আফগানিস্তানে মেয়ে হয়ে জন্মানো কী পাপ?
৩ আগস্ট ২০১০একসময় তালেবান শাসন করতো আফগানিস্তান৷ সেসময় মেয়েদের সঙ্গে করা হত অমানবিক সব আচরন৷ স্কুলে যেতে দেয়া হতনা তাদের৷ আর প্রয়োজনে বাইরে বের হতে হলে সঙ্গে অবশ্যই থাকতে হত পুরুষ কোন আত্মীয়কে৷ এবং অবশ্যই বোরখা পরতে হত৷ সেসময় যেসব মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হত, কোথায় তারা বিচার পাবে তা না উল্টো তাদেরকেই প্রকাশ্যে ফাঁসিতে ঝুলতে হত৷ কারণ তারা ‘দুশ্চরিত্রা'!
তালেবান শাসন শেষ হয়েছে৷ কিন্তু এখনো আফগানিস্তানে মেয়েদের ভাগ্যের উন্নতি হয়নি৷ এখনো রাজনীতিতে সোচ্চার হওয়ার জন্য মেয়েদের দেয়া হয় মৃত্যুর হুমকি৷ এই ‘অপরাধে' অনেক নারীকে হত্যার খবরও পাওয়া গেছে৷ অনেককে আবার রাজনীতি থেকে সরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে৷
এতো গেল সামাজিকভাবে নারী নিগ্রহের ঘটনা৷ কিন্তু পরিবারের সদস্য অর্থাৎ আপনজনদের কাছ থেকেও কী আফগান নারীদের মুক্তি আছে? উত্তর – না৷ যেমন গুল আন্দাম৷ ২৪ বছরের এই মেয়েটি ভালবেসে বিয়ে করেছিল এক যুবককে৷ কিন্তু এই বিয়ে মেনে নেয়নি তার আপন দুই ভাই৷ তাইতো ঐ দুই ভাই নিজের বোনকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল৷ এরপর বিচারে গুলের দুই বছরের কারাদন্ড হয়৷
কিন্তু এক বছর পর যখন গুল জেল থেকে ছাড়া পায় তখন তার ভাইয়েরা তাকে তাদের পছন্দের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায়৷ কিন্তু গুল তাতে রাজি না হওয়ায় তাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে তার ভাইয়েরা৷ এই ভয়ে গুল এখন আশ্রয় নিয়েছে নারীদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে৷ যেখানে আর ২৫ জন নারী রয়েছে৷ যাদের সকলেরই এ ধরণের কোন না কোন গল্প রয়েছে৷ যেমন শবনম৷ তার বয়স যখন মাত্র ১৩ তখন তার বাবা ঋণ পরিশোধের উপায় হিসেবে তাকে ৫০ ঊর্ধ্ব এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দিয়ে দেয়৷ ঐ ব্যক্তি ছোট খাট যে কোন কারণই হোক না কেন, সবসময় শবনমকে মারত৷
আফগানিস্তানে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে যেসব নারীরা বাস করছেন তাদের ধরা হয় সবচেয়ে ভাগ্যবতী হিসেবে! কেননা আর যাই হোক নিত্যদিনের যন্ত্রণা থেকেতো তারা মুক্ত!
কিন্তু কবে মুক্তি মেলবে আফগান নারীদের?
প্রতিবেদন: জাহিদুল হক
সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়