1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে মুক্তিযোদ্ধা কুলসুমের

১২ মার্চ ২০১১

দিনাজপুরের বীর নারী মুক্তিযোদ্ধা উম্মে কুলসুম৷ জীর্ণ শীর্ণ দেহ নিয়ে আছেন অন্যের বাড়িতে আশ্রিতা হয়ে৷ কিন্তু তাঁকে দেখার কেউ নেই৷ অর্ধাহার-অনাহার তাঁর জীবনের নিত্য সঙ্গী৷

https://p.dw.com/p/10Xxa
Umme, Kulsum, Dinajpur, Bangladesh, Panchagarh, Freedom, Fighter, War, Liberation, 1971, Independence, নারী, মুক্তিযোদ্ধা, উম্মে, কুলসুম, বাংলাদেশ, যুদ্ধ, ১৯৭১,
নারী মুক্তিযোদ্ধা উম্মে কুলসুমছবি: Motiur Rahman

পঞ্চগড়ের বোদায় জন্ম উম্মে কুলসুমের৷ পিতা সিরাজুল ইসলাম এবং মা শমিরন নেছা৷ ছোট থেকে দিনাজপুর শহরের চারুবাবুর মোড়ে চাচা মরহুম ফজলুল ওয়াহেদের বাড়িতে থাকতেন কুলসুম৷ মুক্তিযুদ্ধের আগে এ বাড়িতে থেকেই তিনি সাদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন৷

মুক্তিযুদ্ধ যখন শুরু হয়, তখন ২৭/২৮ বছরের তরুণী কুলসুম৷ ছোট বোন আনোয়ারা বেগম অসুস্থ হলে তাঁকে দেখা শোনার জন্য ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে গোলকুঠিতে বোনের বাড়ি যান৷ যুদ্ধ ভয়াবহ আকার ধারণ করলে তিনি বোনের সাথে হামজাপুর-খানপুর হয়ে ভারতের গঙ্গারামপুর যান৷ গঙ্গারামপুরে তিন মাস থাকার পর জুন মাসে গিয়ে ঢলদিঘী এলাকায় ওঠেন৷

ঢলদিঘীতে থাকার সময় তেভাগা আন্দোলনের নেতা হাজি মোহাম্মদ দানেশের সাথে তাঁর দেখা হয়৷ হাজি দানেশ তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে বললে তিনি রাজি হন৷ কারণ আগে থেকেই মুক্তিযুদ্ধে শরিক হওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁর৷ প্রথম পর্যায়ে তিনি বালুরঘাট হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবা শুশ্রূষা করতেন৷ প্রায় তিন মাস আহতদের সেবার পর তাঁকে অস্ত্র বহনের কাজ দেওয়া হয়৷ বালুরঘাট হাসপাতাল থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে পৌঁছে দিতেন গ্রেনেড বা বিস্ফোরক৷ হাঁড়ির মধ্যে বোমা বা গ্রেনেড রেখে হাঁড়ির মুখ কলাপাতা কিংবা শালপাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হতো৷ হাঁড়ির গলা দড়ি দিয়ে বাঁধা হতো ঝুলিয়ে নেয়ার সুবিধার জন্য৷ ঠিক যেভাবে মিষ্টির হাঁড়ি নিয়ে যায়, সেভাবে গ্রেনেড ভর্তি হাঁড়ি নিয়ে যেতেন কুলসুম৷

Umme Kulsum, Freiheitskämpferin, Dinajpur, Bangladesch
নারী মুক্তিযোদ্ধা উম্মে কুলসুমছবি: Motiur Rahman

কুলসুম প্রায় আড়াই মাস অস্ত্র বাহকের কাজ করেন৷ এই অস্ত্র বহনের সময় নানা ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন৷ একদিনের ঘটনা তুলে ধরেন ডয়চে ভেলের কাছে৷ তিনি বালুরঘাট হাসপাতাল থেকে অস্ত্র নিয়ে পায়ে চপ্পল, চোখে চশমা এবং সাধারণ কাপড় পরে প্রায় আড়াই-তিন মাইল দূরে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে অস্ত্রের হাঁড়ি তুলে দিতেন৷ সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন একাজ করতেন৷ এমনভাবে তিনি হাঁড়ি নিয়ে যেতেন যেন কেউ তাঁকে সন্দেহ করতে না পারে৷ মিষ্টি নিয়ে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছেন এমন একটা ভাব নিয়ে তিনি অস্ত্র বহনের কাজ করতেন৷ হাঁড়িতে কী অস্ত্র আছে তা বলে দেওয়া হতো তাঁকে৷ হাঁড়ি পড়ে গেলে বিস্ফোরণ হতে পারে, তাতে তাঁর মৃত্যুও হতে পারে এমন সতর্কবাণী তাঁকে হাঁড়ি দেওয়ার সময়ই বলে দেওয়া হতো৷ কিন্তু মৃত্যু ঝুঁকি সত্ত্বেও সুচারুভাবে তিনি তাঁর দায়িত্ব পালন করতেন৷

কুলসুম জানান, যুদ্ধ শেষে তাঁকে ভারত থেকে একটি সনদপত্র দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক আওয়ামী লীগ নেতা এম আব্দুর রহিমকে দেখিয়েছিলেন৷ সনদপত্রটি আদৌ কোন কাজে লাগবে কিনা সে বিষয়ে তিনি সচেতনও ছিলেন না৷ বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম তৎপরতা শুরু হলে তিনি ভয় পেয়ে সনদপত্রটি পুড়িয়ে ফেলেন৷

অবিবাহিত কুলসুমের নিকটাত্মীয় বলতে কেউ নেই৷ খেয়ে না খেয়ে দিন যাচ্ছে এই বীর নারী মুক্তিযোদ্ধার৷ দিনাজপুর মহিলা পরিষদ একবার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁকে সংবর্ধনা দিয়েছিল৷ তখন তাঁকে দেয়া হয়েছিল একটি চাদর৷ ‘মুক্তিযুদ্ধে বৃহত্তর দিনাজপুর' বইয়ে কুলসুমের অবদানের কথা তুলে ধরা হয়েছে ২০০৪ সালে৷ এই সামান্য প্রাপ্তি ছাড়া তাঁর ভাগ্যে আর কিছুই জোটেনি৷ তিনি মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে অস্ত্র পৌঁছাতেন দেশ স্বাধীন হবে বলে৷ কিন্তু স্বাধীন দেশে এখন তাঁর অন্নবস্ত্রের নিশ্চয়তা নেই৷ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নেই তাঁর নাম৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন