1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আজ পন্ডিত রবিশঙ্কর-এর নব্বইতম জন্মদিন

৭ এপ্রিল ২০১০

সঙ্গীত আর অনুভূতি৷ সৃজনশীলতা আর বোধ৷ এই চেতন অচেতনের মেরুমায়াকে এক তারে বাঁধেন তিনি৷ তারপর বিশ্বকে উপহার দেন তাঁর সৃজনের জাদুস্পর্শ৷ তিনি পন্ডিত রবিশঙ্কর৷ বুধবার তাঁর নব্বই বছর বয়স হলো৷

https://p.dw.com/p/MpDX
সুরের সাধনায় আজও মগ্ন পন্ডিত রবিশঙ্করছবি: UNI

ঐন্দ্রজালিকের মত সুরের মায়াজাল বিছিয়ে দিতে পারেন তিনি৷ তিনি রবিশঙ্কর৷ পশ্চিম বিশ্বে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের প্রতি শ্রদ্ধা আর প্রেম তৈরি করতে তাঁর ভূমিকা যেমন অনস্বীকার্য, তেমনই দীর্ঘ জীবনে অসংখ্য নতুন সুর আর নতুন রাগ রাগিনী সৃষ্টিতে তাঁর বৈদগ্ধে মুগ্ধ হয়েছেন বারবার পূর্ব পশ্চিম নির্বিশেষে গোটা দুনিয়ার সঙ্গীত রসবেত্তারা৷ বুধবার তাঁর নব্বই বছরের জন্মদিনে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শুভেচ্ছা আর শ্রদ্ধার সঙ্গে যুক্ত হোক আমাদের বিনম্র মুগ্ধতা৷

১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল ভারতের বারানসীতে জন্ম রবিশঙ্করের৷ জন্ম এক সম্ভ্রান্ত বাঙালি পরিবারে৷ সাত ভাইয়ের সবচেয়ে কনিষ্ঠ রবিশঙ্করের আসল নাম রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরি৷ ঝালোয়ারের মহারাজার দরবারে অর্থদপ্তরের প্রধান ছিলেন তাঁর পিতা শ্যাম শঙ্কর৷ বড়ভাই বিশ্ববন্দিত নৃত্যশিল্পী উদয়শঙ্করের সঙ্গে মাত্র দশ বছর বয়সে নাচের অনুষ্ঠান করতে প্যারিসে চলে যান বালক রবীন্দ্র৷ তখন থেকেই তাঁর ক্ষুরধার প্রতিভার বিচ্ছুরণ চোখে পড়ে সকলের৷ একটু বড় হওয়ার পর যখন কৈশোরের শেষ ধাপে পা, সেই আঠারো বছরে সুরের টানে চলে গেলেন মাইহার৷ চিরাচরিত প্রথার গুরুকুল পদ্ধতিতে মার্গসঙ্গীতের অপরূপ সৃজনে তাঁকে দীক্ষা দিলেন উস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ৷

আলাউদ্দিন খাঁর পুত্র আলি আকবর আর কন্যা অন্নপূর্ণা দেবীর সঙ্গেই শুরু হল রবিশঙ্করের শিক্ষা৷ কন্ঠসঙ্গীত তো অবশ্যই, বাদ্যযন্ত্রের মধ্যে সেতার থেকে রুদ্রবীণা, সুরবাহার, সুরশৃঙ্গার আর রাবাবে সিদ্ধ হলেন তিনি৷ ১৯৪৪ সালে মার্গসঙ্গীতের শিক্ষা সম্পূর্ণ করে রবিশঙ্কর চলে গেলেন বম্বে৷ যোগ দিলেন আইপিটিএ-তে৷ শুরু হল সঙ্গীতের শান্তি আর আনন্দের পথে তাঁর বর্ণময় পথ চলা৷

Indiens großer Sitar Spieler Pandit Ravishankar
কন্যা অনুষ্কাশঙ্করকে সঙ্গে নিয়ে কোলকাতায় এক অনুষ্ঠানে বাজিয়েছিলেন শিল্পী কয়েক মাস আগেছবি: AP

১৯৫৫ থেকে আন্তর্জাতিক আঙিনায় রবিশঙ্করের আত্মপ্রকাশ হতে পারত পশ্চিমের নামজাদা বেহালাশিল্পী ইহুদি মেনুইনের আমন্ত্রণেই৷ ব্যক্তিজীবনের কিছু সমস্যার কারণে সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করতে পারেন নি রবিশঙ্কর৷ পরের বছর ইউরোপ থেকে শুরু করলেন তাঁর বিশ্বযাত্রা৷ পশ্চিমের কাছে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের স্বর্ণভান্ডার উন্মুক্ত করেছেন তিনি, উত্তর এবং দক্ষিণ ভারতের অপরূপ সুরবৈশিষ্ট্য যেমন প্রদর্শন করেছেন, তেমনই শিখিয়েছেন বিশ্বজুড়ে তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রীকে৷ দেশবিদেশের অসংখ্য সম্মান আর শিরোপায় ভূষিত হয়েছেন রবিশঙ্কর৷ তাঁর বাদনশৈলীর যে নিজস্বতা তা পরিচিত হয়েছে শুধুমাত্র রবিশঙ্করের স্টাইল হিসেবেই৷

বুধবার শিল্পী রবিশঙ্করের নব্বই বছরের জন্মদিন৷ তাঁর সম্মানে এই দিনটিতে শিকাগোর বিশ্বখ্যাত কালচারাল সেন্টার আয়োজন করছে একটি বিশেষ সাঙ্গীতিক সন্ধ্যার৷ যে অনুষ্ঠানে রবিশঙ্করের ‘ইস্ট মিটস ওয়েস্ট মিউজিক' অ্যালবামটি প্রকাশিত হবে৷পাওয়া যাবে গত নয় দশক ধরে সৃষ্ট তাঁর অনবদ্য সৃজনের একটি সংকলন৷

রবিশঙ্কর ইনস্টিট্যুট ফর মিউজিক অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টস বা রিমপা এবং তাঁর পরিবারের সহায়তায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানেই প্রদর্শিত হবে ২০০২ সালে শিল্পীর সঙ্গীতজীবন নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র ‘রবিশঙ্কর বিটুইন টু ওয়ার্ল্ডস'৷ শিকাগোর ক্লাউডিয়া ক্যাসিডি থিয়েটারে বুধবার সন্ধ্যা ছটায় শুরু হবে শিল্পীর জন্মদিনের অনুষ্ঠানগুলি৷ পরে সন্ধ্যা আটটায় রবিশঙ্করের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ জানিয়ে ভারতীয় মার্গসঙ্গীতের তিন উদীয়মান তরুণ নক্ষত্রের অনুষ্ঠানও রয়েছে ওই একই থিয়েটারে৷ এই অনুষ্ঠানে সেতার পরিবেশন করবেন পূর্বায়ন চট্টোপাধ্যায়, বাঁশিতে হরিপ্রসাদ চৌরাশিয়ার পুত্র রাকেশ চৌরাশিয়া এবং তবলায় যোগেশ সামসি৷

প্রতিবেদক : সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

সম্পাদনা : দেবারতি গুহ