1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনায় আবার সুযোগ নষ্ট

বারবারা ভেসেল/এসবি২৪ নভেম্বর ২০১৪

ফুটবলের নিয়ম খাটলে ভিয়েনায় পরমাণু আলোচনার অংশগ্রহণকারীরা যাকে বলে একেবারে ‘এক্সট্রা টাইম’-এ খেলছিলেন৷ ডয়চে ভেলের ব্রাসেলস প্রতিনিধি বারবারা ভেসেল মনে করেন, মেয়াদ আরও বাড়ানো উচিত হবে না৷

https://p.dw.com/p/1DsAK
Frank-Walter Steinmeier und John Kerry (Atomgespräche in Wien)
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Punz

আশাবাদীদের বিশ্বাস ছিল, এবারে সাফল্য আসতে পারে৷ কারণ ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার দীর্ঘ ইতিহাসে এখনকার মতো এমন অনুকূল পরিবেশ আর দেখা যায়নি৷ ইরানের অর্থনীতি বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে, ফলে তেহরানের সরকার বিশাল চাপের মুখে পড়েছে৷ বছরের পর বছর ধরে কড়া নিষেধাজ্ঞার ফলে দেশটি আন্তর্জাতিক স্তরে একঘরে হয়ে পড়েছে, আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে, শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন কমে চলেছে৷ পেট্রোলিয়াম ও গ্যাসের রপ্তানিও কমে এসেছে৷ দ্রুত বেড়ে চলা মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার দ্রুত অবনতির মুখে ইরান নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়ে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চায়৷ তার উপর বর্তমান প্রেসিডেন্টের নরমপন্থি ভাবমূর্তির আলোকে সব পক্ষই ইরান ও আন্তর্জাতিক সমাজের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির আশা করছে৷ বহু দশক ধরে চলে আসা সংকট তাঁর আমলেই দূর হবে, এমন প্রত্যাশা বাড়ছে৷ প্রেসিডেন্ট হাসান রোহানি যদি অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি করতে ব্যর্থ হন, তখন তাঁর নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যতও বিপন্ন হয়ে পড়তে পারে৷

পশ্চিমা জগতও সাফল্যের আশা করছে

অন্যদিকে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলির স্বার্থও কাজ করছে৷ পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাফল্যের প্রয়োজন৷ প্রায় ২৫ বছর আগে তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখলের পর অ্যামেরিকা ও ইরানের মধ্যে শীর্ষ স্তরে যে যোগাযোগ ছিন্ন করা হয়েছিলো, তিনি সেই প্রথা ভেঙে দিয়েছেন৷ কারণ তিনি সন্ত্রাসী আইএস মিলিশিয়ার বিরুদ্ধে সংগ্রামে শক্তিশালী এক আঞ্চলিক সহযোগী খুঁজছেন৷ আইএশ সিরিয়া ও ইরাকের বেশ কিছু অংশ দখল করেছে এবং গোটা অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিপন্ন করছে৷ ইউরোপীয় সহযোগীরাও দ্রুত জানতে চায়, যে তাদের অটল কূটনৈতিক উদ্যোগ ও একটানা নিষেধাজ্ঞার কোনো ফল হচ্ছে কিনা৷

Porträt - Barbara Wesel
ডয়চে ভেলের ব্রাসেলস প্রতিনিধি বারবারা ভেসেলছবি: DW/B. Riegert

কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, যে প্রায় ১২ বছর ধরে চলে আসা এই ‘স্টপ অ্যান্ড গো' প্রক্রিয়ায় আলোচনা আবার মুলতুবি করতে হচ্ছে৷ গত বছরের নভেম্বর মাসে দুই পক্ষই এক কাঠামো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলো৷ আশা ছিল ছয় মাসের মধ্যে চূড়ান্ত সমাধানসূত্র স্থির হয়ে যাবে৷ কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি, শুধু তার মেয়াদ আরও ছয় মাস বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, সেই সময়সীমা আগামী বছর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে৷ অসীম ধৈর্যশীল কূটনীতিক ছাড়া অন্য সবার কাছে এই প্রক্রিয়া যেন এক উদ্ভট নাটক হয়ে দাঁড়িয়েছে৷

