আফ্রিকার জন্য ‘মার্শাল প্ল্যান'
১৯ জানুয়ারি ২০১৭আফ্রিকায় দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম জার্মানির মতো সমৃদ্ধ দেশের পক্ষে শুধু নৈতিক দায়িত্বই নয়, তাদের নিজেদের স্বার্থেও বটে – বার্লিনে তাঁর ‘‘মার্শাল প্ল্যান'' উপস্থাপন করার সময় বললেন জার্মান উন্নয়ন সাহায্য মন্ত্রী গ্যার্ড ম্যুলার৷
‘‘মানুষের জীবন বাঁচানো, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবকে সীমিত করা, ‘জলবায়ু উদ্বাস্তুদের' ব্যাপক অভিবাসন রোধ করা ও আফ্রিকার তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সাহায্য করা জার্মানি তথা ইউরোপের স্বার্থে'', বলেন ম্যুলার৷
তাঁর ৩৩ পাতার খসড়ায় শিক্ষা, বাণিজ্য, ব্যবসার উন্নয়ন ও জ্বালানি শক্তির ক্ষেত্রে সমতামূলক সহযোগিতার এক ‘‘নতুন পর্যায়ের'' প্রস্তাব দিয়েছেন ম্যুলার৷ যুগপৎ আফ্রিকা থেকে রপ্তানি করা পণ্যের জন্য ইউরোপের বাজারে উন্নততর প্রবেশাধিকার, অপরদিকে আফ্রিকা থেকে ইউরোপ অভিমুখে কালো টাকার স্রোত ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলির কর ফাঁকি দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়েছে এই পরিকল্পনায়৷
ম্যুলারের খসড়ায় বলা হয়েছে যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম, সুশাসন ও মহিলাদের পরিস্থিতি উন্নয়নের ক্ষেত্রে আফ্রিকার সরকারবর্গেরও একটি ভূমিকা থাকবে৷ আফ্রিকার যে সব দেশ প্রয়োজনীয় সংস্কারের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, তাদের জন্য আরো ২০ শতাংশ উন্নয়ন সাহায্যের ব্যবস্থা রাখছে জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রণালয়৷
জার্মান শিল্পসংস্থাগুলির ভূমিকা
ম্যুলারের ‘‘মার্শাল প্ল্যানে'' জার্মান শিল্পসংস্থাগুলির প্রতি আফ্রিকার ভবিষ্যৎ উন্নয়নে একটি বৃহত্তর ভূমিকা নেবার আহ্বান জানানো হয়েছে৷ ‘‘আফ্রিকার জন্য বেসরকারি অর্থায়নের একটি নতুন মাত্রা প্রয়োজন'', বলেছেন ম্যুলার৷ বেসরকারি পুঁজিবিনিয়োগ আকর্ষণ করার জন্য সরকারি উন্নয়ন সাহায্যকে ‘‘ক্যাটালিস্ট'' হিসেবে নিয়োগ করা উচিত, বলে তাঁর অভিমত৷
জার্মান উন্নয়ন মন্ত্রী বেসরকারি পুঁজিবিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য অপরাপর পদক্ষেপ নিতে চান, যেমন যে সব জার্মান কোম্পানি আফ্রিকায় ব্যবসা করছে, তাদের জন্য রপ্তানি ঋণের গ্যারান্টি৷ মোট চার লাখ জার্মান কোম্পানির মধ্যে মাত্র এক হাজারটি কোম্পানি বর্তমানে আফ্রিকায় কর্মরত৷ আফ্রিকায় পুঁজিবিনিয়োগে জার্মান কোম্পানিগুলির দ্বিধার কারণ হল, ব্যাপক দুর্নীতি, রাজনৈতিক স্থিতিহীনতা ও অতিরিক্ত আমলাতন্ত্র৷
কিছু প্রশ্ন থেকে যায়
যে ৬০০ জার্মান কোম্পানির আফ্রিকার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে, তাদের সমিতি ‘আফ্রিকা ভেরাইন'-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টফ কানেগিসার চান এমন সব ‘‘বাস্তব পন্থা'' ও পদক্ষেপ, যা কোম্পানিদের ব্যবহারযোগ্য হবে৷
ম্যুলারের প্রস্তাবিত অপরাপর পদক্ষেপ কার্যকরি করা তাঁর নিজের মন্ত্রণালয় কেন, স্বয়ং জার্মান সরকারের হাতেও নেই, যেমন ইউরোপের বাজারে আফ্রিকান পণ্যের প্রবেশাধিকার, যা নির্ধারণ করার দায়িত্ব ইউরোপীয় ইউনিয়নের৷ জার্মান সরকারের অপরাপর মন্ত্রণালয়ও এ যাবৎ ম্যুলারের পরিকল্পনাকে প্রকাশ্যভাবে অনুমোদন করেনি৷ কিন্তু যে কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রথম প্রশ্ন হল অর্থায়ন৷ সেই অর্থায়নের ব্যবস্থা করা গ্যার্ড ম্যুলারের একার দায়িত্ব হতে পারে না৷
ডানিয়েল পেলৎস/এসি