অপরাধক্লিষ্ট নাৎসি অতীতের মোকাবিলায় আবার জার্মানি
২৯ অক্টোবর ২০১০জার্মানির মত আর কোন দেশ অতীতের মোকাবিলায় এত বেশি তৎপর আর হতে পরেনি, এ কথাটা বিশেষজ্ঞরা মেনে নিতে দ্বিধা করেননা৷ তারই প্রমাণ পাওয়া গেল আবার নতুন করে বৃহস্পতিবার৷ বার্লিনের বিশ্ব সংস্কৃতি ভবনের বিশাল হল ঘরের শেষ আসনটিও খালি থাকেনি৷ বহু উৎসুক নাগরিকের সামনে উপস্থাপিত হল ৯০০ পৃষ্ঠার সমীক্ষামূলক রিপোর্ট৷ চার বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ একার্ট কনসে, নর্ব্যার্ট ফ্রাই, পেটার হাইয়েস ও মোশে সিমারমান তাঁদের সমীক্ষায় নাৎসি আমলে তখনকার জার্মান পররাষ্ট্র দপ্তরের ভূমিকার চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন৷ জার্মানির পূর্বাঞ্চলের ইয়েনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর নর্ব্যার্ট ফ্রাই ছোট্ট একটি বাক্যে সমীক্ষার ফল উল্লেখ করে বলেন, ‘‘তৃতীয় রাইশে পররাষ্ট্র দপ্তর ছিল তৃতীয় রাইশেরই পররাষ্ট্র দপ্তর৷''
অর্থাৎ হিটলরি অপশাসনে নাৎসিদের অপরাধের সঙ্গে পররাষ্ট্র দপ্তরও ছিল জড়িত৷ দীর্ঘকাল এই দপ্তর নিজেকে হিটলারের বিরুদ্ধে পরোক্ষ প্রতিরোধের এক ঘাঁটি বলে দেখতে সচেষ্ট ছিল৷ রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই দাবি পুরোপুরি ঠিক নয়৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নবীন ফেডারেল জার্মান প্রজাতন্ত্রে দপ্তরের বহু কূটনীতিককেই গ্রহণ করা হয়েছিল৷ বরং প্রতিরোধকারীদেরই আবার নতুন করে শক্ত মাটি পেতে অসুবিধা হয়৷ সমীক্ষার ফল অনুযায়ী, যুদ্ধের পর গ্রহণ করে নেয়া প্রতি পাঁচজন কূটনীতিকের মধ্যে একজনমাত্র নাৎসি আমলে হয়রানির শিকার হন৷ চল্লিশ শতাংশই ছিলেন প্রাক্তন নাৎসি৷
২০০৫ সালে তৎকালীন পরাষ্ট্রমন্ত্রী, সবুজ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতা ইয়শকা ফিশার ইতিহাসবিদদের এই কমিটি গঠন করান৷ নাৎসি আমলের অপরাধকর্মের সঙ্গে পররাষ্ট্র দপ্তর কতটা জড়িত ছিল এবং যুদ্ধের পর কূটনীতিকরা কীভাবে এই সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি দীর্ঘদিন এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন, তা খোলাসা করার দায়িত্ব পড়ে তাঁদের ওপর৷ সেই কাজটাই সুসম্পন্ন করেছেন তাঁরা সব রকমের নথিপত্র ঘেঁটে৷ রিপোর্ট উপস্থাপনের সময় উপস্থিত ছিলেন ফিশার নিজেও৷ তিনি বলেন, ‘‘ একথাটা আমাদের ভুললে চলবেনা যে, জার্মানি অসাধারণ এক গণতান্ত্রিক দেশ হয়ে উঠেছে৷ আর বিশেষ করে অতীতের সেই ভয়াবহ চাপের মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের দেশ বড় রকমের ভূমিকা রেখেছে৷ কমিটি এই পথে যাত্রা অব্যাহত রাখারই পথ প্রশস্ত করল৷''
বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী, উদারপন্থী দলের প্রধান গিডো ভেস্টারভেলে রিপোর্টের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে বলেন, ইতিহাসবিদদের এই রিপোর্ট নবীন কূটনীতিকদের জন্য অবশ্যপাঠ্য করা হবে৷ তাদের প্রশিক্ষণ পর্বের পাঠ্যসূচিতে সংশ্লিষ্ট তথ্যগুলোর অন্তর্ভুক্তি ঘটবে৷
প্রতিবেদন: বেটিনা মার্ক্স/আব্দুল্লাহ আল-ফারূক
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