1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইউরোপে ইসলাম ধর্মের চরিত্র

৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১

সম্প্রতি বার্লিনে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়৷ বিষয় ছিল জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমান সম্প্রদায় এবং ইউরোপে ইসলাম ধর্ম৷ আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন সুইজারল্যান্ডের ইসলাম বিশেষজ্ঞ তারেক রামাদান৷

https://p.dw.com/p/109hO
লন্ডনে একটি মসজিদের ভিতরের ছবিছবি: AP

বার্লিনের ‘হাউস ডেয়ার কুলটুরেন ডেয়ার ভেল্ট' বা বিশ্ব সংস্কৃতি কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে আয়োজন করা হয় বিশেষ এক আলোচনা সভা৷ বিষয় – ‘জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমান, ইউরোপে ইসলাম ধর্ম'৷ আলোচনাসভায় যোগ দিয়েছিলেন প্রায় এক হাজার মানুষ৷ এমনকি সিঁড়িও ফাঁকা নেই৷ যারা এসেছেন তাদের অনেকেই মুসলমান অভিবাসী পরিবারের৷ তাদের পোশাক এবং চেহারা দেখেই তা বোঝা যাচ্ছে৷ তবে তরুণ প্রজন্মের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি৷ সবাই এসেছে তারেক রামাদানের মূল্যবান বক্তব্য শুনতে৷ শুরুতেই তারেক রামাদান বলেন,‘‘একজন ইউরোপীয় হিসেবে একটি কাজ আমি কখনোই করবো না৷ তা হল এমনভাবে নিজেকে উপস্থাপন করা যেন আমি সংখ্যালঘুদের একজন৷ আমি বলতে চাইছি আমরা সবাই সমান৷ মুসলমানদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল – সংখ্যালঘু মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসা৷ আমাকে যদি টিলো সারাসিনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয় – তাহলে আমি জবাব দেব একজন ইউরোপীয় নাগরিক হিসেবে৷ তাঁকে আমি বলবো – আপনি বিপজ্জনক একজন ব্যাক্তি৷ ইউরোপের মূল্যবোধের সঙ্গে আপনি বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন৷''

Frau mit Burka in Europa Niederlande
নেদারল্যান্ডসে বোরখা পরা দু’জন মুসলিম নারীছবি: AP

কে এই তারেক রামাদান ?

তারেক রামাদান মিশরীয় বংশোদ্ভূত৷ বসবাস করেন সুইজারল্যান্ডে৷ শিক্ষকতা করেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ বতর্মান বিশ্বে ইসলাম বিশেষজ্ঞদের অন্যতম একজন হিসেবে ধরা হয় তারেক রামাদানকে৷ ইউরোপের মুসলমান সম্প্রদায় তাঁকে একজন পপতারকারও চেয়ে বেশি জনপ্রিয় বলে মনে করে৷ তারেক রামাদানের প্রতিটি উত্তরই যেন নতুন একটি পথ উন্মুক্ত করছে ইউরোপীয় মুসলমানদের জন্য৷

ইউরোপীয় মুসলমানদের ইউরোপীয় সমাজে একাত্ম করার ওপর জোর দেন তারেক রামাদান৷ শুধু খেলাধুলা, শিল্প-সংস্কৃতি নয় – আরো গভীরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন মুসলমানদের৷ সবার আগে শিক্ষার কথা বলেন৷ টিলো সারাসিনের মতো মানুষের প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর দিতে, তাঁর মোকাবিলা করতে – অন্যদের প্রতি সহনশীল হতে হবে, সম্মান প্রদর্শন করতে হবে৷ নিজেদের নির্দিষ্ট একটি গন্ডির মধ্যে আটকে রাখলে চলবে না৷ সবার সঙ্গে মিশতে হবে৷ আশেপাশে কী হচ্ছে তার দিকে নজর রাখতে হবে, চোখ-কান খোলা রাখতে হবে৷ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে চলাফেরা-ওঠাবসার মাধ্যমেই শুধুমাত্র মানুষদের চেনা যায়, জানা যায়৷ শুধু মুখে মুখে বললেই ইউরোপীয় সমাজের সঙ্গে একাত্ম হওয়া যায় না৷ সেটা সম্ভবও নয়৷ রামাদান জানান,‘‘আমাদের ধর্মের সাংস্কৃতিক দিকটি নিয়ে অবশ্যই আত্মসমালোচনা করা উচিত৷ আমরা আরব, মরক্কো, তুরস্ক, বা যে দেশ থেকেই আসি না কেন, সেই পরিচয় তুলে ধরা আমাদের কাজ নয়৷ কোন মুসলমান যদি বলে আমি জার্মান, তাতে দোষের কিছু নেই৷ তাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় যদি ব্রিটিশ, ফরাসি অথবা ইউরোপীয় হয় তাতেও দোষের কিছু নেই৷''

মুসলমানদের সহজে গ্রহণ করা হয় না ইউরোপীয় সমাজে

তারেক রামাদানের মতে, ইউরোপীয় সমাজে মুসলমানরা একাত্ম হতে চায় না – সেটা একেবারেই সত্য নয়৷ কারণ অনেক মুসলমানই বেশ ভালভাবেই নিজেদের একাত্ম করতে সক্ষম হয়েছে৷ বরং সমস্যা সেখানে, যেখানে মুসলমানদেরই ইউরোপীয় হিসেবে দেখা হয় না৷ এরা বিদেশি, অভিবাসী, অন্যরকম, অন্য ধর্মের, অন্য সংস্কৃতির – এভাবে যখন দেখা হয়, সমস্যার শুরু হয় তখনই৷

জার্মানির রাজনৈতিক সবুজ দলের সদস্য চেম ও্যজদেমিরও তারেক রামাদানের সঙ্গে এই বিষয়ে এক মত প্রকাশ করেন৷ ও্যজদেমির বলেন,‘‘বৃহত্তর এই সমাজের প্রতিটি ব্যক্তিরই জানে – একজন মুসলমান মহিলা বা পুরুষ বলতে কী বোঝায়৷ যদি কোন মুসলমান পুরুষ বা নারী ভালবেসে বিয়ে করেন, তার মানে হল – তারা ভীষণভাবে ব্যতিক্রম৷ অথবা কোন শিক্ষিত মহিলা, যিনি কাজ করছেন, ভালবেসে বিয়ে করেছেন, স্বাধীনভাবে চলাফেরা করছেন, স্বাবলম্বী – তিনিও ভীষণভাবে ব্যতিক্রম৷''

তবে এ ধরণের প্রচলিত চিন্তাধারা জন্য প্রচারমাধ্যমগুলো দায়ী বলে জানানো হয়৷ কারণ প্রচার মাধ্যমগুলো সবসময় তৈরি থাকে ইসলাম ধর্ম এবং মুসলমানদের আক্রমণ বা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে প্রতিবেদন প্রচার করতে৷

ইতিহাসবিদ ডান ডিনার জানান, কেন মুসলমান এবং ইউরোপীয়দের মধ্যে এক ধরণের উত্তেজনা কাজ করছে৷ কোথা থেকে তা শুরু হয়েছে৷ ডিনার জানান,‘‘সমস্যা হলো এই যে মুসলমানরা এমন এক দেশে এসে পড়ে, যেগুলি ধর্মনিরপেক্ষ বটে, কিন্তু সেই ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি আবার খ্রীস্টধর্ম৷''

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন