ইন্টারনেট তারকা হতে মেয়েরা যা করছে
কসমেটিক সার্জারি করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই তাদের৷ লক্ষ্য একটাই, লাইভ স্ট্রিমে তাদের অত্যন্ত আকর্ষণীয় দেখাতে হবে৷ যত মানুষ দেখবে, তত আয়৷ তবে এজন্য কষ্টও অনেক৷
লাইভ স্ট্রিম তারকা
চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে অবস্থিত লাইভস্ট্রিম ট্যালেন্ট এজেন্সি ‘থ্রি মিনিট টিভি’ কার্যালয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে আছেন এক তরুণী৷ তাঁর মতো হাজার হাজার মেয়ে এখন চীনে ইন্টারনেট স্টার হতে চাচ্ছেন৷ লাইভ স্ট্রিম সে দেশে এক নতুন ‘ক্রেজ’ তৈরি করেছে, যা বাড়ছে অতি দ্রুত৷
দ্রুত বধর্নশীল মার্কেট
‘থ্রি মিনিট টিভি’-র লাইভে থাকা এক নারীর ছবি এটি৷ তিন বছর আগেও এ রকম লাইভ স্ট্রিম দেখার আগ্রহ চীনাদের তেমন ছিল না৷ অথচ গতবছর এ খাত থেকে বিভিন্ন কোম্পানির লাভ হয়েছে প্রায় সাড়ে চার বিলিয়ন মার্কিন ডলার৷ সে দেশের এক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের দাবি, ২০২০ সালে এই মার্কেট তিনগুণ হবে৷
‘আমি চাই অনেকে আমাকে দেখুক’
থ্রি মিনিট টিভি-র কার্যালয়ে এ রকম অসংখ্য রুম আছে৷ দেখে মনে হবে কোনো মেয়ের বেডরুম এটি৷ মানে বেডরুম থেকে সরাসরি লাইভ হয়েছেন তিনি৷ এ রকম এক উপস্থাপিকা জিয়াং কুই বলেন, ‘‘আমি চাই আরো মানুষ আমাদে দেখুক, আমার জন্য হুয়াজি কয়েন খরচ করুক৷’’ হুয়াজি হচ্ছে সে দেশের জনপ্রিয় এক লাইভ স্ট্রিমিং সাইট, যেখানে কাউকে ভার্চুয়াল গিফট দেয়া যায়৷ সেই গিফট ভাঙিয়ে সত্যিকারের টাকা পাওয়া যায়৷
প্রশিক্ষণ
ভবিষ্যতের লাইভ স্ট্রিম উপস্থাপিকারা ‘থ্রি মিনিট টিভি’-র প্রশিক্ষণ নেন৷ চীনে এমন স্ট্রিমের সম্ভাব্য দর্শকের সংখ্যা ৩৪৪ মিলিয়ন৷ এই দর্শকরা গত ডিসেম্বরে বিভিন্ন লাইভ স্ট্রিমিং সাইট ভিজিট করেছেন৷ এটা অবশ্য চীনের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর মাত্র ৪৭ শতাংশ৷ ফলে এই মার্কেটের আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে৷
কসমেটিক সার্জারি
লাইভ স্ট্রিমে অনেক কিছু লুকানো যায় না৷ তাই নিজেদের সৌন্দর্যকে সত্যিকারভাবে ফুটিয়ে তুলতে বা নিজেদের আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে অধিকাংশ উপস্থাপিকাই ছুরির নীচে চলে যান৷ কেউ নাক সুন্দর করেন, কেউ কান, কেউ বা স্তনের গড়ন৷ চীনে কসমেটিক সার্জারি সংক্রান্ত এক অ্যাপের নির্মাতা জানান, ইন্টারনেট উপস্থাপিকাদের অন্তত ৯৫ শতাংশই সার্জারির মাধ্যমে নিজেদের সৌন্দর্য বাড়িয়েছেন৷
এক হাজার প্রশিক্ষিত উপস্থাপিকা
লাইভ স্ট্রিম ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা পূরণে ইতোমধ্যে এক হাজার উপস্থাপিকাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ‘থ্রি মিনিট টিভি’৷ প্রায় চল্লিশটি লাইভ স্ট্রিম প্লাটফর্মে এখন কাজ করছেন তারা৷ প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ও চব্বিশ ঘণ্টা খোলা থাকে এবং তিন শিফটে মেয়েরা ইন্টারনেটে লাইভ স্ট্রিম করে যাচ্ছেন সেখান থেকে৷ চীনে এরকম প্রতিষ্ঠান আরো রয়েছে৷
কত কী না করে
লাইভ স্ট্রিমে থাকা উপস্থাপিকাকে দর্শকদের সন্তুষ্ট রাখতে, তাঁকে ভার্চুয়াল উপহার দিতে, অনেকভাবে প্রলুব্ধ করা হয়৷ তারা কখনো গান গায়, কখনো প্রেমের অভিনয় করে৷ আর অনলাইন গিফট থেকে অর্জিত অর্থ ভাগ করে নেয় উপস্থাপিকা, প্রোডাকশন কোম্পানি এবং লাইভস্ট্রিম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান৷ এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন কোম্পানির ব্র্যান্ডিংয়ের জন্যও কাজ করেন তারা৷
সরকারের কড়া নজর
তবে লাইভ স্ট্রিমে চীনের আইনে অবৈধ এমন বাড়াবাড়ি কিছু করা হলে জেল, জরিমানারও ঝুঁকি রয়েছে৷ গত জুলাইয়ে চীনের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় জানায়, ৪,৩১৩ টি অনলাইন শো রুম বন্ধ করে দিয়েছে তারা৷ সেই সময় ইন্টারনেটে অশ্লীলতাকে উৎসাহ দেয়ার দায়ে ১৮ হাজারের মতো উপস্থাপিকাকে চাকুরিচ্যুত করা বা অন্য শাস্তি দেয়া হয়েছে৷ কয়েকটি লাইভ স্ট্রিম সাইটকে জরিমানাও করা হয়েছে৷