অর্থের অভাবে বন্ধ হয়ে গেল অন্য গ্রহে প্রাণী খোঁজার উদ্যোগ
২৭ এপ্রিল ২০১১আর্থিক অনটনের কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সরকারি খাতে ব্যয় সংকোচ চলছে৷ এমনকি শিল্পোন্নত বিশ্বেও কোষাগারে টান পড়েছে৷ ‘লাগে টাকা দেবে গৌরী সেন' – এমন মনোভাব এখন বদলাতে হচ্ছে৷
এমন বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব এবার পড়ছে মহাশূন্যের উপর৷ মানুষ জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজেকে প্রশ্ন করেছে, ‘‘আমরা কি একা, নাকি অন্য গ্রহেও প্রাণী রয়েছে?'' কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য যে প্রযুক্তির প্রয়োজন, তা মানুষের নাগালে আসতে লেগেছে আরও অনেক সময়৷ উড়ন্ত চাকতি করে অন্য গ্রহের প্রাণী প্রায়ই পৃথিবী ঘুরতে আসে – এমন দাবি অবশ্য অনেক কাল ধরেই শোনা যায়, যদিও তার সপক্ষে অকাট্য প্রমাণ কখনো পাওয়া যায় নি৷
১৯৬০ সালে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক নামের এক মহাকাশ বিশেষজ্ঞ মহাশূন্যে প্রাণের খোঁজে এক প্রকল্প শুরু করেন, যার পোশাকি নাম ‘সার্চ ফর এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স' বা সংক্ষেপে ‘সেটি'৷ উড়ন্ত চাকতির খোঁজ নয়, মহাকাশের গহ্বর থেকে রেডিও বার্তা শোনার জন্য বিশ্বজুড়ে রেডিও টেলিস্কোপের এক জাল বিছিয়ে দেওয়া হয় এই প্রকল্পের আওতায়৷ অসীম ধৈর্য নিয়ে কিছু নিষ্ঠাবান মানুষ দশকের পর দশক ধরে কান পেতে রয়েছেন অন্য গ্রহের বুদ্ধিমান প্রাণীর পাঠানো সংকেতের জন্য৷ প্রথমে মহাকাশের নির্দিষ্ট একটি এলাকার দিকে মনোযোগ দিলেও পরে প্রকল্পের আওতা ক্রমশঃ বাড়ানো হতে থাকে৷ অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কান পেতেও অবশ্য কোনো সংকেত পাওয়া যায় নি৷ কিন্তু মহাকাশের বিশাল দূরত্ব অতিক্রম করে রেডিও সংকেত পৃথিবী পর্যন্ত পৌঁছতে যেখানে হাজার হাজার আলোকবর্ষ লেগে যেতে পারে, সেখানে ৫০ বছর কোনমতেই এমন প্রকল্পের জন্য যথেষ্ট নয় বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন৷
কল্পবিজ্ঞান কাহিনীর পাঠকরা এমন এক প্রকল্পের প্রতি আস্থা রেখে যাবে, এতে বিস্ময়ের কিছু নেই৷ কিন্তু অনিশ্চয়তায় ভরা এমন এক প্রকল্পের জন্য সরকারি অনুদান যোগাড় করা মোটেই সহজ কাজ নয়৷ সহৃদয় ধনী ব্যক্তিদের চাঁদার উপরেও নির্ভর করে আসছে এই প্রকল্প৷ মাইক্রোসফট'এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেন ২০০৪ সালে ১ কোটি ৩০ লক্ষ ডলার দান করেন৷ এর আগেও তিনি প্রকল্পের কাজে ১ কোটি ১০ লক্ষ ডলার দিয়েছিলেন৷
এবার ‘সেটি' ঘোর সংকটে পড়েছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য সরকার আপাতত এই প্রকল্পের জন্য অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে৷ ফলে রাজ্যের উত্তরে ‘সেটি'র ৪২টি টেলিস্কোপ বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ অর্থের বিকল্প উৎসের খোঁজ চলছে৷
প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল ফারূক