অস্ট্রেলিয়ায় আক্তারকে খুঁজে দিল ইন্টারনেট
১৮ নভেম্বর ২০১০আক্তারের খোঁজে নামার আগে এটুকুই ছিল প্রাপ্ত তথ্য৷ ইন্টারনেট ঘেঁটে অস্ট্রেলীয় গণমাধ্যম থেকে আরো কিছু তথ্য পাওয়া গেলে৷ কিন্তু এই দিয়েইতো রেডিও রিপোর্ট তৈরি সম্ভব নয়, বরং প্রয়োজন আক্তারের মন্তব্য, ডাক্তারের মন্তব্য সঙ্গে সম্ভব হলে তার সহযোগিদের কথাবার্তা৷
টেলিফোন, ই-মেল
শুরু হলো আক্তারের খোঁজ৷ জার্মানির বনে ডয়চে ভেলে কার্যালয়ে বসে অস্ট্রেলিয়ায় খোঁজাখুজি৷ প্রথমে ফেসবুকে খোঁজ, পাওয়া গেল অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী এক সাংবাদিককে৷ নাম ফজলুল বারী, তিনি আছেন সিডনিতে৷ ফোনে বারী ভাইকে পুরোটা বলার পরে বুঝলাম, তিনিও বিষয়টি সম্পর্কে তেমন অবগত নন৷ তাই বললেন, একটু খোঁজ নিয়ে তোমাকে জানাবো৷
যাই হোক, খোঁজের জন্য সময় দিলাম বারী ভাইকে৷ এদিকে, আমার হাতে সময় কম৷ এরই মাঝে জানলাম ছেলেটা অস্ট্রেলিয়ায় আছে আর দুই-তিন দিন৷ তাই যা করার এখনই করতে হবে৷ অবস্থা বেগতিক, পরদিন আবারো ফোন বারী ভাইকে৷ তিনি জানালেন, এটম রহমান নামক একজনকে ই-মেল করা হয়েছে৷ এখনো উত্তর আসেনি৷ কিন্তু আমার যে অপেক্ষার তর সইছিল না৷
ডাক্তারের খোঁজ দিল গুগল
এখন উপায়! দ্বারস্থ হলাম গুগল-এর৷ দিন কয়েক আগেই গুগল প্রধান জানিয়েছিলেন, সবই নাকি আছে তাঁর ভাণ্ডারে৷ কথা মিথ্যা নয়৷ আগস্টে আক্তারের অপারেশন হয় ক্যাবরিনি হাসপাতালে৷ সেখানে ফোন করে পাওয়া গেল, ডাক্তার জন গ্রিফিৎসকে৷ আক্তারের অপারশন করেছেন তিনি৷ কিন্তু ডাক্তার নিজে সাক্ষাৎকার দিতে রাজি, তবে আক্তারের কোন খোঁজ দেবেন না৷
কি মুশকিল! ডাক্তারের সাক্ষাৎকার পেলাম কিন্তু রোগীরই খবর নেই৷ এমন অনুষ্ঠান প্রচার করলে নির্ঘাত লোকে হেসে খুন হবে৷ আবার গুগল৷ কিন্তু গুগলও এখনো আক্তারের খোঁজ পায়নি৷ তবে পেলাম জুলিয়া'র খোঁজ৷
জুলিয়া পর্ব
চিলড্রেন ফার্স্ট নামক এক সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তা জুলিয়া৷ তাকে পুরো বিস্তর বলতেই জানালেন, হ্যাঁ, আক্তারকে আমরাই চিকিৎসা করিয়েছি৷ তবে, তার সঙ্গে কথা বলতে হলে এটম রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করো৷ কেননা, এটমই আক্তারের স্থানীয় অভিভাবক৷
আশেপাশে আক্তার
আমার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল আক্তার জুলিয়ার আশেপাশেই আছে৷ তবুও নিয়ম মেনে, এটমকে ফোন৷ কিন্তু তাকে পাওয়া গেলোনা৷ জার্মানিতে সেদিন বুধবার, সকাল আটটা৷ জুলিয়াকে আবারো ফোন দিলাম, এবার খানিকটা মন গলল তাঁর৷ বললো, এই ন্যাও, আক্তারের সঙ্গে কথা বলো৷
অসহায় আক্তার
আক্তার ফোন ধরেই শোনালো তাঁর গল্প৷ খানিকটা অশ্রুসিক্ত আমি৷ কতটা অসহায় মানুষের জীবন৷ দু'দুটো গুলি বিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে ছিল আক্তার৷ মৃত্যুযন্ত্রণায় কাতর সে৷ অথচ কেউ তাকে সাহায্যে এগিয়ে আসেনি৷ শেষমেষ এক রিকশাওয়ালা আক্তারকে নিয়ে হাসপাতালের পথ ধরলো৷
মজার বিষয় হচ্ছে, চা ফেরি করা আক্তারকে অস্ট্রেলিয়া পাঠিয়ে চিকিৎসা করাতে সহায়তা করেছে এক হকার৷ সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষরা এভাবেই বুঝি এগিয়ে আসে একে অন্যের সহায়তায়৷ এখন প্রায় পুরোটাই সুস্থ সে৷ এই তরুণের বেঁচে ওঠার গল্প শুনতে কান পাতুন ডয়চে ভেলেতে, আগামী বুধবার সকালে...
লেখক: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: সাগর সরওয়ার