1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রক্ষক না দখলদার?

রোমান গঞ্চারেঙ্কো/জেকে২৭ এপ্রিল ২০১৪

তাঁদের পরনে ব্যাজবিহীন ক্যামোফ্লেজড যুদ্ধসাজ, প্রত্যেকের সঙ্গেই ভারী অস্ত্রশস্ত্র আর মুখ ঢাকা বালাক্লাভায়৷ তবে তাঁরা কিন্তু হাসেন উচ্চস্বরে, বাচ্চাদের সঙ্গে মজা করেন আর খেলার সঙ্গী হন৷ কারা বলুন তো এঁরা?

https://p.dw.com/p/1BonL
এঁরাই সেই ‘সবুজ মানব'ছবি: DW/R. Goncharenko

পূর্ব ইউক্রেনের অনেকেই বিশ্বাস করেন, ডাকাতি করতে নয়, এই অস্ত্রধারীরা এসেছেন তাঁদের রক্ষা করতে৷ ইউনিফর্মের রঙের কারণে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এঁদের পরিচয় – ‘ছোট্ট সবুজ মানব'৷

স্লাভিয়ানস্ক এলাকায় নতুন একটি খেলার মাঠে তরুণী এক মা-কে দেখা গেল তাঁর দুই বছর বয়সি ছেলেকে দোলনায় দোল খাওয়াচ্ছেন৷ তাদের ঠিক পেছনেই কালাশনিকভ রাইফেল হাতে কিছু লোককে গাড়ি থেকে গ্রেনেড লঞ্চার নামাতে দেখা গেল৷ আশেপাশে পাখি ডাকছে, দূরে বাজছে গির্জার ঘণ্টা... অস্ত্রের ঝনঝনানির মাঝেই যেন শান্তি শান্তি ভাব!

‘‘আমরা এঁদের ভয় পাই না৷ আমাদের নিরাপত্তা দিতেই তারা এসেছে'', বললেন খেলার মাঠের সেই শিশুটির মা ইউলিয়া৷ বরং ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী, আকাশ চিরে ছুটে চলা ফাইটার জেট এর খুব নীচু দিয়ে উড়ে যাওয়া সামরিক হেলিকপ্টার নিয়েই বিরক্তি ঝরল তাঁর কণ্ঠে৷ ইউলিয়া জানালেন, তাঁর ছেলে ‘এ সব' ভয় পায়৷

Julia, Mutter in Slowjansk
দুই বছরের এক শিশুটির মা ইউলিয়া বলেন, ‘‘আমরা এঁদের ভয় পাই না৷ আমাদের নিরাপত্তা দিতেই তারা এসেছে৷''ছবি: DW/R. Goncharenko

নাতনিকে নিয়ে ওই মাঠের পাশে বালির প্রাসাদ বানাচ্ছিলেন এক বৃদ্ধা৷ তাঁর কণ্ঠেও ইউলিয়ার সুর৷ বললেন, হাতে অস্ত্র থাকলে কি হবে, ছেলেগুলো মোটেও খারাপ নয়৷

‘ছোট্ট সবুজ মানব'

এপ্রিলের শুরু থেকে এভাবেই চলছে পূর্ব ইউক্রেনের ছোট্ট শহর স্লাভিয়ানস্কে জীবন৷ এ শহরের নিয়ন্ত্রণ কার্যত রাশিয়াপন্থি অস্ত্রধারীদের হাতে৷

স্লাভিয়ানস্কের মতো পূর্বাঞ্চলীয় কয়েকটি শহর ইতোমধ্যে নিজেদের এলাকাকে গণপ্রজাতন্ত্র ঘোষণা করেছে এবং মে মাসের শুরুতে গণভোট অনুষ্ঠানের দাবি তুলেছে৷ ইউক্রেনের এই এলাকা আরো বেশি স্বায়ত্ত্বশাসন পাবে, নাকি রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হবে – তা গণভোটের মাধ্যমে ফয়সালা করার দাবি তাঁদের৷

