1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উইন্ডসার্ফিং: আশ্চর্য কেরামতি

১০ আগস্ট ২০১৭

৪৫ বছর আগে মার্কিন মুলুক থেকে জার্মানিতে এসেছিল উইন্ডসার্ফিং৷ উন্ডসার্ফিং বলতে বোঝায় অসম্ভব গতি আর আশ্চর্য সব কেরামতি৷ পণ্ডিতরা বলেন, আজও তা আছে ও ভবিষ্যতেও থাকবে৷ তবে অতীতে উইন্ডসার্ফিং-এর আরেক রকম চেহারা ছিল৷

https://p.dw.com/p/2hxw1
কোথায় যাচ্ছেন ফিলিপ ক্যোস্টার?ছবি: picture-alliance/HOCH ZWEI/D. Bohnhof

যে বস্তুটিকে সেলিং বোর্ড, উইন্ডসার্ফিং বোর্ড বা ভালোবেসে শুধুমাত্র বোর্ড বলা হয়ে থাকে, কালে স্মিট সেটা প্রথম মার্কিন মুলুক থেকে জার্মানিতে আনেন ১৯৭২ সালে৷ বোর্ডে চড়ে উইন্ডসার্ফিং করার প্রথম প্রচেষ্টার কথা ৭৭ বছর বয়সি কালে-র আজও মনে আছে: ‘‘দিনটা খুব ঝোড়ো ছিল, উইন্ডসার্ফিং শুরু করার পক্ষে যা আদৌ ভালো নয়৷ কাজেই আমাকে প্রথমদিন অনেকবার জলে পড়তে হয়েছে৷’’

অসম্ভব গতি, আশ্চর্য কেরামতির নাম উইন্ডসার্ফিং

দ্বিতীয় দিনে বাতাস একটু পড়ে এলে কালে সত্যিই তাঁর বোর্ডে চড়ে ‘সেলিং’ করতে শুরু করেন – আজ পর্যন্ত সে বোর্ড তাঁর কাছে আছে, যে বোর্ডে চড়ে কালে সে আমলে জার্মানির সমুদ্রসৈকতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন৷ কালের মনে পড়ে: ‘‘উইন্ডসার্ফিং দেখে সবাই চমকে যেতো, হাঁ করে দেখতো৷ তখন উইন্ডসার্ফারও খুব বেশি ছিল না, কাজেই যারা ছিল, তাদের বাজার দেখে কে!’’

কিছুদিনের মধ্যেই উইন্ডসার্ফিং-এর হুজুগ চালু হয়ে গেল – সবাই উইন্ডসার্ফিং করতে চায়৷ আজও হাজার হাজার মানুষ উইন্ডসার্ফিং শিখতে সার্ফ স্কুলে যায় – কিন্তু খুব কম লোকই টেঁকে, কেননা উইন্ডসার্ফিং শেখাটা সহজ নয়৷

শানিয়া রাফায়েল আর লিজা ক্লোস্টারের বয়স ১৬-১৭; দু'জনেই ফ্রিস্টাইল সার্ফার, কিন্তু বাতাস না থাকলেও সার্ফবোর্ড নিয়ে যে মজা করা যায়, সেটা তারা জানে৷ শুধু মজা তো নয় – এ দু'জনের কাছে উইন্ডসার্ফিং একটা অনুভূতি৷ শানিয়া বলে, ‘‘সার্ফিং করার সময় যে অনুভূতি হয়, তা বলে বর্ণনা করা যায় না৷ সে এক আশ্চর্য অনুভূতি৷’’

