1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উগান্ডায় সশস্ত্র হামলার শিকার প্রতিবন্ধীদের দুরবস্থা

১৭ মে ২০১১

২২ বছর ধরে উত্তর উগান্ডায় সরকার বিরোধী সশস্ত্র হামলায় হাজারো লোক মারা গেছেন, শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে৷ অবস্থার পরিবর্তনে অনেকেই নিজের গ্রামে ফিরে আসতে শুরু করেছেন৷ তবে বৃদ্ধ, দুর্বল ও পঙ্গুদের পক্ষে তা সহজ নয়৷

https://p.dw.com/p/11HVj
উগান্ডায় প্রতিবন্ধী হয়ে থাকাটা খুব কষ্টকর , প্রতিবন্ধীদের এখানে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হয়নাছবি: DW

উত্তর উগান্ডার ছোট্ট এক গ্রাম আপোটোকিটো৷ সূর্যের আলো ঝকঝক করছে৷ বাচ্চারা খেলাধুলা করছে৷ তবে একজনকে শুধু দর্শক হয়েই থাকতে হচ্ছে৷ বাউনসার তার নাম৷ সে জানায়, ‘‘আমার বয়স তখন ১৫৷ আমি সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছিলাম৷ চাকাটি একটি স্থল মাইনের ওপরে পড়ায় বিস্ফোরণ ঘটে সাথে সাথে৷

বাউনসারের বয়স এখন ২৮/২৯৷ একটি বাঁশের লাঠির ওপর ভর দিয়ে হাঁটতে হয় তাকে৷ প্রায় প্রতিদিন থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের ছোট্ট কুঁড়ে ঘর থেকে আপোটোকিটো গ্রামে আসে সে৷ ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করেছে সেএখানে৷ গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর উগান্ডা সরকার এই গ্রামে একটি শরণার্থী শিবির গড়ে তোলে৷ বাউনসার তার পরিবারের লোকদের নিয়ে তিন হাজার অন্যান্য মানুষের সঙ্গে এখানে বসবাস করতো৷ ২০০৯ সালে সরকার এই শিবির বন্ধ করে শরণার্থীদের নিজেদের গ্রামে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়৷ বাউনসার জানায়, ‘‘আমার চিকিৎসার প্রয়োজন৷ আমার পায়ের ‘ঘা' টা শুকিয়ে গেলেও কিছু দিন পর আবার দেখা দেয়৷ ঠিক মত ভাল হয়না৷''

মাসে একবার ডাক্তারি পরীক্ষার প্রয়োজন বাউনসারের৷ শেষ পরীক্ষা হয়ে গেছে বছর খানেক আগে৷ শরণার্থী শিবিরের প্রাক্তন পরিচালকের কাছ থেকে সহযোগিতা পায় সে৷ নিজের পরিবারও তাকে পরিত্যাগ করেছে৷ উত্তর উগান্ডায় প্রতিবন্ধী হয়ে থাকাটা যে কতটা কষ্টকর তা জানেন সাইমন আওং৷ ছোটবেলায় পোলিও হয়েছিল তাঁর৷ ডাক্তার দেখানোর সামর্থ্য ছিলনা মা বাবার৷ তারপর থেকে একটা পা সম্পূর্ণ অবশ৷ আজ তিনি গুলু শহরের আঞ্চলিক প্রতিবন্ধী সংগঠনের প্রধান৷ সাইমন বলেন, ‘‘প্রতিবন্ধীদের এখানে সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখা হয়না৷ মা বাবার কাছে সন্তানের সংখ্যা জানতে চাইলে পঙ্গু সন্তান থাকলে অনেকে চার ও আরেক জন বা তিন ও আরেক জন, এই ধরনের উত্তর দেন৷ দুর্বলদের সাহায্য করা আমাদের সংস্কৃতির একটি বিশেষ দিক৷ কিন্তু বিদ্রোহীরা সব ধ্বংস করে দিয়েছে৷ নিজেদের পরিবারের লোকজন প্রতিবন্ধী বা অসুস্থদের শিবিরে রেখে চলে যায়, এটা রীতিমত অন্যায়৷''