ইউক্রেন সরকার স্বাভাবিকভাবেই এসব ‘বিচ্ছন্নতাবাদী কর্মকাণ্ড' দমনের চেষ্টা করছে৷ রুশপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঘাঁটিতে চালানো হচ্ছে অভিযান৷ বিভিন্ন এলাকায় দখল – পাল্টা দখলের খবর পাওয়া যাচ্ছে মাঝেমধ্যেই৷

Kinderspielplatz vor dem besetzten Gebäude in Slowjansk
বাচ্চাদের খেলাধুলার স্থানের পাশেই ‘সবুজ’ মানবদের অবস্থানছবি: DW/R. Goncharenko

কিন্তু ছোট্ট সবুজ মানবেরা সংখ্যায় কতজন, তাঁদের প্রত্যেকের পরিচয় কী – এ সব প্রশ্নের জবাব আপাতত কারো কাছে নেই৷ ক্রাইমিয়া রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহরগুলোতে দেখা যাচ্ছে এঁদের৷

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন অবশ্য পরে ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, সবুজ ইউনিফর্মের এই অস্ত্রধারীরা রাশিয়ারই সৈন্য৷

নাগরিকদের ‘বন্ধু'

স্লাভিয়ানস্কের এই অস্ত্রধারীদের মধ্যে নেতাগোছের একজন জানালেন, তাঁরা সেনাবাহিনীর সাবেক সদস্য৷ তিনি নিজে রুশ ভাষা বলেন খাঁটি রুশদের মতো, তাতে ইউক্রেনীয় টান নেই৷ তাঁর দলের সদস্যদের মধ্যে কাউকে কাউকে ইউক্রেনীয় বলেই মনে হয়, বাকি সবাই রুশ৷

তাঁদের একজন বললেন, ‘‘বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে যতদিন প্রয়োজন, ততদিন আমরা এখানে থাকব৷''

তাঁকে দেখা গেল আশেপাশের পথচারীদের সঙ্গে বন্ধুর মতোই রসিকতা করছেন৷ ছবি তুলতে চাইলে সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন এবং হাতের অস্ত্র তুলে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে গেলেন৷

কিয়েভের অভিযোগ, রাশিয়ার স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরাই ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে এসব বাহিনীকে চালাচ্ছে৷ অবশ্য মস্কো এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে৷

রণকৌশল?

Bewaffnete Separatisten in Slowjansk
সর্বশেষ জনমত জরিপে দোনেৎস্ক ও লুগানস্ক এলাকার ২০ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, রুশ সেনাবাহিনী এলে তাঁরা স্বাগতই জানাবেনছবি: DW/R. Goncharenko

বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে ইউক্রেন সরকার যখন সামরিক অভিযান চালাচ্ছে, তখনই সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে পাল্টা ‘সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান' চালানোর খবর পাওয়া গেছে ক্রামাটরস্ক শহরের কাছে৷

সপ্তাহখানেক আগে ওই এলাকার ‘বেসামরিক নাগরিকরা' ইউক্রন সেনাবাহনীর একটি বহর আটকে দেয় এবং সৈন্যদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ কেড়ে নেয়৷

স্লাভিয়ানস্কে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দখলে থাকা একটি ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে রুশপন্থি এক ‘সবুজ মানব' জানালেন, তাঁর হাতের গ্রেনেড লঞ্চারটি কিছুদিন আগেও ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর সম্পত্তি ছিল৷

পূর্ব ইউক্রেনের কয়েকটি শহরে বেসামরিক নাগরিকরাও এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যোগ দিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে, যদিও তাঁদের সংখ্যা খুবই কম৷ সর্বশেষ জনমত জরিপে দোনেৎস্ক ও লুগানস্ক এলাকার ২০ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, রুশ সেনাবাহিনী এলে তাঁরা স্বাগতই জানাবেন৷

অবশ্য বেসামরিক নাগরিকদের বড় অংশটাই এ বিষয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না৷ গ্যাস স্টেশনের এক তরুণ কর্মী শুধু বললেন, ‘‘আমরা আসলে ভয় পাচ্ছি৷ সবুজ মানবেরা আমাদের সঙ্গে যেমন আচরণই করুক, তাঁদের সমালোচনা আমাদের মৃত্যু ডেকে আনতে পারে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য