সে অনুভূতি বর্ণনা করার ক্ষমতা তিনবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফিলিপ ক্যোস্টার-এর থাকলেও থাকতে পারে৷ ফিলিপ এসেছেন ফেমার্ন দ্বীপের সার্ফ ফেস্টিভালে অংশ নিতে; সদ্য একটা চোট থেকে সেরে উঠে ধীরে ধীরে আবার নিজের শৈলি ফিরে পাচ্ছেন৷ ফিলিপ বলেন, ‘‘জলের ওপর দিয়ে ভেসে যাওয়ার সময় সত্যিই একটা স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া যায়, যা অবর্ণনীয়৷ জলের ওপর কতো কী করা যায় – নিজেকে কীরকম মুক্ত বোধ হয়৷ আমার কাছে এর চেয়ে সুন্দর অনুভূতি আর কিছু নেই৷’’

চরম স্পোর্ট নয়

কিন্তু এই এক্সট্রিম বা চূড়ান্ত সার্ফিং করার মতো দক্ষতা ও কৌশল খুব কম মানুষই আয়ত্ত করে৷ বাকিরা জলের ওপর দিয়ে সোজা ভেসে যেতে পারলেই খুশি৷ ‘সার্ফ-ম্যাগাজিন’ পত্রিকার প্রধান সম্পাদক আন্ড্রেয়াস এয়ার্বে জানেন যে, সার্ফিং-এর ইতিহাসে একাধিক ভুল বিকাশ ঘটেছে: ‘‘যে কারণে সার্ফিং একটা চরম ভাবমূর্তি পেয়েছে: জলের ওপর নানা কায়দা-কসরৎ আর ‘অ্যাকশান' ক্রমেই আরো কঠিন, আরো ভীতিকর হয়ে উঠেছে৷ ইতিমধ্যে পরিস্থিতি আবার কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে৷ আমাদের পত্রিকাতেও আমরা সাধারণ সার্ফারদের দিকে অনেক বেশি মনোযোগ দিচ্ছি, যাতে আরো বেশি মানুষ সার্ফিং-এর মজা পান আর সার্ফবোর্ড নিয়ে জলে নামেন৷’’

তবে সার্ফিং-এর আগে অনেকেই যে বস্তুটি করেন তার নাম হলো এসইউপি বা স্ট্যান্ড-আপ প্যাডলিং – সার্ফবোর্ডের উপর খাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে প্যাডল দিয়ে দাঁড় বাওয়া৷ নরম প্লাস্টিকের বোর্ডগুলো হাওয়া ভরে ফুলিয়ে নেওয়া যায়, কাজেই গাড়িতে রাখার কোনো অসুবিধে নেই৷ এ ধরনের প্লাস্টিকের বোর্ডের ওপর ইনফ্ল্যাটেবল ‘সেল’ বা পাল বসানোরও ব্যবস্থা থাকে – সব মিলিয়ে সার্ফিং-এর সাজসরঞ্জাম আজকাল এতোই হালকা হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, উইন্ডসার্ফিং-এর আরো জনপ্রিয় হবার পথে সেটা আর কোনো বাধাই নয়৷ আন্ড্রেয়াস বলেন, ‘‘বাতাস না থাকলে, প্যাডলিং করা চলে৷ বাতাস আর একটু জোরালো হলে অধিকাংশ এসইউপি বোর্ডের ওপর পাল বসিয়ে নেওয়া যায়৷ আর প্যাডলিং থেকে একবার ভারসাম্য রাখার অভ্যেস হয়ে গেলে পর, ঐ বোর্ড নিয়ে উইন্ডসার্ফিং করা সহজেই রপ্ত করা যায়৷’’

৫০ বছর পরেও কালে স্মিট-এর দৃঢ় বিশ্বাস যে, উইন্ডসার্ফিং-এর বিরাট ভবিষ্যৎ আছে: ‘‘উইন্ডসার্ফিং আবার ফিরে আসবে – তা সে এই প্রজন্মেই হোক বা তার পরের কিংবা পরের প্রজন্মেই হোক৷ সার্ফবোর্ডের আকর্ষণ কেউ এড়াতে পারবে না৷’’

মারকুস ব্যোনিশ/এসি