আহত ফিলিস্তিনিকে হত্যার দায়
৫ জানুয়ারি ২০১৭গত বছরের মার্চ মাসের ২৪ তারিখ দখলকৃত পশ্চিম তীরের হেবরন শহরে আব্দুল ফাতাহ আল-শরিফ নামের ২১ বছর বয়সি ঐ ফিলিস্তিনি নাগরিককে হত্যা করা হয়৷ ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, শরিফ ও আরেকজন ফিলিস্তিনি নাগরিক ইসরায়েলি এক সেনাকে ছুরি মেরে আহত করার পর, তাদের দু'জনকে গুলি করা হয়৷ এতে দু'জনই আহত হয়ে পড়ে যান৷ সেই অবস্থায় আবারও শরিফের মাথায় গুলি করেন সার্জেন্ট আজারিয়া৷ এতে তার মৃত্যু হয়৷ পুরো ঘটনাটির একটি ভিডিও সেই সময় অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে৷
তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে গঠিত একটি প্যানেল আজারিয়াকে অভিযুক্ত করেন৷ প্যানেলের পক্ষ থেকে রায় ঘোষণা করেন কর্নেল মায়া হেলার৷ তিনি বলেন, যেহেতু ঐ ফিলিস্তিনি কোনো হুমকি ছিলেন না তাই তাকে গুলি করার কোনো কারণ ছিল না৷ ‘‘তিনি (আজারিয়া) মনে করেছেন এই সন্ত্রাসীর (শরিফ) মরা উচিত তাই তিনি গুলি করেছেন'', বলেন কর্নেল হেলার৷ তবে আজারিয়ার পক্ষের আইনজীবীদের দাবি, শরিফের কাছে আত্মঘাতী কিছু থাকতে পারে সেই ভয় থেকে তাকে গুলি করেন আজারিয়া৷
বুধবার আদালতে প্রবেশের সময় আজারিয়া হাসিখুশি ছিলেন৷ কিন্তু রায় ঘোষণার সময় তাকে বিচলিত হতে দেখা গেছে৷ আর তার মা বিচারকের উদ্দেশে চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘‘তোমার নিজেকে নিয়ে লজ্জা পাওয়া উচিত৷''
আজারিয়াকে কতদিনের জন্য কারাগারে থাকতে হবে তা জানা যাবে ১৫ জানুয়ারি৷ তার সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে৷ তবে শরিফের বাবা ইউসরি আল-শরিফ আজারিয়ার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড চেয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘ইসরায়েলের কারাগারে আমাদের সন্তানেরা একই দায়ে যে শাস্তি পেয়ে থাকে তার ক্ষেত্রেও সেটাই হওয়া উচিত৷''
এদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আজারিয়াকে ক্ষমা করে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন৷ ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, ‘‘আজকের দিনটি আমাদের সবার জন্য কঠিন ও বেদনাদায়ক – ইলোর ও তার পরিবারের জন্য আরও বেশি৷ আমি ইলোর আজারিয়াকে ক্ষমা করে দেয়া সমর্থন করছি৷'' প্রতিরক্ষামন্ত্রী আভিগডোর লিবারমানও একসময় আজারিয়াকে ক্ষমা করে দেয়ার পক্ষে ছিলেন৷ তবে মে মাসে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা লিবারমান বুধবার রায় ঘোষণার পর বলেন, তিনি রায়ের সঙ্গে একমত না হলেও সেটি মানা উচিত৷ ‘ইসরায়েলি ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউট'-এর আমিচাই কোহেন বলেন, ‘‘আপনি যদি চান বিচার ব্যবস্থার প্রতি সবার আস্থা জন্মাক তাহলে আপনাকে এই ধরণের রায় দিতে হবে৷ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশ দ্বারা আদালত প্রভাবিত হতে পারে না৷''
এর আগে ২০০৪ সালে ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা এক ব্রিটিশ নাগরিককে হত্যার দায়ে একজন ইসরায়েলি সেনাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল৷
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
ডায়ানা বুট্টু টুইটারে লিখেছেন, হত্যাকাণ্ডের ভিডিও প্রকাশ হওয়ার কারণেই আজারিয়ার বিরুদ্ধে এই রায় দেয়া হয়েছে৷
একই বক্তব্য আহমেদ শিহাব-আলদিনের৷
তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলছে, ভিডিও প্রকাশের আগেই তদন্ত শুরু করা হয়েছে৷
এদিকে, আজারিয়ার বিরুদ্ধে রায় দেয়া বিচারকদের প্রতি সহিংস হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোস্ট দেয়ায় দু'জন ইসরায়েলিকে বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
জেডএইচ/ডিজি (এএফপি, এপি)