Internationale Koproduktion in Uganda
এইরকম বাঁশের লাঠির ওপর ভর দিয়ে অনেককেই হাঁটতে হয়ছবি: DW

এই সব মানুষকে সাহায্য করার জন্য প্রতিবন্ধী সংগঠনগুলো কিংবা সরকারেরও যথেষ্ট আর্থিক সামর্থ্য নেই৷ দেশের গোটা স্বাস্থ্যসেবা কাঠামোটাই দুর্বল৷ বেশির ভাগ মানুষেরই স্বাস্থ্যবিমা নেই৷ গুলু শহরে পাঠানো সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি রিচার্ড টোটওং, বাউনসার ও সাইমনের মত মানুষদের দুর্ভাগ্য সম্পর্কে জানেন৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সমস্যাটা হল সরকারকে ধীরে ধীরে এগুতে হচ্ছে৷ কিন্তু সশস্ত্র সংঘর্ষের পর সব কিছু গুছিয়ে তুলতে আমাদের একটু সময়ের প্রয়োজন৷ এটা ঠিক অনেকেই সাহায্য না পাওয়ার অভিযোগ করছে৷ আমরা সমস্যার সমাধানের জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলির সঙ্গেও কাজ করছি৷''

এই রকমই একটি সংস্থা আভসির জন্য কাজ করছেন নেদারল্যান্ডস'এর উন্নয়ন সাহায্যকর্মী ফেমকে বান্নিক৷ ১৯৮৪ সাল থেকে গুলুতে কাজ করছে ইটালির এই বেসরকারি সংস্থাটি৷ ফেমকে বান্নিক জানান, ‘‘উগান্ডা সরকার অনেক চেষ্টা করছে৷ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে, বাইরে থেকে অর্থ সংগ্রহ করতে৷ কিন্তু তবু পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছেনা৷ আর সে কারণেই আভসির মত সংগঠনগুলির প্রয়োজন এখানে৷''

গুলুর হাসপাতাল চত্বরে রোগীদের শুয়ে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে৷ এর মধ্যে রয়েছে আভসির এক বড় প্রকল্প অর্থপেডিক ওয়ার্কশপ৷ ডাক্তররা এখানে বছরে ৪৩০ জন রোগীর চিকিৎসা করেন বিনা পারিশ্রমিকে৷

ওয়ার্কশপের এক কর্মী ফ্র্যান্সিস কিজিটো জানান, ‘‘এখন আমি পায়ে লাগানোর জন্য একটি পাত তৈরি করছি৷ এক রোগী এটা পরীক্ষা করতে আসবেন৷ সরকারি সাহায্য হিসাবে আমরা ওয়ার্কশপ ভবন ও কর্মীদের পেয়েছি৷ যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য সামগ্রীর জন্য অর্থ দিচ্ছে আভসি৷''

এ ছাড়া আভসির অন্যান্য প্রকল্পও রয়েছে উগান্ডায়৷ সশস্ত্র সংঘর্ষে বিকলাঙ্গ হয়ে যাওয়া মানুষদের দেখাশোনা করে সংস্থাটি৷ এ প্রসঙ্গে ফেমকে বান্নিক বলেন, ‘‘আমরা বছরে দু বার নেদারল্যান্ডস থেকে প্লাস্টিক সার্জনদের একটি টিম গুলুতে আনার ব্যবস্থা করি৷ তাঁরা অপারেশন করেন এখানে, প্রশিক্ষণ দেন স্থানীয় কর্মীদের৷''

আভসি সংস্থাটি উগান্ডা সরকারকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য আরো সাহায্য করতে প্রস্তুত, যা প্রতিবন্ধীদের মঙ্গল বয়ে আনবে৷

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক