ইউরো নাকি আবার ডয়চে মার্ক
৬ জানুয়ারি ২০১১গ্রিসের অর্থনৈতিক ধসের পর গ্রিসকে এবং তার চেয়েও বেশি ‘ইউরো' মুদ্রা উদ্ধার করতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন সহ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলকে দিতে হয়েছে ৭৫০ বিলিয়ন ইউরো৷ গ্রিসের পরই এসেছে আয়ারল্যান্ড৷ সেখানেও অর্থনৈতিক ধস৷ আরেকবার হুমকির সম্মুখীন হয় ইউরো৷
তবে সবাই যে ইউরো নিয়ে ভীত তা কিন্তু নয়৷ নতুন বছরের প্রথম দিন থেকে এস্টোনিয়া প্রবেশ করলো ইউরোজোনে৷ অর্থাৎ এস্টোনিয়ার মুদ্রাও এখন ইউরো৷ ইউরো জোনে ১৭ নম্বর দেশ হল এস্টোনিয়া৷ এর আগের মুদ্রা ছিল ক্রোনা৷ পনেরো ক্রোনায় এক ইউরো৷ আনন্দে উচ্ছ্বসিত একজন ছাত্রী ইভলিন তাম৷ তিনি বললেন, ‘‘আমাদের এখন নতুন মুদ্রার সঙ্গে পরিচিত হতে কিছুটা সময় লাগবে৷ এতদিন ছিল ক্রোনা, এখন ইউরো৷ শুধু নোট নয় এর সঙ্গে খুচরো সেন্ট৷''
এদের শান্ত করতে অর্থমন্ত্রী ইয়ুর্গেন লিগি জানিয়েছেন, আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই সবাই ইউরো মুদ্রায় অভ্যস্ত হয়ে যাবে৷ লিগি জানান,‘‘ এস্টোনিয়ার মানুষরা এতদিন অধিকাংশত ক্রেডিটকার্ড এবং ব্যাংককার্ড দিয়ে সবকিছুর দাম দিতে অভ্যস্ত৷ এখন ইউরোর সঙ্গে আসছে খুচরা পয়সা ১,২,৫,১০,২০ আর ৫০ সেন্ট৷ এটা প্রাথমিকভাবে একটু সমস্যায় ফেলবে৷ টাকার সত্যিকার মূল্যমান হিসেব করতে বেগ পেতে হবে মানুষকে৷ অবশ্য যারা এমনিতেই প্লাস্টিক কার্ড দিয়ে লেনদেন করতে অভ্যস্ত, তাদের শেষ পর্যন্ত তেমন কোন অসুবিধা হবার কোন কারণ নেই৷''
সঙ্কট থেকে বের হওয়ার পথ সব সময়ই পাওয়া যাবে – রেন
এরপরও প্রশ্ন উঠেছে ইউরো মুদ্রা কতটা নিরাপদ? গ্রিস এবং আয়ারল্যান্ডে যা ঘটেছে, তা অন্য কোথও ঘটলে ইউরোপের অভিন্ন মুদ্রা ইউরো কী ভেঙে পড়তে পারে? এই প্রশ্ন বারবার করেছে ইউরোপীয় অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা৷ গ্রিস তার শোচনীয় আর্থিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে কঠোর ব্যয়সঙ্কোচ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে৷ তবে গ্রিসকে যে ঋণ দেওয়া হয়েছে তা গ্রিস পরিশোধ করতে পারবে কিনা তা নিয়ে এখনও অনেকেই সন্দিহান৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনৈতিক বিষয়ক দপ্তরের কমিশনার ওলি রেন এ বিষয়ে জানান,‘‘আমি শুধু বলতে পারি, যদি এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি আমরা হই, তারপরেও সেই সঙ্কট থেকে বের হওয়ার এবং ইউরোকে স্থিতিশীল রাখার কোন না কোন পথ আমরা খুঁজে পাবো৷''
ইউরোর ব্যাপারে আশ্বাস দিচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও৷ ইউরো মুদ্রা যে দেশগুলোতে প্রচলিত, তারা একাত্ম হয়, যদি অসময়ে একজন আরেকজনের পাশে এসে দাঁড়ায় তাহলে অর্থনৈতিক ও আর্থিক সঙ্কট ২০১৩ সালের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে জানানো হচ্ছে৷ ব্রাসেলসে গত মাসে আলোচনায় বসেছিল ২৭টি দেশ৷ কোন বড় রকমের আর্থিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিলে তার মোকাবিলার জন্য নতুন একটা স্থায়ী ব্যবস্থার ব্যাপারে একমত হন ইইউ'র রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা৷ তার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উল্লেখ করতে গিয়ে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেন, ‘‘ইউরোভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সবার জন্য প্রযোজ্য হতে হবে এই ব্যবস্থা৷ সামগ্রিকভাবে ইউরো অঞ্চলের স্থিতি হুমকির মুখে পড়লে এই ব্যবস্থা কাজে লাগানো হবে৷ সর্বসম্মত অনুমোদনের নীতি কার্যকর হতে হবে৷ এবং আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের সঙ্গে এই ব্যবস্থাকে যুক্ত রাখতে হবে৷''
ডয়চে মার্ক কি ফিরে আসছে?
অন্যদিকে জার্মানির জনসাধারণের অনেকেই মনে করছেন, জার্মানির ফিরে যাওয়া উচিৎ পুরোনো ডয়চে মার্কে৷ গ্রিস এবং আয়ারল্যান্ডে আর্থিক ও অর্থনৈতিক সঙ্কটের পরই জার্মান অর্থনীতিবিদ এবং রাজনীতিকরা আলোচনায় বসেন৷ আলোচনার মূল বিষয়, ইউরো দেশগুলো যদি এই অবস্থায় চলতে থাকে তাহলে ইউরোর কোন ভবিষ্যৎ আদৌ থাকবে কী? পুরোনো ডয়চে মার্ক কী তাহলে ফিরে আসবে? অনেক জার্মান-ই ডয়চে মার্ক'এর পক্ষে মত দেবেন, ইউরো'র পক্ষে নয়৷
ইউরো মুদ্রার পাশাপাশি এখনো গোটা জার্মানিতে মানুষের হাতে রয়েছে প্রায় ১৪শ কোটি ডয়চে মার্ক৷ যদি কোন ধরণের অঘটন ঘটে তাহলে তারা আনন্দে নাচবে৷ কারণ তাহলে ইটালি আর গ্রিস থেকে আসা মদিরা কেনা এবং স্পেনে ছুটি কাটানো আরো সহজ হবে, সস্তা হবে৷ এর আরেক অর্থ, জার্মান পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে বাইরের বাজারে৷ বিশেষ করে ‘মেইড ইন জার্মানি' লেবেলের পণ্য বেশি দামে বিক্রি হবে পর্তুগাল, আয়ারল্যান্ড এমনকি ফ্রান্সেও৷ এসইবি ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ক্লাউস শ্রুফার বললেন, ‘‘এটা ঠিক যে এই মুহূর্তে ইউরোর মুদ্রামান কিছুটা বেশিই রয়েছে৷ কিন্তু ডয়চে মার্ক থাকলে স্পষ্টতই তার মূল্যমান হত অনেক বেশি৷ এবং তার ফলে জার্মান অর্থনীতির প্রতিযোগিতার ক্ষমতাটা আজকের চেয়ে অনেক খারাপ হতো৷''
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক