অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, উদ্যোগ এখনো কম
শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু কিছুটা পরিবর্তন এনেছে৷ নড়েচড়ে বসেছে ইউরোপ৷ শিশু আয়লানের মৃত্যুর জন্য দায়ী সন্দেহে দু’ জনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্কের পুলিশ৷ তবে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিরাপদ জীবনের আশ্বাস বা উদ্যোগ এখনো কম৷
জার্মানি এবং ফ্রান্সের চাপ
অভিবাসী গ্রহণে এতদিন অনীহাই প্রকাশ করেছে ব্রিটেন৷ কিছু পূর্ব ইউরোপীয় দেশও বলছে, মুসলিম অভিবাসীদের গ্রহণ করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়৷ এর ফলে সিংহভাগ চাপ পড়ছে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোর ওপর৷ বৃহস্পতিবার জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল এবং ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রঁসোয়া ওলঁদ আবার বলেছেন, ইইউ-র সব সদস্য দেশের এখন থেকে ‘কোটা’ অনুযায়ী শরণার্থী গ্রহণ শুরু করা উচিত৷
ইয়ুংকারের মৃদু ‘হুঙ্কার’
ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকারও অবশেষে ব্রিটেন, পোল্যান্ডসহ কিছু দেশের বিষয়ে মুখ খুলেছেন৷ শুক্রবার লুক্সেমবুর্গে ইইউ পররাষ্টমন্ত্রীরা শরণার্থী সংকট নিরসনের আশু করণীয় স্থির করার জন্য বৈঠকে বসছেন৷ তার আগে ইয়ুংকার জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহেই তিনি গ্রিস, হাঙ্গেরি এবং ইটালিতে চলে আসা ১ লাখ ২০ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশীকে নিয়ম অনুযায়ী ইইউভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভাগ করে দেবেন৷
ক্যামেরনের নতুন সুর
সিরীয় কিশোর আয়লান কুর্দি’র মর্মান্তিক মৃত্যুর পর অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিতে আপত্তি জানানো দেশগুলোর বিরুদ্ধে সমালোচনার তীব্রতা অনেক বেড়েছে৷ ব্রিটেনের সমালোচনাই হচ্ছে বেশি৷ তবে এতদিনে মাত্র ২১৬ জন সিরীয় শরণার্থী গ্রহণ করলেও, ডেভিড ক্যামেরন অবশেষে আশ্বাস দিয়েছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁর দেশ আরো বেশি শরণার্থী নিয়ে ‘মানবিক দায়িত্ব’ পালন করতে রাজি৷
আয়লান ‘হত্যায়’ দায়ী সন্দেহে তুরস্কে দুজন গ্রেপ্তার
উপকূলে শিশুর উপুড় হয়ে থাকা লাশ নিয়ে তোলপাড় এখনো চলছে৷ তিন বছর বয়সি আয়লান কুর্দি’র করুণ মৃত্যুতে তুরস্ক সরকারও নড়েচড়ে বসেছে৷ সংবাদ মাধ্যমে শুধু আয়লানের মৃত্যুর খবর নিয়ে তোলপাড় হলেও এখন একই ঘটনায় আরো মৃত্যুর খবরও বেরিয়ে আসছে৷ একই ঘটনায় ১২ জন সিরীয় মারা যায়৷ তুর্কি মানবপাচারকারীদের যে দলটি ওই সিরীয়দের ইউরোপে পাচার করার দায়িত্ব নিয়েছিল সেই দলের দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে তুরস্কের পুলিশ৷
আয়লানের পরিবারের দাবি, ক্যানাডার অস্বীকার
আয়লানের বড় ভাই আর মা-ও মারা গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷ শুধু তার বাবা আব্দুল্লাহ প্রাণে বেঁচেছেন৷ আব্দুল্লাহর আত্মীয়রা জানিয়েছেন, পরিবারটি ক্যানাডায় অভিবাসী হতে চেয়েছিল৷ ক্যানাডা সরকার অভিবাসনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করার কারণেই নাকি আব্দুল্লাহ সপরিবারে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন৷ ক্যানাডা সরকার অবশ্য আব্দুল্লাহর পরিবারের কোনো অভিবাসনের আবেদনপত্র প্রাপ্তির বিষয়টিই অস্বীকার করেছে৷
পাচারকারীদের কবলে পড়ছে মানুষ, দীর্ঘ হচ্ছে মিছিল
এদিকে সিরিয়ার পাশাপাশি পাকিস্তান, আফগানিস্তান এবং আফ্রিকার কিছু দেশ থেকেও এখন অনেক বেশি হারে মানুষ ইউরোপে আসার চেষ্টা করছেন৷ এই সুযোগ লুফে নিচ্ছে মাদকপাচারকারীরা৷ কয়েকদিন আগে অস্ট্রিয়ায় যে ট্রাকে আবদ্ধ অবস্থায় ৭১ জনের গলিত লাশ পাওয়া গিয়েছিল তাঁরা মাদকপাচারকারীদের মাধ্যমেই ভাগ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে মৃত্যু ডেকে এনেছেন বলে অস্ট্রীয় পুলিশের ধারণা৷ সবকিছুর পরও ইউরোপ অভিমুখে মানুষের মিছিল বড়ই হচ্ছে৷