‘আশার আলো নিভে গেছে’
২০ আগস্ট ২০১৩একদিন আগে রবিবার, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আগামী নির্বাচনের সরকার ব্যবস্থা নিয়ে তাঁর অবস্থান জানিয়ে দিয়েছেন৷ তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার দাবি নাকোচ করে দিয়ে বলেছেন, ‘‘সংবিধান থেকে এক চুলও নড়বো না''৷ অর্থাৎ, নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী৷ জানা গেছে, সরকার সেই মতোই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ আর শেখ হাসিনাই হচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান৷
এর একদিন পর, সোমবার, এর জবাবে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ‘‘জনগণ আন্দোলনে গেলেই কিন্তু চুল উড়ে যাবে৷ এমন আন্দোলন হবে, চুল উড়ে দিশেহারা হয়ে যাবেন৷ চুল তো থাকবেই না, অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়বে৷'' তিনি বলেন, নির্বাচন দিতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই৷
দেশের প্রধান দুটি দলের দুই নেত্রীর এই চরম বিপরীত অবস্থানের কারণে হতাশ হয়ে পড়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা৷ সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদাক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, তাঁরা যা বলছেন তা যদি তাঁদের মনের কথা হয় তাহলে সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই নেই৷ সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য৷ এই সংঘাতে দেশের পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়, তা বলা কঠিন৷ তবে এতে যে দেশ এবং দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায়৷
তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে বলা হয় সমঝোতার শিল্প৷ আমাদের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল সমঝোতা থেকে এখন অনেক দূরে চলে গেছে৷ তারা এখন যুদ্ধে নামবে বলে মনে হয়৷ তবে সেই যুদ্ধে দু'দলের কেউই না জিততেও পারেন৷ অন্য কোনো পক্ষ সুযোগ নিতে পারে৷
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, মাত্র ২-৩ দিনের মধ্যে রাজনীতি চরম অনিশ্চিত হয়ে উঠল৷ এর আগে দুই বড় দলের যতই দূরত্ব থাকুক, সংলাপ-সমাঝোতার আশা ছিল৷ শীর্ষ নেতৃত্ব অন্তত সংলাপের কথা বলেছেন৷ কিন্তু এখন যে যাঁর অবস্থান নিয়ে ফেলেছেন৷ দুই দল দুই মেরুতে৷ তাই দেশের মানুষ আতঙ্কিত৷ তাঁর মতে, আশার যে শেষ আলোটুকু ছিল তা প্রধানমন্ত্রী এবং পরে বিরোধী দলীয় নেত্রীর কথায় নিভে গেছে৷ এখন বাকি আছে চরম সংঘাত আর সংঘর্ষ৷
হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, আগে যে যাই বলুন না কেন এখন মনে হচ্ছে তাঁরা কি করবেন তা তাঁরা আগেই থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন৷ সংলাপ, সমঝোতার কথা বলে তাঁরা সময় নষ্ট করেছেন মাত্র৷
তিনি বলেন, দেখে-শুনে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সমঝোতা ছাড়াই নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে৷ আর বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে তা প্রতিহত করার চেষ্টা করার জন্য প্রস্তুত৷ তাঁর মতে, এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হলে, আর সব দল যদি অংশ না নেয়, তাহলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না৷
ওদিকে ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, এই পরিস্থিতি নির্বাচন হবে বলে তাঁর মনে হয় না৷ হয়ত সরকার তার ক্ষমতার মেয়াদ প্রলম্বিত করবে৷ কিন্তু তাতে নতুন করে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, যা দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকেই ঝুঁকির মুখে ফেলে দেবে৷