পাকিস্তানে দরিদ্রদের অবস্থা
৮ অক্টোবর ২০১৩আতঙ্কটা গরিবদেরই৷ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতো পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদের ওপরও জনসংখ্যার চাপ বাড়ছে৷ আশেপাশের গ্রামের মানুষ তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও অনেকে কাজের আশায় ছুটে আসছেন রাজধানীতে৷ স্বল্প আয়ের মানুষ, ঘরভাড়া দেয়ার সামর্থ নেই, তাই কোনোমতে একটা ঘিঞ্জি ঘর তুলেই রাজধানীতে নতুন জীবন শুরু করেন তাঁরা৷ বলা হয়ে থাকে, পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা নগরি ইসলামাবাদের বৈধ বাসিন্দাদের তাতে দুর্ভোগ বাড়ছে, শহরের উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ-র কাজ দিন দিন কঠিন হয়ে যাচ্ছে৷ এ কারণেই ইসলামাবাদে শুরু হয়েছে বস্তি উচ্ছেদ অভিযান৷ রঞ্জনা বিবি আর মেহরাম খানের মতো অসংখ্য মানুষ দরিদ্র থেকে নিঃস্ব হচ্ছেন রাতারাতি৷
নিজের ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে এ কথাই বলছিলেন রঞ্জনা বিবি৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রথমেই তিনি জানান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সিডিএ হঠাৎ এমন পদক্ষেপ নেয়ায় তাঁরা এখন দিশেহারা, ‘‘হঠাৎ বুলডোজার দিয়ে আমার ঘরটা তুলে ছুড়ে ফেলা হলো৷ কেন এমন করা হলো? কী অপরাধ আমাদের? এ এলাকায় যাঁরা থাকেন, তাঁদের জন্যই তো আমরা খেটে মরি৷ তাঁদের ঘরে গিয়ে থালাবাসন, কাপড়চোপড় ধুই৷ কেউ যদি আমাদের একটু জমি দিয়ে বলতো, তোমরা এখানে ঘর করে থাকো, আমরা কখনোই তাহলে এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতাম না৷''
বস্তি উচ্ছেদ শুরু করার আগে বস্তিবাসীদের সরে যেতেও বলেনি সিডিএ৷ সিডিএ-র কর্মকর্তা সাঈদ মুস্তাফান কাজমি মনে করেন, আগাম সতর্কতা বার্তা পাঠানোর কোনো প্রয়োজন নেই, নগর এবং নগরবাসীদের কল্যাণের জন্য আকস্মিকভাবে এমন অভিযান চালানো যেতেই পারে৷ তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সবাইকে এ শহরে থাকার সুযোগ দিতে পারিনা৷ এখন সবাই ইসলামাবাদে আসতে চায়৷ কিন্তু বেআইনি কাজ তো বেআইনিই৷ অবৈধ বসবাসকারীদের নোটিস পাঠানোর কোনো দরকার নেই৷ অবৈধ বসতি তুলে দেয়া আমাদের দায়িত্ব৷''
অবস্থাপন্ন স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকে মনে করেন, যেখানে-সেখানে বস্তি গড়ে তুলে যেমন কাছের বৈধ বাসিন্দাদের উপকার করা হচ্ছে, তেমনি এলাকায় অপরাধের হার বেড়ে যাওয়া এবং পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন করে ক্ষতিও করা হচ্ছে৷ আসিফ দ্বীন তাই বস্তি উচ্ছেদের পক্ষে৷
তবে একদিনের অভিযানে ঘর ভেঙে দেয়া হলেও অনেকেই নতুন করে শুরু করেছেন অবৈধ বসতি নির্মাণের কাজ৷ ভেঙে যাওয়া ঘর পুনর্নিমাণের কাজে ব্যস্ত মেহরাম খান বললেন, ‘‘কোথায় যাবো? আমাদের তো এত টাকা নেই যে অন্য কোথাও গিয়ে ঘর ভাড়া করে থাকবো৷''