ইউরো বাঁচানোর ইউরোপীয় প্রচেষ্টা
১৭ ডিসেম্বর ২০১০ইউরো এলাকা এখন সঙ্কটগ্রস্ত না হলেও, সন্ত্রস্ত৷ গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, পোর্তুগাল, স্পেন, সর্বত্রই এক জুজুর ভয়: ঋণের ভারে দেশগুলো না দেউলিয়া হয়ে পড়ে! এই অবস্থায় ব্রাসেলসে কি ঠিক করা হয়, সেদিকে সকলেরই নজর৷
দেখা গেল, কি নির্দিষ্ট হল, তার চেয়েও বড় কথা হয়ে দাঁড়াল, কি নির্দিষ্ট হল না৷ লুক্সেম্বুর্গের প্রধানমন্ত্রী জাঁ-ক্লোদ ইয়ুংকার ইইউ'এর বড় চিন্তাবিদদের মধ্যে পড়েন৷ তিনি ধুয়ো তুলেছেন ইউরো বন্ড-এর৷ অর্থাৎ সব ক'টি ইউরো-দেশ মিলে একত্রে বাজারে বন্ড ছাড়বে, যার অর্থ টাকা ধার নেবে৷ কাজেই আজ গ্রিস কিংবা আয়ারল্যান্ডকে বন্ড ছেড়ে বাজারে টাকা তুলতে যে পরিমাণ সুদ দিতে হচ্ছে, তাদের সেই পরিমাণ সুদ দিতে হবে না৷
সমস্যা এই যে, জার্মানি কি ফ্রান্সের মতো দেশ, যাদের অর্থনীতি শক্তিশালী এবং বাজারে যাদের নাম ভালো, তারা তো এমনিতেই বাজারে বন্ড ছেড়ে অতি কম সুদ দিয়েই টাকা পায়৷ ইউরো বন্ড হলে তাদেরও বেশি সুদ দিতে হবে৷ যেমন এক জার্মানির বাড়তি খরচ হবে প্রায় ১৭ বিলিয়ন ইউরো৷ কাজেই জার্মান চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ইউরো বন্ডে রাজি নন৷
অস্থায়ী থেকে স্থায়ী
ম্যার্কেলের যুক্তি এ'ও যে, আপাতত ৭৫০ বিলিয়ন ইউরোর যে ত্রাণ তহবিল চালু করা হয়েছে, তা থেকে আয়ারল্যান্ডের খাতে যাচ্ছে ৭৫ বিলিয়ন মতো৷ কাজেই পোর্তুগাল, এমনকি স্পেনকেও ত্রাণ করার মতো যথেষ্ট রসদ আছে৷
কিন্তু এবার ব্রাসেলস যাবার সময় ম্যর্কেলও জানতেন যে, একেবারে কিছু না দিয়ে, কোনোরকমের আপোষ না করে তিনি, অর্থাৎ জার্মানি পার পাবে না৷ কেননা ইতিমধ্যেই ইউরো-দেশগুলির সংহতি, খোদ ইউরোপীয় সংহতি নিয়ে কথা উঠে পড়েছে৷ তাই ব্রাসেলসে এবার স্থির হয়েছে, ২০১৩-সালে ৭৫০ বিলিয়ন ইউরোর চলতি অস্থায়ী ত্রাণ তহবিলের পরিবর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের যুগ্ম উদ্যোগে একটি স্থায়ী ত্রাণ তহবিল সৃষ্টি করা হবে, যদিও তার খুঁটিনাটি এখনও ঠিক করতে হবে৷ তবে ইউরো দেশগুলো যে তাদের বিপন্ন সতীর্থদের উত্তরোত্তর সাহায্য করতে প্রস্তুত, এবং সেজন্য লিসবন চুক্তির রদবদলেও কারো আপত্তি নেই, সেটাই কি কম?
আসল ব্যবধান
শীর্ষবৈঠকের পর ফরাসি প্রেসিডেন্ট নিকোলা সারকোজি বলেছেন, তিনি এবং চ্যান্সেলর ম্যার্কেল নাকি ইউরো-দেশগুলির মধ্যে অর্থনৈতিক তারতম্য ঘোচানোর নতুন প্রস্তাব দেবেন৷ সারকোজি এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে ক্ষমতার তারতম্য ঘোচানোর কথা বলেছেন৷
বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী ইভ লেটার্ম ওটা আরো স্পষ্ট করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন: ‘‘মুদ্রার একীকরণের জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক একীকরণের৷ তা থেকে কেউই মুক্তি পাবে না৷''
প্রতিবেদন: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক