কেউ যেন হত্যার অধিকার না পায়
১৩ মার্চ ২০১৭রাজধানীর মালিবাগে নির্মাণাধীন উড়ালসড়কের (ফ্লাইওভার) গার্ডার পড়ে একজন নিহত ও দু'জন আহত হয়েছেন৷ রোববার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে৷ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ইতিমধ্যে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের খবর জানিয়ে দায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছেন৷
ঘটনার অব্যবহিত পরে দায়িত্বশীলদের এমন আশ্বাস নতুন কিছু নয়৷ কত আশ্বাসই তো গালভরা বুলি হয়ে ভুক্তিভোগীদের অনিঃশেষ ক্রন্দন আর সমালোচকদের হাসির খোরাক হয়েছে৷ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সাগর-রুনির হত্যাকারীদের পাকড়াও করার আশ্বাস তো এখন দেশের রাজনীতির অঙ্গনে ‘ক্লাসিক জোক'! ফ্লাইওভার বিষয়ক আশ্বাসও যেন সেরকম না হয়৷ জনমনে সেরকম আশঙ্কা কিন্তু ইতিমধ্যে উঁকিঝুঁকি মারতে শুরু করেছে৷
বিশেষ করে মালিবাগ ফ্লাইওভার যে স্বস্তির বদলে ভোগান্তি হতে চলেছে, এমন আশঙ্কার কথা তো অনেকদিন ধরেই শুনছিলাম৷ গণমাধ্যম কতভাবেই তো সেকথা জানিয়েছে৷ কিন্তু সংশ্লিষ্টরা কি তা এতকাল শুনেছেন?
৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই উড়ালসড়কের নকশাতেই রয়েছে বড় রকমের ভুল৷ বিদেশি প্রকৌশলী নকশা করেছেন গাড়ির বাঁ দিকে স্টিয়ারিংয়ের কথা মাথায় রেখে৷ অথচ বাংলাদেশের সব গাড়িতেই স্টিয়ারিং থাকে ডান দিকে৷
স্বাভাবিক কারণেই দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেশি ছিল৷ বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটেছেও৷ গত সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কয়েদি নিয়ে গাজীপুরের কাশিমপুরে যাওয়ার সময় উল্টে যায় পুলিশের প্রিজন ভ্যান৷অবশেষে একজনের প্রাণ কেড়ে নিলো সেই উড়ালসড়ক৷
তারপরও কি সড়ক যোগাযোগে উন্নতির প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে কিছু লোককে জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সুযোগ দেয়া বন্ধ হবে? দল-মত নির্বিশেষে সবার কামনা, তা-ই যেন হয়৷
অথচ চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক সময়েই নেয়া হয়েছে জনজীবনকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়ার মতো সিদ্ধান্ত৷ র্যাম্প এবং লুপ ছাড়াই আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ৷ কর্তৃপক্ষ বলছে, এটা নাকি পরীক্ষামূলক পদক্ষেপ৷ মানুষের জীবন নিয়ে যেখানে সামান্যতম ঝুঁকির শঙ্কা রয়েছে, সেখানে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলতে পারে না এটা তাদের কে বোঝাবে!
অথচ পাঁচ বছর আগে চট্রগ্রামের বহদ্দারহাটেই ফ্লাইওভারের গার্ডার ভেঙে মারা গিয়েছিল ১৫ জন৷ ২৩ জন মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করেছিল৷দায়ীরা কিন্তু এখনো শাস্তি পায়নি৷
এমন দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে দায়ীদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে শাস্তির আওতায় আনা খুব জরুরি৷ ফ্লাইওভার নির্মাণের নামে হত্যার অধিকার যেন কেউ না পায়৷