ইন্দোনেশিয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদী দুলমাতিন নিহত
১০ মার্চ ২০১০অভিযানের গুরুত্ব
বুধবার ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তার উপকণ্ঠে এক ইন্টারনেট কাফেতে বসে দুলমাতিন সবে নিজের ই-মেল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করেছিল৷ সঙ্গে সঙ্গেই ইন্দোনেশিয়ার সন্ত্রাসবাদ দমন ইউনিট ‘ডিটাচমেন্ট ৮৮'এর বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সদস্যরা তাকে আটক করার চেষ্টা শুরু করে৷ সেই ইন্টারনেট কাফে ও কাছের একটি বাড়িতে দুলমাতিনের সঙ্গীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়৷ দুলমাতিন তাদের দিকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে থাকে৷ নিরাপত্তা বাহিনীর পাল্টা গুলিতে দুলমাতিন ও ২ উগ্রবাদী সঙ্গী পুলিশের গুলিতে নিহত হয়৷ তারা দুলমাতিনের দেহরক্ষী ছিল বলে পুলিশ দাবি করেছে৷ দুলমাতিনের পরিচয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে তার মৃতদেহের উপর দ্রুত ডিএনএ পরীক্ষা চালানো হয়৷ ঘটনাস্থলে রিমোট কন্ট্রোল সহ যেসব বস্তু পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে পুলিশ সন্দেহ করছে, যে সে কোন হামলার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল৷
আন্তর্জাতিক তাৎপর্য
দুলমাতিনের মৃত্যুর দিনটি একাধিক কারণে বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে৷ বালি'র সন্ত্রাসী হামলায় মৃতদের মধ্যে বেশীরভাগই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পর্যটক৷ অস্ট্রেলিয়া সফর চলাকালীন বুধবারই ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট সুসিলো বামবাং ইয়োদোইনো স্বয়ং সেদেশের সংসদে ভাষণ দেওয়ার সময় দুলমাতিন'এর মৃত্যুসংবাদ ঘোষণা করেন৷
এদিকে আগামী ২০ থেকে ২২শে মার্চ ইন্দোনেশিয়া সফরে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ উগ্রবাদ দমনে এই উল্লেখযোগ্য সাফল্য ওয়াশিংটনের কাছেও ইন্দোনেশিয়ার সরকারের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলবে বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷ অন্যদিকে দুলমাতিনের মতো উগ্রবাদীরা যেভাবে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে আদৌ ইন্দোনেশিয়ায় মাথা চাড়া দিতে সক্ষম হচ্ছে, সেই বিষয়টিও বড় দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷
ইন্দোনেশিয়ার সাফল্য
কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় উগ্র ইসলামপন্থীদের বিরুদ্ধে সরকার ও প্রশাসনের অভিযানে একের পর এক সাফল্য দেখা যাচ্ছে৷ বালি'র হামলার পর ইন্দোনেশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী উগ্রবাদী সন্দেহে প্রায় ৪৪০ জনকে হয় আটক বা হত্যা করেছে৷ গত বছর নূর উদ্দিন মহম্মদ টপ'কে হত্যা করে ইন্দোনেশিয়ার পুলিশ গুরুত্বপূর্ণ এক সাফল্য পেয়েছিল৷ দুলমাতিন'এর গতিবিধির উপর দীর্ঘদিন নজর রেখে বুধবার নিরাপত্তা বাহিনী অবশেষে তাকে হাতের কাছে পায়৷ মার্কিন প্রশাসন তার মাথার দাম ঘোষণা করেছিল ১ কোটি ডলার৷
উগ্রবাদীদের কার্যকলাপ
আফগানিস্তানে আল কায়দার প্রশিক্ষণ পেয়েছিল দুলমাতিন৷ ইলেকট্রনিক্স বিশেষজ্ঞ হিসেবে সে বোমা তৈরির কাজে বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করেছিল৷ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার উগ্র ইসলামপন্থী সংগঠন ‘জেমা ইসলামিয়া'র হয়ে সে কাজ করত বলে পুলিশের অভিযোগ রয়েছে৷ ২০০২ সালে বালি'তে সন্ত্রাসী হামলার বিস্ফোরকের ব্যবস্থা সেই করেছিল৷ তারপর বেগতিক দেখে ২০০৩ সালে সে ফিলিপাইন্সের দক্ষিণে পালিয়ে যায়৷ সেখানে আল কায়দার অঙ্গ সংগঠন ‘আবু সাইয়াফ' গোষ্ঠীর সঙ্গে দুলমাতিন কাজ করছিল বলে সন্দেহ করা হয়৷ ফিলিপাইন্সের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এড়িয়ে পালানোর সময় সে আহত হয়েছিল বলে জানা গেছে৷ ইন্দোনেশিয়ার আচে দ্বীপকে ভিত্তি করে দুলমাতিন গোটা অঞ্চলের জন্য এক জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করছিল বলে দাবি করেছেন, আচে'র গভর্নর ইরওয়ান্দি ইউসুফ৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন, সম্পাদনা: দেবারতি গুহ