ইরানে কবরস্থানেও থাকে গৃহহীন মানুষ!
গত কয়েক বছর ধরে ইরানে গৃহহীন মানুষ এত বেশি হারে বাড়ছে যে কবরের ভেতরেও পাওয়া যাচ্ছে জীবিত মানুষ৷ মানবাধিকারকর্মীরা এ পরিস্থিতির জন্য প্রেসিডেন্ট রৌহানিকেই দায়ী করছেন৷ ছবিঘরে দেখুন ইরানের গৃহহীনদের দুর্ভোগ৷
এত মানুষের জায়গা কোথায়!
গত ডিসেম্বরে শীতের কষ্টে মরনাপন্ন অবস্থা হয়েছিল তেহরানের গৃহহীনদের৷ অনেকেই তখন আশ্রয় শিবির ‘ঘাভারন’-এ গিয়ে ওঠেন৷ সেখানে তখন অন্তত ৯০০ জনকে আশ্রয় দিতে হয়েছিল৷
উষ্ণ আশ্রয়
ঘাভারনের ধারণক্ষমতা শুরুতে ৪৪ হলেও পরে তা বাড়িয়ে প্রথমে ৬০০, তারপর আরো বাড়িয়ে ১১০০ করা হয়েছে৷ অর্থাৎ এখন সেখানে অন্তত ১১০০ মানুষ থাকতে পারেন৷ ইরানে গৃহহীনের সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ বেকারত্ব, মাদকাসক্তি, সামাজিক বৈষম্য এবং দারিদ্র্য৷ এই আশ্রয় শিবিরে সবার জন্য গোসল, এক বেলার খাবার এবং রাতে ঘুমানোর ব্যবস্থা রয়েছে৷
কার্ডবোর্ডের ঘরে মৃত্যু
ইরানের বিভিন্ন শহরে গৃহহীনদের কার্ডবোর্ডের কার্টনে থাকতে দেখা যায়৷ স্থানীয়রা এই বাক্সকে বলেন ‘কার্টনখাব’৷ প্রতি শীতেই এই কার্ডবোর্ডের ঘরে অনেক মানুষ মারা যান৷ গত ডিসেম্বরে এভাবে মারা গেছেন ২৮ বছর বয়সি এক গৃহহীন৷ জানা গেছে, ঐ ব্যক্তিকে মাদকাসক্তির কারণে নিজের ঘর থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল৷
গৃহহীন নারী-শিশু
এই ছবিটি গত বছরের আগস্ট মাসে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আলোড়ন তুলেছিল৷ ছবিটি প্রকাশ করে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাক্টিভিস্টরা সরকারের প্রতি এই নারী-শিশুদের জন্য কিছু করার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ আহ্বানে সাড়া দিয়ে প্রশাসন তেহরানের দু’টি এলাকা থেকে ১২ জন নারী এবং ৬ শিশুকে উদ্ধার করে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যায়৷
কবরই যখন অস্থায়ী ঘর
সরকার গৃহহীনদের উদ্ধারের উদ্যোগ শুরু করার এক সপ্তাহের মধ্যেই প্রকাশিত হয় আরো ভয়ংকর এক বাস্তব চিত্র৷ জানা যায়, ইরানের অনেক গৃহহীন মানুষ শীতকালে জীবন বাঁচাতে খালি কবরের ভেতরে রাত কাটায়৷ ‘শারভান্দ’ পত্রিকার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, শুধু নাসিরাবাদ শহরেই এভাবে রাত কাটাচ্ছে অন্তত ৫০ জন মানুষ৷
রৌহানি দায়ী
এ খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দ্রুতই কবর থেকে মানুষদের সরিয়ে নেয় প্রশাসন৷ তারপরও বিরোধীরা সরকারের সমালোচনার সুযোগ ছাড়েনি৷ তাঁরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট রৌহানি গৃহহীনদের পুনর্বাসনের বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ার কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷
অন্তঃসত্ত্বারাও কবরবাসী!
গত বছর যাঁরা শীতের প্রকোপ থেকে প্রাণ বাঁচাতে কবরে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁদের তিন শতাংশই ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা নারী৷ সেসব নারীর অনেকেই মাদকাসক্ত৷ চিকিৎসা নিতে গেলে আইনের আওতায় নেয়া হবে – এই ভয়ে তাঁরা কোনো অবস্থাতেই ডাক্তারের কাছে যেতে চান না৷
গৃহহীনের জন্য সূর্যোদয়
গত এক দশক ধরে ইরানের গৃহহীনদের জন্য কাজ করছে বেসরকারি সংস্থা ‘তোলু বিনেশানহা’, যার অর্থ ‘অদৃশ্যদের সূর্যোদয়’৷ গৃহহীনদের খাদ্য এবং সামাজিক সেবা দেয় তারা৷