আওয়ামী লীগে জামায়াত!
১৭ মার্চ ২০১৪৫ই জানুয়ারির নির্বচনের আগে, গত ৩১শে ডিসেম্বর, কুষ্টিয়ায় জামায়াতের কেন্দ্রীয় সদস্য নওশের আলী আওয়ামী লীগে যোগ দেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফের হাত ধরে৷ হানিফের নির্বাচনি জনসভায় প্রকাশ্যে যোগদানের ঘোষণা দেন তিনি৷ এই জামায়াত নেতা কুষ্টিয়া মোটর যান শ্রমিকদেরও নেতা৷ বলা বাহুল্য, হানিফ তখন নির্বাচনকে সামনে রেখেই নওশের আলীকে আওয়ামী লীগে নিয়ে আসেন৷ আর আলী নাশকতার একাধিক মামলা থেকে বাঁচতে আওয়ামী লীগে আশ্রয় নেন৷ এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়৷
তবে এই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি৷ শনিবার রাতে পাবনার আতাইকুলা ইউনিয়ন শাখা জামায়াতের নায়েবে আমির রাজ্জাক হোসেন রাজার নেতৃত্বে জামায়াতের ২ শতাধিক স্থানীয় নেতা-কর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেন৷ কুষ্টিয়ায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্সের উপস্থিতিতে তাঁরা যোগ দেন৷ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, তাঁদের মধ্যে যুদ্ধাপরাধী কেউ নেই, তাই তাঁদের যোগদানে আপত্তি করা হয়নি৷ ওদিকে আতাইকুলা থানা পুলিশ জানায়, যাঁরা যোগ দিয়েছেন তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধেই সংসদ নির্বাচনে হরতাল-অবরোধে নাশকতার মামলা আছে৷ স্থানীয় পর্যায় থেকে জানা গেছে যে, যোগদানকারী জামায়াতের নেতারা মামলা থেকে বাঁচতেই এই কৌশল অবলম্বন করছেন৷ উল্লেখ্য, যুদ্ধাপরাধের মামলায় অভিযুক্ত জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামীর বাড়ি পাবনায়৷
এ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপন ড. শান্তনু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জামায়াত সদস্যদের আওয়ামী লীগে যোগ দেয়ার সুযোগ করে দিয়ে শুধু দল হিসেকে আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না, বরং জাতিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে৷ কারণ স্বাধীনতার পক্ষ এবং বিপক্ষ শক্তির যে একটি বিভাজন রেখা আছে, তা মুছে দেয়ার প্রবণতা এর মধ্যে লক্ষণীয়৷''
তিনি মনে করেন, স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের যে নেতারা জামায়াতকে তাদের দলে যোগ দেয়ার সুযোগ করে দিচ্ছেন, তাঁরা যে ভোটে সুবিধা নিতে এটা করছেন, তা নয়৷ এর পিছনে আর্থিক লেনদেন থাকতে পারে৷ তাঁরা অর্থের বিনিময়ে জামায়াত সদস্যদের আওয়ামী লীগে আশ্রয় দিচ্ছেন৷ অন্যদিকে এই যোগদানের মাধ্যমে জামায়াত সদস্যরা যে আদর্শগত দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছেন, তা মনে করেন না শান্তনু মজুমদার৷ তাঁর কথায়, ‘‘জামায়ত এখন নানা দিক দিয়ে চাপের মুখে রয়েছে৷ সাধারণ মানুষের কছেও তারা প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে৷ তাঁদের নেতারা যুদ্ধাপরাধ মামলার আসামি৷ তাঁরা নাশকতাসহ নানা সহিংসতার মামলার আসামি৷ তাই নিজেদের বাঁচাতে কৌশল হিসেবে তাঁরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছেন৷''