আলোচনাই যেন লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে

ধীরে মাটি খুঁড়ে চওড়া পাত লাগানোর লক্ষ্যে এই নীতির অসুবিধাই হলো এটা৷ অসংখ্য বৈঠকের পর আলোচনা পুরোপুরি থমকে গেছে৷ প্রতিটি যুক্তি হাজার বার শোনা হয়ে গেছে৷ দু'পক্ষই যে যার অবস্থানে গভীরভাবে বদ্ধ হয়ে পড়েছে৷ ওয়াশিংটনের প্রশাসনের দৃষ্টিভঙ্গিতে সাফল্য তখনই আসবে, যখন ইরান তার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার ক্ষমতা অনেক কমিয়ে আনবে৷ এর লক্ষ্য হলো, পরমাণু অস্ত্র তৈরি করতে হলে ইরানের এক বছর সময় লাগবে৷ এই সময়ের মধ্যে পশ্চিমা বিশ্ব প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারবে৷

তেহরানের প্রশাসনের কাছে আলোচনায় সাফল্যের সংজ্ঞা একেবারে বিপরীত৷ তাদের যত বেশি সংখ্যক সেন্ট্রিফিউজ চাই, যা দিয়ে অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়াম উৎপাদন করা সম্ভব৷ কারণ রেভোলিইশানারি গার্ড ও চরমপন্থিদের কাছে এটা ইরানের জাতীয় সম্মানের প্রশ্ন৷ তারা চায় দেশকে পরমাণু শক্তধর দেশগুলির অন্তর্গত করতে৷ অবশ্যই অতীতের মতো এখনো এ কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করা হচ্ছে না৷ গত এক দশকে ইরান তার ক্ষমতা ধাপে ধাপে নাটকীয় মাত্রায় বাড়িয়ে নিয়েছে৷ এই সময়কালে পশ্চিমা জগত ইরানকে বেসামরিক পরমাণু কর্মসূচি চালানোর লক্ষ্যে যত রকম সম্ভব প্রস্তাব দিয়েছে৷ তেহরানের নেতৃত্ব তার পূর্বশর্ত হিসেবে সবার আগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবার দাবি জানিয়েছে৷ নিয়ন্ত্রণ ও পরমাণু কর্মসূচি কমানোর প্রশ্নে তারা নতি স্বীকার করেনি৷

আলোচনায় বিরতি কাম্য?

দু'পক্ষই গত কয়েক বছর ধরে এই অবস্থায় থেমে রয়েছে৷ অনেক বিষয়েই যে দুই পক্ষের অবস্থানের ফারাক রয়েছে, এ নিয়ে কোনো বিভ্রান্তি নেই৷ জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফ্রাংক ভাল্টার স্টাইনমায়ার এ ভাবেই পরিস্থিতির বর্ণনা করেছেন৷

চলতি দফার আলোচনার আগে অনেক পর্যবেক্ষক বলেছিলেন, দু'পক্ষই এত উদ্যোগ নিচ্ছে যে আলোচনা ভেস্তে যেতে পারে৷ অন্যদিকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য আলোচনা মুলতুবি রাখার সিদ্ধান্তকেও ইতিবাচক বলা চলে না৷ যতদিন ইরানের ক্ষমতাকেন্দ্রের অভ্যন্তরীণ সংঘাত অগ্রগতিকে প্রায় অসম্ভব করে রাখবে, ততদিন আলোচনা মুলতুবি রাখাই ভালো৷ পশ্চিমা বিশ্ব অবশ্যই প্রেসিডেন্ট রোহানির অবস্থান দুর্বল করতে চায় না৷ তবে তিনি যদি নিজের নীতি কার্যকর করতে না পারেন, তখন তাঁকে আলোচনার সহযোগী হিসেবে ধরে রাখার কোনো অর্থ থাকবে না৷ এছাড়া তেহরানে কারো সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক নেই৷ আন্তর্জাতিক সমাজে ফেরার সম্ভাবনার জন্য আরও অপেক্ষা করতে হবে৷ ঘৃণা ও আদর্শ ছেড়ে আরও বাস্তববাদী আচরণ না দেখানো পর্যন্ত সেটা সম্ভব নয়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য