1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আগুনের সঙ্গে বসবাস

১৩ জুন ২০১০

আফ্রিকার একটি ছোট্ট দ্বীপের অধিকাংশ এলাকা জুড়ে রয়েছে এক আগ্নেয়গিরি৷ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে তিন হাজার মিটার উপরের অ্যাটলান্টিক মহাসাগর তীরবর্তী আফ্রিকার দেশ কেপ ভ্যার্দ দ্বীপপুঞ্জের এই জীবন্ত আগ্নেয়গিরিটির নাম পিকো দো ফোগো৷

https://p.dw.com/p/Npnt
ফোগো দ্বীপছবি: DW

এই গিরির নাম অনুসারেই ছোট্ট দ্বীপের নাম৷ যে পর্বতের মধ্যে এখনো উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে আগুন, কোন ঘোষণা ছাড়াই ফেটে উঠতে পারে যে কোন সময়৷ সেই আগ্নেয়গিরির পাদদেশেই বাস প্রায় ১২০০ মানুষের৷ গ্রামটির নাম কালদেরাস সমতল৷ এক কথায় জীবনকে হাতের মুঠোয় রেখে বসতি৷ কিন্তু এ জন্য কি সেখানকার মানুষ ভয়ে কিংবা শঙ্কায় রয়েছেন? মোটেই না৷ পর্যটকদের গাইড আলসিন্দো জানালেন সর্বশেষ কবে বিস্ফোরিত হয়েছিল ফোগো, ‘সেই ১৯৫১ সালের কথা৷ যখন এই আগ্নেয়গিরিটি জেগে উঠেছিল, চারদিকে ছড়িয়েছিল লাভা৷ আগুনের পথ সৃষ্টি হয়েছিল, তারপর সেই আগুন লাভা নেমে গিয়েছিল নীচে৷ সমুদ্রে৷'

Koproduktion Kap Verde Fogo
পিকো দো ফোগো পর্বতছবি: DW/Renate Krieger

ফোগো মানুষকে টানে৷ কাছে নেয়৷ তাই পর্বতচারীদের রোমাঞ্চ ‘চলো উপরে উঠি আরও উপরে... তারপর দেখে আসবো সেই পাহাড়ের জ্বালামুখ৷' তাদেরকে সঙ্গ দেয় আলসিন্দোর মত বেশ কয়েকজন গাইড, পথ প্রদর্শক৷

সেই ছেলেবেলা থেকে ২৯ বছরের এই যুবক দেখে আসছে আগ্নেয়গিরিটিকে৷ বললেন, ‘আমার ভালোবাসার সবটুকু এই আগ্নেয়গিরিটিকে ঘিরে৷ আমি মনে করি না একে আমি ত্যাগ করতে পারবো৷ এ জায়গা থেকে দূরে চলে যেতে পারবো৷ আমি এখানে কাজ করি৷ সপ্তাহান্তের ছুটিতে ঘুরে বেড়াই, বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল খেলি... সবই এই পাহাড়ের বুকে৷ আমি এখানে সুখি, খুব সুখি৷'

Kap Verde
ফোগো’র মানুষদের বহুদূর থেকে পানীয় জল আনতে হয়ছবি: DW#

এই কথা কেবল আলসিন্দোর নয়, কালদেরাস'এর গ্রামবাসীর৷ আজ এই ছোট্ট দ্বীপটির আগ্নেয়গিরিটি ভাগ্য খুলে দিয়েছে তাদের৷ প্রায় প্রতিদিনই সেখানে আসছেন পর্যটকরা৷ কেবল যে পর্যটনের ব্যবসাই সব, তা নয়৷ গ্রামবাসী পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চাষাবাদ করছেন৷ ফসল ফলাচ্ছেন৷

দ্বীপের মানুষের মাথাপিছু আয় দেশটির গড় মাথাপিছু আয়ের চেয়ে কম৷ রয়েছে পানি এবং বিদ্যুৎ সংকট৷ কিন্তু এরপরেও সুখি তারা৷ সুখ বিষয়টি সত্যিই আপেক্ষিক৷

আর এই দারিদ্র দূর করতে এই তো কয়েকদিন আগে সেখানকার সরকার গ্রহণ করেছে এক প্রকল্প৷ যে প্রকল্পে কৃষিকাজকেই দেয়া হয়েছে প্রাধান্য৷

কথা হলো গ্রামের কৃষক জোসে আন্তোনিও ফার্নান্দেজের সঙ্গে৷ তাঁর স্ত্রী অডিলিয়া প্রতি মাসে কিছু টাকা উপার্জন করে হাতে বানানো জ্যাম জেলি বিক্রি করে৷ এই কয়েক দিন আগে তার এক বন্ধুর কল্যাণে কিছু অর্থের মুখ এই পরিবারটি দেখতে পাচ্ছে৷ দুই বন্ধু মিলে পর্যটকদের জন্য ঘর ভাড়া দিচ্ছে৷

সত্যিই তো তাই৷ ঘর ভাড়া দিয়ে এই কৃষকের আয় হয় বছরে ২৩০০ ইউরোর মতো৷ অন্যদিকে, ২০০৬ সাল থেকে তিনি তাঁর জমিতে উৎপাদিত আঙ্গুর বিক্রি করছেন স্থানীয় সমবায় সমিতির কাছে৷ সমিতি ঐ আঙ্গুর বিক্রি করে ফোগো শহরের বড় এক ওয়াইন উৎপাদকের কাছে৷ এতেও বেশ ক' পয়সা আসছে কালদেরাস'বাসীদের পকেটে৷

এই তো কিছু দিন আগে পাহাড়ি এই গ্রামে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে একটি স্কুল৷ কিন্তু প্রাথমিক এই বিদ্যালয়ে এখনো শিশুদের যাওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়নি৷ সরকার বলছে, শিশুদের স্কুলে পাঠাও, কর শিক্ষিত৷ কিন্তু কেন যে এ ব্যাপারে খুব উৎসাহ দেখা যাচ্ছে না, তা বোঝা যাচ্ছে না৷

প্রতিবেদন: সাগর সরওয়ার
সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন