1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘অন্যরকম এক বিজয়ের দিন'

সমীর কুমার দে, ঢাকা১৬ ডিসেম্বর ২০১৪

বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে ৪৩ বছর আগে৷ পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালি যে লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়েছিল, তা আজও সগৌরবে মাথা তুলে আছে৷ কিন্তু আসলেই কি আমরা বিজয় পেয়েছি? সত্যিকারের বিজয় দেখেছি?

https://p.dw.com/p/1E5P6
Bangladesch Nationalfeiertag 2013
ছবি: DW/M. Mamun

‘‘হ্যাঁ, এখন দেখছি৷ যুদ্ধাপরাধীদের একের পর এক শাস্তি হচ্ছে, একজনের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর হয়েছে৷ এটাই তো আসল বিজয়, অন্যরকম এক বিজয়ের দিন৷'' মঙ্গলবার বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সাভার স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে গিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ-র ছাত্র রাজীব রুদ্র৷

রাজীবের মতে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার গতি খুবই ধীর৷ আসলে বাংলাদেশের মাটিতে যেদিন সব যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত হবে, সেদিনই হবে আসল বিজয় দিবস৷ সারা দেশের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে দণ্ড ঘোষিত যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত শাস্তি কার্যকরের জন্য৷

রাজীবের সঙ্গে আসা আরেক ছাত্র হাসান ফিরোজের মতে, ‘‘শুধু মুখ দিয়ে বললেই হবে না, দ্রুত শাস্তি নিশ্চিত করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করতে হবে৷''

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ১৩টি রায়ে ১৪ জন যুদ্ধাপরাধীর সাজা হয়েছে৷ এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল ১১ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও তিনজনকে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে৷ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণার পর কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে৷ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডের পূর্ণাঙ্গ রায় হলেও, আদেশের কপি প্রকাশের অপেক্ষা৷ এরপরই কার্যকর হবে এই রায়৷ এছাড়া সর্বোচ্চ আদালত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আজীবন কারাদণ্ড দিয়েছে৷ শিগগিরই ট্রাইব্যুনালে মুজাহিদের বিরুদ্ধে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের আপিল শুনানি শুরু হচ্ছে৷ অন্যগুলোও শুনানির অপেক্ষায়৷ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ৩ জনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা অপেক্ষমান রয়েছে৷ বিচার কাজ চলছে আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে৷ এছাড়া তদন্ত শেষে ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে আরো ১০-১২টি মামলা৷

Bangladesch Dhaka Gericht Kriegsverbrechen Delwar Hossain Sayeedi Protest gegen Urteil
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ত্বরান্বিত করেছে তরুণ প্রজন্মছবি: picture-alliance/AP/A.M. Ahad

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘আমরা শুরু থেকেই বলছি, বিচার প্রক্রিয়ার গতি বাড়াতে হবে৷'' স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সারা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যারা মানবতা বিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য-প্রমাণ জোগাড় করে বিচারের আওতায় আনাটা কতটা সহজ হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘‘এ সব অপরাধের প্রত্যক্ষদর্শীরা এখনও জীবিত আছেন, ফলে তথ্য-প্রমাণ তাঁদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে৷'' তিনি বলেন, ‘‘শহিদ পরিবারগুলো অবশ্যই সাক্ষ্য দেবে৷ তবে এক্ষেত্রে সরকারকে সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে৷''

মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে কেন্দ্রীয় ব্যক্তিদের বিচার কার্যক্রমের পর এবার জেলা-উপজেলা পর্যায়ে রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তাদেরও বিচারের আওতায় আনা হচ্ছে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জিয়াদ আল মালুম৷ তিনি বলেন, ‘‘শীর্ষ অপরাধীদের পর সারা দেশে বিস্তৃতভাবে যারা ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে, চার লক্ষ মা-বোনকে নির্যাতন করেছে, যারা ধর্মান্তরিত করায় জড়িত, তাদের বিচার কার্যক্রম চলবে৷''

মঙ্গলবার মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয়ের ৪৩তম বার্ষিকীতে বীর সন্তানদের স্মরণ করছে জাতি৷ যাঁদের রক্তের বিনিময়ে দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটেছিল৷ বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটেছিল বাংলাদেশ নামের নতুন এক রাষ্ট্রের৷ ভোরে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শেরে বাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে (পুরনো বিমানবন্দর) ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বিজয়ের এই দিনের কর্মসূচি শুরু হয়৷ সকাল সাড়ে ৬টার পর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে সেই মুক্তিসেনাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, যাঁরা প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল বাংলার স্বাধীনতার সূর্য৷

এরপর ফুল দেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা৷ বাঙালির গৌরব এই স্মৃতিসৌধের নকশাকার ভাস্কর সৈয়দ মাইনুল হোসেনকে মাত্র দেড় মাস আগেই হারিয়েছে দেশবাসী৷ ভিআইপিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর স্মৃতিসৌধ সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়৷ পতাকা আর ফুল হাতে জনতার ঢল নামে সৌধ প্রাঙ্গণে৷ মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সাধারণ মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে শহিদের স্মৃতির এই মিনার৷

স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়ার পর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জাসদের সভাপিত আ স ম আব্দুর রব বলেন, ‘‘যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এখন জাতির দাবি৷ এ নিয়ে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই৷ ৩০ লাখ শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে পতাকা পেলাম, স্বাধীনতা পেলাম, তার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা থাকতে হবে৷ শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সবার মধ্যেই একটা শোকাভিভূত ভাব থাকবে৷ চোখেমুখে, চলায়-বলায়, শরীরে যেটা থাকা দরকার৷ কিন্তু এখানে লাঠিসোটা, ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে যে প্রতিযোগিতা দেখা যাচ্ছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক৷''

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেন, ‘‘সরকারকে বলবো, যুদ্ধাপরাধীদের রায় দ্রুত কার্যকর করুন৷ জাতিকে কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিন৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য