোটি ৮০ লক্ষ ইউরো মূল্যের অস্ত্র রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে৷ জার্মান অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের প্রতি সৌদি আরবের আগ্রহ বেড়েই চলেছে৷
মিশরকে আপাতত কোনো অস্ত্র নয়
সৌদি আরব ও কাতারের মতো স্বৈরতান্ত্রিক দেশে জার্মান অস্ত্র রপ্তানিকে ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই৷ ২০১১ সালের শুরুতে প্রতিবেশী দেশ বাহরাইনে গণবিদ্রোহ দমন করতে দুই দেশই সৈন্য ও সাঁজোয়া গাড়ি পাঠিয়েছিল৷ সৌদি কর্তৃপক্ষ দেশের মধ্যেও কড়া হাতে প্রতিবাদ দমন করে থাকে৷ জার্মান সাংসদ ফান আকেন-এর মতে, যে সব কারণে তালেবান-এর সমালোচনা করা হয়, সে সব কারণ সৌদি আরবের ক্ষেত্রেও খাটে৷
এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে জার্মান অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ফিলিপ ব়্যোসলার বলেন, জার্মান সরকার অস্ত্র রপ্তানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট দায়িত্বশীল আচরণ করে থাকে৷ যেমন মিশরের অশান্ত পরিস্থিতির কারণে সে দেশকে আপাতত কোনোরকম অস্ত্র বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে সার্বিক নীতির যে ব্যতিক্রম ঘটছে না, তা বলা কঠিন৷