1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবৈধ অভিবাসীদের জন্য ইউরোপে আরও কড়াকড়ি

১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১১

ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশেই অবৈধ অভিবাসীদের দেখা যায়৷ কখনো কখনো সরকার নিয়ম-কানুন শিথিল করে, তখন এদের অনেককেই বৈধ করে নেওয়া হয়৷ তবে বেশ কিছু দেশ এ ব্যাপারে বেশ কঠোর৷ তারা কোন অবস্থাতেই অবৈধ অভিবাসীদের থাকার অনুমতি দিচ্ছে

https://p.dw.com/p/10Hk4
ছবি: AP

নরওয়ের পরিস্থিতি

মদিনা সালামোভার জন্ম উত্তর ওসেটিয়ায়৷ মদিনার বয়স যখন ১৬ তখন তার পরিবার দেশ ছেড়ে চলে যায় নরওয়ে৷ মদিনার বাবা-মা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে আবেদন করেন নরওয়ে সরকারের কাছে৷ আবেদন পত্র খারিজ হয়৷ তখন পুরো পরিবার পালিয়ে বেড়াতে থাকে৷ মদিনা নাম পাল্টে ফেলে৷ এখন সবাই তাকে চেনে মারিয়া আমেলি হিসেবে৷ এই অবস্থাতেই মারিয়া একটি বই লিখেছে৷ বইয়ের নাম ‘ইল্লিগ্যালি নরওয়েজিয়ান'৷ আমেলি বললো, ‘‘আমার জন্ম ককেশিয় অঞ্চলে কিন্তু আমার জীবনের প্রায় অর্ধেকেরও বেশি আমি কাটিয়েছি পালিয়ে বেড়িয়ে৷ আমার জীবনের অনেক বড় একটি সময় আমি নরওয়েতে কাটিয়েছি৷ আমি নিজেকে একজন নরওয়েজিয় মন করি৷ আমি বিশ্বাস করি আমার স্থান, আমার জায়গা এখানেই৷''

মদিনা অথবা মারিয়া অনর্গল নরওয়েজিয় ভাষায় কথা বলতে পারে৷ সে নরওয়েতে পড়াশোনা করেছে৷ মাস্টার্স শেষ করেছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে৷ যে কোন অবৈধ অভিবাসীর সঙ্গে মারিয়ার পার্থক্য এখানেই৷ প্রায় আট বছর ধরে মারিয়া তার পরিবারের সঙ্গে পালিয়ে ছিল৷ কর্তৃপক্ষের কাছে কখনোই যেন ধরা না পড়ে সেদিকে তারা সচেষ্ট ছিল৷ মারিয়ার লেখা বইটি অনেক নরওয়েজিওকেও ভাবিয়ে তুলেছে৷ জানুয়ারি মাসের শেষে মারিয়া আমেলি অর্থাৎ মদিনা সালামোভাকে তার পরিবারসহ ফেরত পাঠানো হয়েছে রাশিয়ায়৷ রাজধানী অসলোয় মাদিনার আইনজীবী ব্রিনইউল্ফ রিসনেস জানান, ‘‘আমি যখন খবরটা শুনি আমার মনে হয়েছিল এটা সত্যি হতে পারেনা৷ এটা দুঃস্বপ্ন৷''

মানবাধিকার বনাম অভিবাসন নীতি

রিনসেস মন করেন, নরওয়ের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ মানবাধিকারের বিভিন্ন দিকে একেবারেই নজর দেয় না৷ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই দিকটি পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘মানবাধিকারের যে কোন দিক যে কোন মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য৷ সেটা শিশুর বেলায়ও কার্যকর৷ আর একটি শিশুকে তার বাবা-মায়ের কৃতকর্মের জন্য কোন অবস্থাতেই দায়ী করা যেতে পারে না৷ এছাড়া মদিনা যেভাবে নরওয়ের সমাজে নিজেকে একাত্ম করেছে তা এক কথায় অসাধারণ৷ সে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে, সে বিভিন্ন জায়গায় কাজের জন্য আবেদন করেছে এবং সে একটি বই লিখেছে৷ প্রতিপক্ষ আইনজীবী যুক্তি দেখিয়েছে এগুলো কোন বিষয়ই নয়৷ অবৈধ মানে অবৈধ৷ অথচ একটি মানুষের বিভিন্ন গুনাবলী দিয়েই যাচাই করা হয় সে কে, দেশকে এবং দশকে সে কী দিতে পারে, একটি সমাজ কীভাবে একজন মানুষের কাছ থেকে লাভবান হতে পারে৷ নরওয়ের অভিবাসী আইন অনেক বেশি কঠোর ছিল মদিনার ক্ষেত্রে৷''

Illegale Immigranten auf den Kanarischen Inseln
ছবি: AP

মানবিকতা ও জনসমর্থন

মারিয়া আমেলির কাহিনী নরওয়ের খুব সাধারণ মানুষকেও ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে৷ অনেকেই আদালতের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন৷ অসলোয় বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়েছে মাদিনার পক্ষে৷ সেই বিক্ষোভে এসেছিল প্রায় দুই হাজার মানুষ৷ বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডে তারা লিখেছিল ‘কেউই অবৈধ নয়', ‘কাগজ-পত্র বিহীন মানুষের জন্য অধিকার চাই'৷

সেই বিক্ষোভে যারা অংশগ্রহণ করেছিল তারা অনেকেই মনে করেন, মদিনা সালামোভার বই সবার চোখ খুলে দিয়েছে৷ অদৃশ্য অনেক কিছুই এখন চোখে পড়ছে৷ শরণার্থী থেকে শুরু করে অবৈধ অভিবাসীদের দিকে নজর দেওয়ার দাবি উঠেছে৷ স্যামসন ইথিওপিয়া থেকে এসেছেন নরওয়েতে৷ তিনি একজন শরণার্থী৷ তিনি বললেন, ‘‘আমি নিজে নরওয়েতে দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে আছি৷ কিন্তু আমার কোন অধিকার নেই৷ মদিনার বই আমাদের কথাই বলেছে৷ আমরা যারা পালিয়ে থাকি লুকিয়ে থাকি, আমাদের জীবন বলতে কিছু নেই৷''

সমালোচকদের মতে নরওয়ের সরকার চাইলেই মারিয়াকে বৈধ করতে পারতো৷ কারণ বৈধ হওয়ার যে সব শর্ত পূরণ করতে হয়ে তার প্রত্যকটিই মারিয়া আমেলি পূরণ করেছিল৷ মারিয়া চেষ্টা করবে রাশিয়া থেকে এবার বৈধ হয়ে আবারো নরওয়েতে আসার৷ দিন গুনছে মদিনা সালামোভা অর্থাৎ মারিয়া আমেলি৷

প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক